শিরোনাম
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে লন্ডভন্ড কলকাতা-সহ দুই ২৪ পরগনা, নিহত ৩
প্রকাশ : ২০ মে ২০২০, ২১:০৫
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে লন্ডভন্ড কলকাতা-সহ দুই ২৪ পরগনা, নিহত ৩
বিাবর্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভয়াল গতিতে সুন্দরবনেই আছড়ে পড়ে আম্পান। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়ে বলে জানিয়েছে দিল্লির আবহাওয়া বিভাগ। সেই সময় ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার ছিল।


সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে কলকাতায় সেই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার। এর জেরে লন্ডভন্ড পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কলকাতা-সহ দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে। হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের অবস্থাও ভয়াবহ। হাজার হাজার কাঁচাবাড়ি এবং গাছপালা ভাঙার খবর আসছে এই সব জেলা থেকে। তবে বাস্তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এর অনেক গুণ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।


বুধবার দুপুর আড়াইটায় ঘূর্ণিঝড়টির স্থলভূমিতে ঢুকে পড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। দিল্লির আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়ে আম্পান।


কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডিরেক্টর মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র অর্থাৎ চোখ (আই) বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ অর্ধেকটা ঢুকে পড়ে স্থলভাগে। সাড়ে ছয়টার মধ্যে পুরো ‘চোখ’ই সুন্দরবন এলাকায় ঢুকে পড়েছে।


আম্পানের প্রভাবে ইতিমধ্যেই দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক জায়গা থেকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন জায়গায় ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ার পাশাপাশি উড়ে গিয়েছে চাল। ভেঙে পড়েছে গাছপালা। উপকূল এলাকায় সমুদ্রে বেড়েছে জলোচ্ছ্বাস। আম্পানের দাপট বিকেলের পর থেকে আরো বাড়ছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।


সকাল থেকেই ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ের দাপটও বাড়তে থাকে। দিঘায় সকাল থেকেই সমুদ্র উত্তাল। প্রবল জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়। গাছপালা ভেঙে পড়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি জায়গায় কাঁচাবাড়ি ভেঙে যায়। সমুদ্রবাঁধও কিছু জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। দিঘার পাশাপাশি তাজপুর, মন্দারমণি, রামনগর, খেজুরিতেও আম্পানের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি শুরু হয়। উপকূলীয় অনেক জায়গাতেই বাঁধ ভেঙে সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়ে। এগরায় কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়ে। সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। কাঁথি এবং মহিষাদলের বিভিন্ন জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ে।


পূর্ব মেদিনীপুরের ছত্রধরা গ্রামের শ্যামল জানা বলেন, ‘বাড়ির আশপাশে বেশ কয়েকটি বড় বড় গাছ ভেঙে গেছে।বেশ কয়েকটি গাছ উপড়ে পড়েছে। বাড়ির একটা অংশে টিনের চাল ঝড়ে উড়ে গেছে। জীবনে এমন ঝড় দেখিনি।’ একই অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন কাঁথির বোধিসত্ত্বজানা। তিনি বলেন, ‘বিকেলে ঝড়ের দাপটে আমার পাকা বাড়ির একাধিক জানলার কাচ ভেঙে পড়ে। গোটা বাড়িতে পানি ঢুকে একাকার কাণ্ড। চারদিকে বৃষ্টি এতটাই পড়ছে যে, ধোঁয়ার মতো হয়ে গেছে সব। সেই সঙ্গে প্রবল সোঁ সোঁ আওয়াজের বাতাসে ঘুড়ির মতো উড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বাড়ির টিনের চাল। ভেঙে পড়ছে গাছ। বাড়ির ছাদে থাকা আমাদের কেবল টিভির অ্যান্টেনাটা উড়ে গেল। অবস্থা খুব খারাপ।’


দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও সকাল থেকে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ, নামখানা, কাকদ্বীপ—সর্বত্র ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ছিল বৃষ্টি। বেলা বাড়তেই তার দাপট বাড়তে থাকে। ঝড়ের দাপটে ঘড়বাড়ি ভাঙার পাশাপাশি গাছপালা উপড়ে যায়। ভেঙে যায় জেটিও। নামখানার নারায়ণপুরে একটি বাড়ির উপর গাছ ভেঙে পড়ে। ঘটনায় কেউ হতাহত হয়েছেন কি না তা এখনও জানা যায়নি। ফ্রেজারগঞ্জে একাধিক বাড়ির চাল উড়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে প্রচুর গাছপালা। বিকেলের পর থেকে ঝড়ের দাপট বাড়ছে বলে দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম জানা।


পেশায় মৎস্যজীবী গৌতমবাবু বলেন, ‘সকাল থেকে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া ছিল। দুপুরের পর থেকে তার দাপট আরো বাড়তে থাকে। তার আগেই আমার বাড়ি অ্যাসবেস্টসের চাল উড়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে মনে হচ্ছিল, আমাদেরকেই উড়িয়ে নিয়ে যাবে। এলাকা থেকে একের পর এক পরিচিত জন ফোন করছেন। এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে বলেই শুনছি। সকলেই ভয়ে রয়েছি।’


উত্তর ২৪ পরগনা থেকেও আম্পানের প্রভাবের খবর আসতে শুরু করেছে। হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি হাসনাবাদ, বসিরহাট, বারাসত, বনগাঁ— সকাল থেকেই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ছিল। দুপুরের পর থেকে সেই দুর্যোগ আরো বাড়তে থাকে। ঝড়ের দাপটে অনেক জায়গাতেই গাছপালা ভেঙে পড়ে। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়েছে অনেক জায়গায়। বসিরহাটের বাসিন্দা তাপস ঘোষ বলেন, ‘ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে। এ রকম ঝড় কখনও দেখিনি। চোখের সামনে পর পর গাছপালা ভেঙে যাচ্ছে, উপড়ে যাচ্ছে। কোথায় গিয়ে শেষ হবে, বুঝতে পারছি না।’ সূত্র- আনন্দবাজার


বিবার্তা/জাহিদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com