‘মেয়েটা আমাদের একটু সময়ও দিল না’
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৩, ১৮:১৯
‘মেয়েটা আমাদের একটু সময়ও দিল না’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রাম নগরীর সেন্ট স্কলাস্টিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী শ্রাবণী সরকার (১১)। বাবা বিশ্বজিৎ সরকার সিইপিজেডের একটি কারখানায় কর্মরত। তাদের বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলায়।


ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিন দিনের মাথায় মারা যায় মেয়েটি। তার এই অকালমৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবার।


শ্রাবণী সরকারের বাবা বিশ্বজিৎ সরকারের আর্তি, সন্ধ্যার পর থেকে মেয়ের শরীরে হঠাৎ কাঁপুনি শুরু হয়। সে বলল, তোমরা লাইট নিভিয়ে দাও, আমি একটু ঘুমাব। তখন আমার সন্দেহ হয়, দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিই। দেখি, তার শরীর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে আসছে। কিছুক্ষণ পর কথা বলা একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার বলল, আর নেই। মেয়েটা আমাদের একটু সময়ও দিল না।


বিশ্বজিৎ সরকার জানান, তিন দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত থাকার পর গত রবিবার (৩ জুলাই) চিকিৎসকের পরামর্শে শ্রাবণী ও তার ভাইয়ের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় তাদের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। শ্রাবণীর রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ এক লাখ ১০ হাজার ও সদীপের এক লাখ ৬০ হাজার। চিকিৎসকের পরামর্শে তাদের বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।


তিনি বলেন, প্লাটিলেটের পরিমাণ যাতে বাড়ে সেজন্য ডাক্তারের পরামর্শে পেঁপেসহ বিভিন্ন ফলের জুস দেয়া হচ্ছিল। সঙ্গে নাপা এক্সটেন্ড খাওয়ান হচ্ছিল। গতকাল (মঙ্গলবার) সকাল থেকে শ্রাবণীর জ্বর কমে আসে। আজ (বুধবার) নিয়মিত ব্লাড টেস্টের কথা ছিল। কিন্তু গতকাল বিকেলের দিকে দেখি তার পেটটা ফুলে গেছে। রাত ৮টার দিকে যখন কাঁপুনি চলে এল, তখন মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার দেখে দ্রুত এনআইসিইউতে নিয়ে যেতে বলল। কিন্তু ততক্ষণে মেয়ে আর নেই।


কান্নায় ভেঙে পড়ে বিশ্বজিৎ বলেন, মেয়েটা আমাদের আদরের ধন ছিল। বুকের ধনটা আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আমার ঘরটা অন্ধকার হয়ে গেল। ওর মা বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছে। তাকে কী জবাব দেব, আমি জানি না। আমার ছেলেটাকেও কীভাবে বাঁচাব আমি জানি না।


চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী জানিয়েছেন, মেডিকেল সেন্টার থেকে মঙ্গলবার রাতে পাঠানো প্রতিবেদনে শ্রাবণী সরকারের মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ আছে। এ হিসেবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরে মোট ১২ জনের মৃত্যু হলো, যার মধ্যে শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩ জন, জুন মাসে ৬ জন এবং জুলাই মাসে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।


এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৮ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ৬৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার তথ্য আছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে।


চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ৭৭ জনের। পরের তিন মাস অর্থাৎ, ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং এপ্রিল মাসে শনাক্তের হার কমে আসে। ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন, মার্চে ১২ জন এবং এপ্রিলে ১৮ জন শনাক্তের পর মে মাসে এসে আবার উর্ধ্বমুখী হয় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার। মে মাসে আক্রান্ত হয় ৫৩ জন। জুন মাসে ২৮২ জন এবং জুলাই মাসের পাঁচদিনে ১৯৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com