ডাব একটি সুস্বাদু ফল। ডাবের পানির উপকারিতা তো রয়েছে কিন্তু তুলনামুলক অপকারিতা নাই বললে চলে।ডাব বা নারিকেল বাংলাদেশের অন্যতম একটি অর্থকরী ফসল। উপকারিতা দিক থেকে ডাবের পানি অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর।
প্রতি ১০০ গ্রাম নারকেলে আছে ৩৫৪ ক্যালরী, ৩৩ গ্রাম ফ্যাট, ২০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৩৫৬ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ৩.৩ গ্রাম প্রোটিন আছে। এছাড়াও ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি-৬ ও বি-১২ আছে।
একটি সাধারণ কচি ডাবে আকারভেদে ২ শ’ থেকে ১ হাজার মিলিলিটার পানি থাকতে পারে। কেননা ডাবের ৯৫ শতাংশই পানি। আর সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও অন্যান্য লবণের পরিমাপ স্থানভেদে একেক রকম। তবে সাধারণভাবে এক লিটার ডাবের পানিতে পটাশিয়াম আছে ৩৫ থেকে ৮২ মিলিমোল, সোডিয়াম ০.৭ থেকে ০.৯ মিলিমোল ও শর্করা ১.২ থেকে ২.৮ মিলিমোল। আর এক লিটার স্যালাইনে পটাশিয়ামের পরিমাণ ২০ মিলিমোল, সোডিয়াম ৭৫ মিলিমোল ও শর্করা ৭৫ মিলিমোল।
ডাবের পানির উপকারিতা
গবেষণায় দেখা গেছে যে, পলিনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় যেখানে প্রধান খাবার হলো নারিকেল সেখানেকার মানুষের কোলেস্টেরল বা হার্টের সমস্যা অনেক কম। এর কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে নারিকেলে যে ফ্যাটি এসিডের চেইন গুলো আছে সেগুলো কোলেস্টেরল বাড়ায় না বরং আথেরোসক্লেরোসিসের ঝুঁকি কমিয়ে হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে। এমনকি কিছু কিছু নারিকেলে লরিক এসিড পাওয়া গেছে যা মায়ের দুধে থাকে।
ডাবের পানিতে খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতিও উচ্চমাত্রায়। এসব খনিজ লবণ দাঁতের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। দাঁতের মাড়িকে করে মজবুত। অনেকের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। মাড়ি কালচে লাল হয়ে যায়। হাসি বা কথা বলার সময় তা দেখা যায়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেবে খনিজ লবণ। পাশাপাশি হাড় মজবুত থাকলে হাঁটাচলাও হয় আত্মবিশ্বাসী ধরনের।
ডাবের পানি প্রাকৃতিক ভাবেই স্যালাইন ওয়াটারের কাজ করে। সমুদ্র উপকূলে বা রোদে যারা কাজ করেন তারা দিনে দু’-তিনটি ডাবও খেতে পারেন।
ডাবের পানি নিয়মিত পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। ডাবের পানি শরীরে পানিশূন্যতা দূর করে দেহে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে।
ডাবের পানিতে উপকারী উৎসেচক থাকায় তা হজম অত্যন্ত সাহায্য করে। অনেকেরই ভারী কিছু খাওয়ার পর ডাবের পানি উপকারি। ইউরিন ইনফেকশন দূর করে এবং কিডনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ডাবের পানি শরীরে পানির ভারসাম্য রাখে। তাই ক্ষতিকর খাবারের বদলে ডায়েটে রাখুন ডাবের পানি। ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, সোডিয়াম রয়েছে। তাই শরীরে এই সব খনিজের অভাব রুখে দিতে পারে ডাবের পানি।
ডাবের পানির মধ্যে রয়েছে মূত্রবর্ধক উপাদান। এটি ইউরিনারি ট্র্যাক্ট পরিষ্কারে সাহায্য করে। ডাবের পানি রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন বাড়ায়। ডাবের পানি ত্বকের তৈলাক্ততা, ব্রণ এবং রোদে পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে।
ব্যায়াম করার পর এক গ্লাস ডাব পানি শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
ডাবের পানি শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে না দিয়ে তারুণ্য ধরে রাখে। দাঁতের মাড়ির রোগ এবং ঠান্ডা লাগা থেকে প্রতিরোধ করে এই যাদুকরী পানীয়।
প্রতিদিন এক কাপ ডাবের পানি পান করলে ত্বককে আর্দ্র থাকে। এটি ব্রণের সমস্যা কমায়। ক্লান্তি দূর করে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হজম ক্ষমতা বাড়ায় ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। ডাবের পানি পানে বুকের জ্বালাপোড়া বন্ধ হয়।
ডাবের পানির মধ্যে রয়েছে আঁশ। এটি হজমে বেশ সাহায্য করে। নিয়মিত
নারকেলের পানি পান করলে গ্যাসট্রিকের সমস্যা কমায়। নারকেলের পানি শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ইউরিনারি ট্র্যাক্টে সংক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করে।
ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীদের ঘনঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হলে দেহে প্রচুর পানি ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি দেখা যায়। ডাবের পানি এই ঘাটতি অনেকাংশেই পূরণ করতে পারে। নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং কিডনি সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ হয়৷ আয়রনও রয়েছে ডাবের পানিতে যথেষ্ট পরিমাণে।
রক্ত তৈরি করার জন্য আয়রন হলো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত তৈরি হলে প্রতিটি অঙ্গ হবে বেশি শক্তিশালী, ফলে কর্মশক্তিও বাড়বে। দেহে আয়রনের পরিমাণ ঠিক থাকলে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও মসৃণ।
এই গরমে ছোট-বড় সবারই দেহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এতে ত্বকে ফুটে ওঠে লালচে কালো ভাব। ডাবের পানি দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমিয়ে শরীরকে রাখে ঠাণ্ডা। তারুণ্য ধরে রাখতে এর অবদান অপরিহার্য।
ডাবের পানি যেকোনো কোমল পানীয় থেকে অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ। কারণ, এটি সৌন্দর্যচর্চার প্রাকৃতিক মাধ্যম ও চর্বিবিহীন পানীয়। ডাবের পানি মিষ্টি হওয়া সত্ত্বেও ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য উপকারী।
প্রস্রাবের বিভিন্ন সমস্যায় ডাবের পানি পানে উপকার পাওয়া যায়। মুখে জলবসনন্তের দাগসহ বিভিন্ন ছোট ছোট দাগের জন্য সকাল বেলা ডাবের পানি দিলে দাগ মুছে এবং মুখের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বাড়ে। গ্লুকোজ স্যালাইন হিসেবেও ডাবের পানি ব্যবহৃত হয়। ডাবের পানিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পুষ্টি না থাকলেও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
হঠাত্ রক্তচাপ বা রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে বা ডিহাইড্রেশন হয়ে শরীর খারাপ লাগলে অত্যন্ত উপকারী ডাবের পানি।
ডাবের ভেতরের সুমিষ্ট পানীয় যুগ যুগ ধরে সবচেয়ে উত্তম ও পুষ্টিগুণে ভরপুর প্রাকৃতিক পানীয় হিসেবে মানুষের কাছে স্থান পেয়ে আসছে। অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতায় পূর্ণ মানুষের প্রতি স্রষ্টার দেয়া এই দারুণ উপহার। কৃত্রিম কোমল পানীয়ের তুলনায় এ যেন এক জাদুর পানি!
নিয়মিত ডাবের পানি পান করে সবারই তাই এর বিভিন্ন উপকারিতা লাভ করা উচিত। তবে কিডনির জন্য ডাবের পানি আশীর্বাদ হলেও উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম থাকায় কিডনি রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই যাদের কিডনিতে পাথর আছে বা ডায়ালাইসিস চলছে এমন রোগীদের ডাবের পানি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]