এই মেয়ে এত বয়স হয়েছে, এখনো বিয়ে করোনি? রাজপুত্রের অপেক্ষায় বসে আছ নাকি?
-এই ছেলে? এখনো বিয়ে করনি কেন? বউ থাকলে তো রান্না বান্না নিয়ে এতো কষ্ট হতো না।
-ওমা! ডিভোর্স হয়ে গেছে? কিভাবে হল? একটু মানিয়ে চলতে পারলে না? আচ্ছা আবার বিয়ে করছ না কেন!!??
- আহারে, জামাই মারা গেছে? কিভাবে চলবে এখন? আবার বিয়ে করছ না কেন?
-এত বছর হয়েছে বিয়ের, এখনো বাচ্চা হয় নি কেন?!!!
- মাত্র একটা বাচ্চা আপনার, আরেকটা নিচ্ছেন না কেন?
- ছেলে নাই? ছেলে বাচ্চার জন্য ট্রাই করছেন না কেন?
-বাচ্চা ফেলে চাকরি করেন কেন??
-এই মেয়ে? এত পড়াশোনা করে বসে আছ কেন?
-বাহ! আপনি বউ কে চাকরি করতে দেন? কেন নিজের কামাইতে চলে না?
-আরে আপনার বউ কিছু করে না!! আপনি নিশ্চয় করতে দেন না!!
-আপনারা জামাই-বউ দুজনেই চাকুরি করেন। কাজের মেয়ে বাচ্চা সামলায়? মানুষ হবে তো?
-বাচ্চাকে ডে কেয়ারে দিয়েছেন? মানুষ হবে তো?
-এতো লেখাপড়া করে ঘরে বসে শুধু বাচ্চা সামলাাচ্ছো? বাচ্চাকে ডে কেয়ারে দিয়ে কোন একটা চাকুরি করতে তো পারো?
-গায়ের রং কালো হলেও তুমি কিন্তু দেখতে খারাপ না। একটু নিজের যত্ন না নিলে কী ভালো জামাই পাবে?
-অনার্স শেষ হয়ে গেছের মেয়ের। বিয়ে দেন না কেন?
-এতো মোটা হলে কীভাবে? একটু ডায়েট করো।
-এতো চিকন কেন? খাওনা কিছু?
-এতো মোটা কেন? কী খাও?
-এই বয়সেই ডায়েট শুরু করেছেন?
-ভিন্ন ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করেছে আপনার ছেলে?
-লেখাপড়া শেষ হয়েছে তো অনেকদিন হলো, এখনো কোনো চাকরি হয়নি?
-বিসিএস দিতে পারোনি?
-এতো ভালো চাকুরি করো, ফ্ল্যাট কিনছো না কেন? কোথাও জমি কিনো না কেন?
না প্রশ্নের শেষ নেই। সব প্রশ্ন জুড়তে গেলে মহাকাব্য হয়ে যাবে। আপনি শুধু আপনার জীবনে পাওয়া কিংবা করা প্রশ্নগুলো জুড়ে দিন। আসলে এসব প্রশ্ন বহু মানুষকে মানসিকভাবে কষ্ট দেয় ভেতরে ভেতরে ভেঙে ফেলে। সে কারণেই বছর আটেক আগে ফেসবুকে প্রথম কিছু প্রশ্ন দেখে এই স্ট্যাটাসটি দেই।
সাংবাদিক বলেন, লেখক, খন্ডকালীন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক কিংবা উন্নয়ন কর্মী বা সাধারণ মানুষ; নানা দৃষ্টিকোণ থেকে আমি এই দেশ, সমাজ আর মানুষ দেখি। সেসব দৃষ্টি থেকেই প্রশ্নগুলো লেখা। যদিও মেয়েদের কথা বেশি শোনানো হয় আদৌতে নারী-পুরুষ কেউই আসলে প্রশ্ন থেকে রেহাই পান না।
আমাদের সবার মনে রাখা উচিত, সমাজ তো আসলে কোন আলাদা সত্তা নয়। আমাদেরকে মিলেই তৈরি হয়! এই আমরাই কিন্তু অন্যের 'প্রাইভেসি' কে বা 'পারসোনাল লাইফ'কে সম্মান করতে ভুলে যাই। পরশ্রীকাতর এই আমরা সারাক্ষণ মেতে থাকি আরেকজনকে নিয়ে।
আমাদের সবার মনে রাখা উচিত, পৃথিবীর কিছু ব্যাপার নিয়ে কারোরই কথা বলারই অধিকার নেই। আপনার কাছে যেটা জীবনের প্রায়োরিটি, আরেকজনের কাছে সেটার কোন মূল্য নাও থাকতে পারে। অহেতুক কেন নিজের জীবনের সাথে আরেকজনকে মেলান তাহলে?
সবাইকে অনুরোধ প্লিজ ভাবুন। নিজের প্রাইভেসি রক্ষা করুন, আরেকজনকেও তাঁর মতো থাকতে দিন। আমাদের সন্তানদের ও ছোটবেলা থেকেই এসব শেখানো উচিত। আমার আজকাল মনে হয় যদি সব ভালো মানুষদের নিয়ে একটা মূল্যবোধের স্কুল খুলতে পারতাম যেখানে সততা মানবতা মানুষকে শ্রদ্ধা থেকে শুরু করে কমনসেন্স শেখানো যাবে! যেহেতু স্কুল খুলিনি এখনো তাই লেখালেখি করে চেষ্টা করা!
দেখেন অবশ্যই আমরা সবাই সবার খোঁজ নেব। তবে সেটা ব্যক্তিগতভাবে এমন সব প্রশ্ন করে নয় বরং একজন মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশলে পর্যবেক্ষণ করলে অনেককিছুই বোঝা যায়। খেয়াল করলে দেখবেন আমরা অন্যের বিপদে খোঁজ নিই না কিন্তু প্রাইভেসি লংঘন করি প্রতিনিয়ত। অথচ হবার কথা উল্টো। কাজেই চলুন সবাই পরশ্রীকাতরতা আর গীবত থেকে দূরে থাকি। সবসময় মানুষের মঙ্গল কামনা করি। মূল্যবোধ, সততা, মানুষকে শ্রদ্ধা করতে শেখাই। দিনশেষে প্রত্যেকেকে তার মতো থাকতে দিই। তাতে সবার নিজের শান্তি। সবাইকে শুভ সকাল! ভালো থাকুন সবাই। ভালো থাকুক প্রিয়বাংলাদেশ!
(ফেসবুক ওয়াল থেকে)
লেখক: কলামিস্ট শরিফুল হাসান
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]