শিরোনাম
‘দলটা তো আমাদের’
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০১৯, ১২:৫৭
‘দলটা তো আমাদের’
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

নিজেদের জঞ্জাল নিজেদেরই দূর করতে হবে; কারণ ‘দলটা তো আমাদের’


আমাদের অগ্রজ-অনুজ এবং আমাদের যৌবনের শ্রেষ্ঠ সময় কেটেছে এ দলের দুর্দিন-দুঃসময়ে। আওয়ামী লীগ তখন সরকারি দলে ছিল না। মসৃণ ছিল না আমাদের পথচলা, কণ্টকাকীর্ণ পথেই চলতে হয়েছে বেশিরভাগ সময়।


রোদেপুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে, পুলিশ-ছাত্রদলের নির্যাতন সয়ে, বছরের পর বছর জেল খেটে যৌবনের সুবর্ণ দিনগুলো কেটেছে দুর্দিন-দুঃসময়ের সতীর্থ সহযোদ্ধাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।


আমাদের অগ্রজরা দুঃসময়ে যে পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করে দলকে টিকিয়ে রেখেছেন সেটা অবর্ণনীয়...। কিন্তু আজকের ক্ষমতায় কোথায় তারা...? কোথায় আমাদের অবস্থান...? কে কি রকম করে বেঁচে আছে, কে রাখে কার খবর...? আমাদের সমসাময়িক অনেক সহযোদ্ধা, অগ্রজ এখন এমপি-মন্ত্রী-নেতা; অথচ তাদের চোখেও কাঠের চশমা! আমাদের জন্য তখনও বিরোধী দল, এখনো এর ব্যতিক্রম কিছু নয়।


আমাদের গুটি কয়েক মানুষ আল্লাহর অশেষ কৃপায় টুকটাক ব্যবসা করে যেভাবে টিকে আছে সেটার গল্প না হয় আরেক দিন করা যাবে, এখানে দল ক্ষমতায় থাকা আর না থাকায় খুব বেরি ভেরি করে না। যদিও আমি মহান রাব্বুল আল আমিনের প্রতি ভিষণ সন্তুষ্ট এক বান্দা। সারাক্ষণ তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে তাকেই স্মরণ করি। তার নির্দেশ পালনে ইবাদত-বন্দেগি করার চেষ্টা করি...। যাই হোক আজ সেদিকে না যাই। রাজনীতি নিয়ে সবারই কিছু না কিছু প্রত্যাশা প্রাপ্তির হিসেব থাকে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই...।


দল ক্ষমতায় আসার পর কিছু বুনো শুয়োর সিন্ডিকেট করে নেত্রীর আশপাশে ঘেষতে দেয়নি দলের দুর্দিনের সতীর্থ-সহযোদ্ধাদের। ওদের নীলনকশার ব্যারিকেড পেরিয়ে নেত্রীর কাছে বলা যায়নি আমাদের ফেলে আসা জীবনগাথা; স্বর্থপরের দল কেবল নিজেদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে নিজের আখের গুছিয়েছে, বরং ওদের নীল থাবায় বারবার ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছে। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে নীরবে হারিয়ে গেছে কতশত সহযোদ্ধা...। অথচ নেত্রী তা জানতেও পারেনি, তখন যারা বিরোধী দল করেছে, তাদের কাছে দলটা এখনো বিরোধী দলই রয়ে গেছে; পার্থক্য শুধু এই- তখন বিরোধীদের আক্রমণ আর পুলিশের ধাওয়ায় ঘরে ঘুমানো যায়নি আর এখন কেউ কেউ ঘরে ঘুমালেও নিজ দলের সুবিধাবাদী আর দালালদের ষড়যন্ত্রে অনেকেই ঘর ছাড়া, এলাকা ছাড়া, ওসি আর এমপি মিলে করেছে আওয়ামী লীগ নিধন কর্মসূচি...। ব্যক্তিত্বহীনদের বিচরণক্ষেত্রে ব্যক্তিত্ববান মানুষের টিকে থাকাই এখন বড় দায়!


এটা তো সমাজের এক পর্যায়ের চিত্র!


খোদ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা হাইব্রিড নেতারা যা করছে, এটাও তো দেখারও কেউ নেই...। হাইব্রিড আর ভূঁইফোড়রা তো করছেই; তাদের সাথে গুটি কয়েক পুরনো নেতাও নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে, অতীত ভুলে, চোখে কালো চশমা লাগিয়ে নিজেদের প্রোটোকল বাড়াতে কিছু ভূঁইফোড় দোকানের সৃষ্টি করেছে। আমদানি করেছে কিছু কাউয়া এবং টোকাই প্রকৃতির চামচা। তারা পার্টি অফিসে ঢুকতেই এ কাউয়া আর চামচাগুলো তাদের সামনে-পেছনে বিচরণ করতে থাকে আর তাদের শরীরে সয়াবিন-পামওয়েল তেল মারতে থাকে। অথচ তারা যে মাপের নেতা এবং তাদের পজিশন অনুযায়ী তাদের পেছনে থাকার কথা শিক্ষিত-ভদ্র-মার্জিত এবং দুঃসময়ের ডাকসাইটের সাবেক ছাত্রনেতাদের যাদের, নামের গৌরবে পার্টি কালারফুল হয় এবং দেখতেও সুন্দর লাগে। যেহেতু তারাও সাবেক ছাত্রনেতা ছিলেন। কিন্তু তাদের আস্থা ওইসব টোকাই, চামচা আর কাউয়াতেই!


দুঃচরিত্রের ওই নেতাদের স্ক্যান্ডেল নিয়ে তো মুখরোচক ট্রপিক্স একটা লেগেই থাকে। তদবিরবাজ ওই কাউয়াদের পাওনাদাররা পেছন পেছন ঘুরতে থাকে ওই চরিত্রহীন নেতাদের দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এদের দূরে রাখে, কেউবা পার্টি অফিসেই চালায় পাওনাদারের দেন-দরবার...!


লাজলজ্জা-ভয়ডরের অনুভূতি তো এদের শরীর থেকে অপারেশন করে কেটে ফেলেছে অনেক আগেই...। তাই তারা লাজলজ্জার ধার ধারে না। ভাঁড় সাজতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। তাদের কাছে গোপন আর প্রকাশ্যের তেমন কোনো পার্থক্য নেই...। যদিও এসব বলে আর লাভ নেই। দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় এদের চামড়ায় অনেক সেডিমেন্টেশন হয়ে গেছে।


চোখে কালো চশমা! তাই এখন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম দুর্দিনের সতীর্থদের সাথে নিয়ে মাঝে-মধ্যেই দলের অভ্যন্তরে হাইব্রিড চামচা এবং ভূঁইফোড় দোকান নিধনে ঝটিকা অভিযান চালাব; এদেরকে যেখানে যেভাবে পাব গণপিটুনি দিয়ে দলের অভ্যন্তরে ত্যাগী এবং দুর্দিনের সহযাত্রীদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করা হবে। তাতে যদি ওই আদর্শহীন নেতাদেরও শিক্ষা দিতে হয়, তাই দিতে হবে।


সবার মনে থাকার কথা দলের প্রয়োজনে, নেত্রীর প্রশ্নে সেদিন যারা বেঈমানি করেছিল, যারা শেখ হাসিনাবিহীন দল গঠনের ষড়যন্ত্র করেছিল, যারা বলে বেড়াতো শেখ হাসিনা যখন জেল থেকে বের হবেন, তখন সে থুরথুরে বুড়ি হয়ে লাঠিতে ভর করে হাটতে হবে। কেউ বলতো নেত্রীকে ১০০ বছর কারাগারে থাকতে হবে। তারাও কিন্তু দলে আবার সক্রিয় হয়ে বড় বড় কথা বলছে। দলের অনেক বড় শুভাকাঙ্ক্ষি সেজে বিচরণ করছে; পার্টি অফিস গরম করছে আর সুযোগ বুঝে নিজেদের জাহির করতে ব্যস্ত রয়েছে...। কেউ কেউ তো কেন্দ্রীয় নেতাও হয়ে গেছে!


বিগত ১/১১ এর সময় ওইসব ডাকসাইটের দালাল নেতাদের ঘাড় ধাক্কা এবং পাঞ্জাবি ছিঁড়ে দিতে যেমন সামান্য কুণ্ঠাবোধও করেনি দলের তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা, প্রয়োজন হলে এখনও কুণ্ঠাবোধ করবে না। অপেক্ষা করবে না কারো নির্দেশের। আমরা বুঝে গেছি আমাদের ত্যাগ-শ্রম জেল-জুলুম আর রক্তের প্রতিদান কেউ দেবে না। নিজেদের অধিকার নিজেদেরই আদায় করে নিতে হবে। সাহেবরা সবাই এখন ব্যস্ত নিজেদের আখের গুছাতে।


মাননীয় নেত্রী যখন যাকে যেখানে দায়িত্ব দিয়েছেন তারা সেটা নিজেদের পৈতৃক সম্পদ এবং এ পদের জন্য নিজেকে সেরাদের সেরা মনে করে নিজের এবং আত্মীয় স্বজনের প্রয়োজনে দলটাকে চিৎ করে-উপর করে ব্যবহার করছে। ক্ষমতার দম্ভে বেহুঁশ হয়ে দলের দুর্দিনের কর্মীদের সাথে কর্মচারীর মতো আচরণ করে যাচ্ছে। আবার নেত্রী যখন ক্ষমতার বাইরে রাখছেন তখন আবার হুঁশ ফিরে কর্মীদের কাছেই ফিরে আসছে...!


তারা বেঈমান হলেও কর্মীরা তাদের যথাযোগ্য সম্মান দিতে কখনো ভুল করেনি। ক্ষমতার এ কেমব্রিয়ান যুগে আমরা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছি আমাদের সাহেবরা দলের কর্মীদের জন্য এমপি-মন্ত্রী-নেতা হননি; প্রত্যেকে তারা নিজের তরে। তাই আমাদের অধিকার আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। সেজন্য যা দরকার তাই করতে হবে।


ওদের চোখে যেমন কালো চশমা। আমাদের চোখেও টিনের চশমা পরতে হবে। দলেই এ সুসময় চিরদিন থাকবে এমনটা আশা করা ভুল। কিন্তু দলটাকে তো টিকে থাকতে হবে। নেত্রীর প্রয়োজনে, দলের প্রয়োজনে আমরাই ছিলাম ভবিষ্যতেও আমাদেরই থাকতে হবে। তাই আমাদের অধিকার আমাদেরই আদায় করতে হবে। সাধু সাবধান!


কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েলের ফেসবুক থেকে নেয়া।


বিবার্তা/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com