সম্ভবত ক্লাস ফোর ফাইভে পড়ি। এরকম সময় যতদূর মনে আছে, আমরা বড় বাজারের যে দোকান থেকে চাল কিনতাম, সেই দোকান থেকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে একটা কার্ড আসত। সেই কার্ডের উপরে বড় করে লেখা থাকত 'শুভ হালখাতা' । ঐ দিন দোকানে হালখাতা অনুষ্ঠান হবে। আমাদের সবার দাওয়াত।
আব্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'হালখাতা অনুষ্ঠানে কী হয়?'
'সবাইকে মিষ্টি খাওয়ানো হয়।'
তারপর জানতে চাইলাম, 'দোকানদার শুধু শুধু পকেটের টাকা খরচ করে মিষ্টি খাওয়াবে কেন?'
আব্বা বললেন, 'যারা সারাবছর বাকি খায়, তারা এই অনুষ্ঠানে এসে বাকি টাকা পরিশোধ করে দেয়। এজন্য সবাইকে মিষ্টি খাওয়ার দাওয়াত দেওয়া হয়, যাতে সবাই বাকি টাকা পরিশোধ করে দেয়। নতুন বছরে আবার নতুন করে সবাই হিসাবের খাতা খোলে।'
একটু উৎসাহ নিয়ে আব্বার কাছে আবার প্রশ্ন করলাম, 'আপনি তো বাকি খান না। তাহলে আমাদের দাওয়াত দেয় কেন?'
'সারা বছর চাল কিনি। আর ও আমার ছাত্র।'
যাই হোক, পহেলা বৈশাখ বিকেলবেলা আব্বার সাথে সেই চালের দোকানে যেতাম। সে এক এলাহি ব্যবস্থা! পানি রাখার মাইটের মধ্যে রসের মিষ্টি ভরা থাকত। যে যত খেয়ে পারে। সাথে থাকত মনসুর কেক আর নিমকি।
কয়েকজন তো দেখতাম বিশ বাইশটা মিষ্টিও খেয়ে ফেলত। ফ্রি পেলে যা অবস্থা হয় আর কী! যে যত বেশি মিষ্টি খেতে পারত, সে তত বেশি বাহাদুরি দেখাত।
দুই তিন বছর এভাবেই দেখেছিলাম। আনলিমিটেড মিষ্টির বন্দোবস্ত।
এরপর এই পেট চুক্তি খাওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করা হলো। দোকানদার তখন প্যাকেটিং ব্যবস্থা শুরু করেছে। যে কয়জন আসবে, সেই কয়টি প্যাকেট দেয়া হবে। বেশি প্যাকেট দেয়া হবে না।
দোকানদার আব্বাকে বলেছিল, 'স্যার! আপনার যে কয় প্যাকেট লাগে নিয়ে যান। কিন্তু আগের মতো আর ব্যবস্থা রাখতে পারি না। অনেকে পেট ভরে মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশী সাথে করে নিয়ে আসে। খাওয়ার পরে আবার পুরো পাওনা টাকাও শোধ করে না। লস হয়ে যায়।'
যাই হোক, স্বল্প জ্ঞানের ছোটবেলায় আমার কাছে সেই শুভ হালখাতা-ই ছিল যেন পহেলা বৈশাখের অন্য নাম।
লেখক: রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।
(ফেসবুক ওয়াল থেকে)
বিবার্তা/এসবি/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]