‘২০৫০ সালে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠবে’
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৩, ১৬:৪০
‘২০৫০ সালে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠবে’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রি শিল্পে ১৯ ধরণের এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। শতকরা ৫৫ শতাংশ মুরগীর মাংস অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত। এর অপব্যবহার রোধ করতে না পারলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠবে, যে কারণে ঠিকমতো ওষুধ কাজ করবে না। ফলে করোনার চাইতে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।


১১ জুন, রবিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা জানানো হয়।


বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সাব কমিটির ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে অ্যান্টিবায়োটিকের উপর মোট তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এসব প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউর মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহেদা আনোয়ার, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুল হাসান, ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জহিদুল ইসলাম।


ডা. জহিদুল ইসলাম উপস্থাপিত ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ প্রোগ্রামস ফর ইনফেকশন কন্ট্রোল ইন এ টার্শিয়ারি কেয়ার হসপিটাল’ প্রবন্ধে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মাঝে সর্বোচ্চ শতকরা ৫২ শতাংশ রোগীদের অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স পাওয়া গেছে। হৃদরোগ, কিডনি, শিশু ও নবজাতক বিভাগের রোগীদের মাঝে এই হার ছিল ২১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বে বছরে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স ভোগা রোগীদের মৃত্যুর ৭ লাখ। ২০৫০ সাল নাগাদ এই মৃত্যু হার বৃদ্ধি পেয়ে ১ কোটিতে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।


অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স প্রতিরোধ শুধুমাত্র চিকিৎসকদের একার পক্ষে সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, শতকরা ৫৫ শতাংশ পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রীতে বিশেষ করে মুরগীর মাংস অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত। মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রি শিল্পে ১৯ ধরণের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষিখাতও এর আশঙ্কার আওতামুক্ত নয়। এ সকল খাবার খেয়ে মানুষের শরীর সহজেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। ফলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে রোগ নিরাময় হচ্ছে না। ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে।


এছাড়া সমগ্র বিশ্বে রোগীদের স্বাস্থ্য ব্যয় বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার আশঙ্কা ২০৫০ সাল নাগাদ এই ব্যয় ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।


তিনি আরও বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিটেন্সের মতো বৈশ্বিক সমস্যা বিশ্ব নেতাদের সমন্বিত, সুপরিকল্পিত, বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিটেন্স থেকে মুক্তির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের সাথে উপস্থিতিতে যে ‘ওয়ান হেলথ সলিউশন’ প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছেন তার সফল বাস্তবায়ন জরুরি। একই সাথে এই বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি।


সেমিনারে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহেদা আনোয়ার অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ কমিটির কাঠামো ও মাইক্রোবায়োলজির ভূমিকা নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর হাসপাতালে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। বিএসএমএমইউতেও এই প্রোগামটি অতিদ্রুত চালু করা প্রয়োজন। এটি সফলভাবে চালু করতে পারলে হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর হার, রোগীর হাসপাতালে অবস্থানের সময়কাল কমানো সম্ভব হবে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠার প্রবণতা কমানোও সম্ভব হবে। এর জন্য দরকার রোগের জীবাণু শনাক্ত এবং অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা নির্ণয় করে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা।


এ লক্ষ্যে তিনি মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ক্লিনিক্যাল চিকিৎসক, হাসপাতাল প্রশাসন, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানান। ডা. শাহেদা আনোয়ার বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত অবশ্যই করতে হবে। কারণ নিকট ভবিষ্যতে বাজারে আর নতুন কোন এন্টিবায়োটিক আসবে না।


ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী ডা. মোঃ নাজমুল হাসান ‘রেশনাল ইউজ অব অ্যান্টিবায়োটিকস: ক্লিনিশিয়ান্স রোল ইন অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক প্রবন্ধে অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সঠিক ওষুধ, সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার না করার কারণে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। তাই এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে যত দ্রুত সম্ভব নীতিমালার বাস্তবায়ন জরুরি।


এসময় তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালাটি অনুসরণের পরামর্শ দিয়ে, পশুপালন ও কৃষি ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিমন্ত্রণের উপর জোর দেন।


সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আশঙ্কার বিষয় হলো বর্তমানে রোগীদের শরীরে আইসিইউতে রাখা রিজার্ভ অ্যান্টিবায়োটিক যেমন মেরোপেনাম কাজ করছে না। এ বাস্তবতায় আমাদের অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধ করতে হবে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এটা বাস্তবায়ন না করতে পারলে, ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের শরীর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হওয়ার ফলে করোনার চাইতে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। তাই রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ যাতে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রয় বিক্রয় করতে না পারে তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।


বিবার্তা/রিয়াদ/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com