
ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন স্থাপনায় ইরান ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরানের রেভুলেশনারি গার্ড। এসময় ইরাকের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কুর্দিস্তানে ইসরায়েলের গুপ্তচর সদরদফতরে হামলা চালানো হয়। এই হামলায় কুর্দি’র ব্যবসায়ী পেশরাও দিজায়িসহ অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গুরুতর আহত উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার খবরে এ তথ্য জানানো হয়। এই এলিট ফোর্সটি আরও জানায়, তারা সিরিয়াতে আইএস’র বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে।
এই হামলা এমন এক সময় করা হলো যখন মধ্যপ্রাচ্যে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এছাড়া ইরানের এই বাহিনীটি লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনেও ছড়িয়ে পড়েছে।
ইরানের রেভুলেশনারি গার্ডের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, জায়োনিস্টদের সাম্প্রতিক সময়ের হামলার প্রতিবাদ এবং আমাদের গার্ডের কমান্ডোকে হত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলের গুপ্তচর বাহিনী মোসাদের সদরদফতরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এতে তাদের কার্যালয় ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত মাসে সিরিয়াতে হামলা চালিয়ে ইরানের রেভুলেশনারি গার্ডের তিন কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। যার মধ্যে একজন সিনিয়র কমান্ডারও ছিল। তিনি ইরানের সামরিক বাহিনীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
ইরাকের কুর্দিস্তান নিরাপত্তা পরিষদ জানিয়েছে, হামলায় চারজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছে।
কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি জানিয়েছে, নিহত বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পেশরাউ দিজাই ছিলেন।
আইআরজিসি সিরিয়ার লক্ষ্যবস্তুতেও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘কমান্ডারদের একত্রিত করার স্থান এবং সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী অভিযানের সাথে সম্পর্কিত প্রধান গ্রুপ বিশেষ করে ইসলামিক স্টেট গ্রুপ’। আইআরজিসি’র নিউজ এজেন্সি এ কথা জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সাম্প্রতিক হামলায় ইরানের দক্ষিণের শহর কেরমান এবং রাস্কে ইরানিদের হত্যার জবাবে সিরিয়ায় এই হামলা চালানো হয়।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস ওয়ার মনিটর জানিয়েছে, আলেপ্পো এবং এর গ্রামাঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যেখানে ‘ভূমধ্যসাগরের দিক থেকে আসা কমপক্ষে ৪টি ক্ষেপণাস্ত্র’ আছড়ে পড়েছে।
গত ৩ জানুয়ারি কেরমানে আইআরজিসি জেনারেল কাসেম সোলেইমানির সমাধির কাছে জড়ো হওয়া জনতার ভিড়ে সন্ত্রাসীরা আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে প্রায় ৯০ জনকে হত্যা করে। পরে হামলার দায় স্বীকার করে আইএস।
ডিসেম্বরে রাস্কে একটি পুলিশ স্টেশনে জিহাদি গোষ্ঠী জইশ আল-আদল (আর্মি অফ জাস্টিস) গ্রুপের হামলায় কমপক্ষে ১১ ইরানি পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। জিহাদি গোষ্ঠী জইশ আল-আদল ২০১২ সালে গঠিত হয়েছিল এবং ইরান এটিকে ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠী হিসাবে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। গ্রুপটি হামলার দায় স্বীকার করেছে।
আইআরজিসি আরও বলেছে, তারা ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলে কথিত ইসরায়েলি ‘গুপ্তচর সদর দফতর’ আক্রমণ করেছে। ইরানের ইরনা বার্তা সংস্থা এ কথা জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ সদর দফতরটি ‘গুপ্তচরবৃত্তি কার্যক্রম বিকাশ এবং এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পরিকল্পনার কেন্দ্র হিসাবে কাজ করেছিল’।
আইআরজিসি বলেছে, ইরানের উপর সাম্প্রতিক হামলা এবং ইরান-সংযুক্ত গোষ্ঠীগুলোর ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই হামলা চালানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। হামলাটিকে ‘বেপরোয়া’ বলেও অভিহিত করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আজ ইরবিলে ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা করে এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানায়। আমরা ইরানের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিরোধিতা করি, যা ইরাকের স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটিতে মার্কিন কোনো স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, যুক্তরাষ্ট্রের কেউ হতাহত হয়নি বলেও নিশ্চিত করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিস্ফোরণের শব্দটি ৪০ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা গেছে। ওই এলাকাটির কাছেই রয়েছে মার্কিন কনস্যুলেট। আবাসিক এলাকাও আছে সেখানে।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]