পুতিনের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করতে মস্কো যাচ্ছে কিম, দাবি যুক্তরাষ্ট্রের
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:০১
পুতিনের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করতে মস্কো যাচ্ছে কিম, দাবি যুক্তরাষ্ট্রের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন চলতি মাসে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে রাশিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এক মার্কিন কর্মকর্তা সিবিএসকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের সমর্থনে মস্কোকে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র সরবরাহের সম্ভাবনা নিয়ে দুই নেতা আলোচনা করবেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে এই বৈঠক কোথায় হবে সেটা নিয়ে নিশ্চিত কোনও তথ্য জানা যায়নি। খবর বিবিসির।


এই খবর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যম ফলাও করে প্রচার করলেও কোনও প্রতিবেদনেই তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর কোরিয়া বা রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, কিম জং উন সম্ভবত সাঁজোয়া ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারেন। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র সমঝোতা ‌এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তথ্য পেয়েছেন তারা।


এরপরই রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠকের বিষয়টি সামনে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সেরগেই শোইগু সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া সফরের সময় পিয়ংইয়ংকে রাশিয়ার কাছে গোলাবারুদ বিক্রি করার বিষয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিলেন।


সভায় প্রদর্শন করা অস্ত্রের মধ্যে ‘হাসং’ নামের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) অন্তর্ভুক্ত ছিল। কোভিড মহামারির পর সে সময়ই প্রথমবারের মতো বিদেশি অতিথিদের জন্য নিজ দেশের দ্বার উন্মুক্ত করেন কিম জং উন।


রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং কিম জং উন তখন থেকেই তাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে চিঠিপত্র আদান-প্রদান করছেন। জন কিরবি বলেন, আমরা উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়ার সাথে অস্ত্র আলোচনা বন্ধ করার এবং পিয়ংইয়ং রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ বা বিক্রি না করার ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।


উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করলে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন। নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, কিম জং উন এবং পুতিনের মধ্যে বৈঠকটি রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে ভ্লাদিভোস্টক শহরে হতে পারে।


নিউইয়র্ক টাইমসের কূটনৈতিক সংবাদদাতা এডওয়ার্ড ওং বিবিসি নিউজ চ্যানেলকে জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল গত মাসের শেষের দিকে ভ্লাদিভোস্টক এবং মস্কোতে ভ্রমণ করেছে।


ওই প্রতিনিধি দলের মধ্যে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ছিলেন যারা উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতার ভ্রমণ ও অন্যান্য প্রটোকলের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে। এই বিষয়টি কিম জং উনের ভ্লাদিভোস্টক শহরে সফরের বিষয়ে শক্তিশালী ইঙ্গিত দেয়।


তিনি আরও বলেন, উত্তর কোরিয়া তাদের কৃত্রিম উপগ্রহ এবং পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন কর্মসূচির জন্য মস্কোর কাছ থেকে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা চাইছে। এছাড়াও উত্তর কোরিয়া বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি। দেশটি প্রায়ই ব্যাপক খাদ্যাভাবের মধ্য দিয়ে যায় এবং তারা রাশিয়ার কাছ থেকে খাদ্য সহায়তাও চাইছে।


উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে এর আগেও রাশিয়াকে ইউক্রেনের যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছিল। তবে সেটি অস্বীকার করেছে পিয়ংইয়ং এবং মস্কো।


২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে উত্তর কোরিয়ায় যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জন এভারার্ড। তিনি বিবিসিকে বলেন, সম্ভাব্য সফরের বিষয়ে এতো প্রচার প্রচারণা হওয়া একটি বিষয় ইঙ্গিত করে যে, এখন এই সফর হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।


কিম জং উন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে খুব উদ্বিগ্ন। তিনি তার গতিবিধি গোপন রাখার বিষয়ে বেশ সচেষ্ট। যদি এটা জানাজানি হয়ে যায় যে, তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে ভ্লাদিভোস্টকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাহলে তিনি সম্ভবত পুরো পরিকল্পনাই বাতিল করে দেবেন।


জন এভারার্ড বলেন, পিয়ংইয়ং জানে যে মস্কো যুদ্ধাস্ত্রের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার কাছে যে দাম চাইবে তা পাবে। এই দাম চোখে ধাঁ ধাঁ লাগিয়ে দিতে পারে। উত্তর কোরিয়ার কাছে অস্ত্রের মজুদ থাকলেও তারা খুবই দারিদ্র্যপীড়িত অবস্থায় আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।


২০১৯ সালে দুই নেতার শেষবার বৈঠক হয়েছিল যখন কিম ট্রেনে করে ভ্লাদিভোস্টকে এসেছিলেন। কর্মকর্তারা তাকে তাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী রুটি ও লবণ দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিল। বৈঠকের পর পুতিন বলেন, কিম তার পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসতে চাইলে তাকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।


এই বৈঠকের অন্তত কয়েক মাস আগে ভিয়েতনামে কিম এবং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে একটি শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু সে বৈঠকে তখন তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com