শিরোনাম
জন্মেই অর্ধেক সম্ভাবনা হারাচ্ছে বাংলাদেশের শিশুরা
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০১৮, ১১:৩৯
জন্মেই অর্ধেক সম্ভাবনা হারাচ্ছে বাংলাদেশের শিশুরা
ফাইল ছবি
আবুল কাশেম, (বালি) ইন্দোনেশিয়া থেকে
প্রিন্ট অ-অ+

জন্ম নেয়ার সময়ই অর্ধেক সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলছে শিশুরা। ধনী দেশগুলোতে জন্ম নেয়া শিশুরা বড় হয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যতোটা সফল হবে, বাংলাদেশে আজ জন্ম নেয়া শিশু পড়ে থাকবে তার অর্ধেক দূরত্ব পিঁছনে।


মেধা, দক্ষতা, শারীরিক সুস্থতা কিংবা উৎপাদনশীলতা- সকল ক্ষেত্রেই এই যোজন দূরত্ব কমাতে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় কার্যকরভাবে বিপুল বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।


বাংলাদেশে আজ যে কন্যা শিশুটি জন্ম নিচ্ছে, দেশের বিদ্যমান পুরো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা ভোগ করে যখন সে বড় হবে, তখন তার উৎপাদনশীলতা হবে ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশ এখনো তার দেশের শিশুদের জন্য উপযুক্ত মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারেনি।


বাংলাদেশের ভবিষ্যত কর্মক্ষম মানুষগুলো পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অভাবে অন্য দেশের মানুষের সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা, উৎপাদনক্ষমতা ও দক্ষতায় পিঁছিয়ে থাকবে।


বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত হিউম্যান ক্যাপিটাল ইনডেক্স (মানবসম্পদ সূচক) এ বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন তথ্যই রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন শহর বালিতে সংস্থা দু’টির বার্ষিক সভায় প্রথমবারের মতো এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।


প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ছেলে শিশুদের তুলনায় কন্যা শিশুদের ভবিষ্যত উৎপাদনশীলতা বেশি হবে। মেয়ে শিশুদের উৎপাদনশীলতার সম্ভাবনা যেখানে ৪৯ শতাংশ, সেখানে ছেলে শিশুদের সম্ভাবনা ৪৭ শতাংশ।


বর্তমান সময়ে জন্ম নেয়া শিশুরা কোন দেশে কিভাবে বেঁচে থাকে, তাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা কেমন- তার ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজকে জন্ম নেয়া শিশু বড় হয়ে কতোটা দক্ষ, কর্মক্ষম ও উৎপাদনশীল হবে- প্রতিবেদনটিতে তার বিশ্লেষণ রয়েছে।


কোনো দেশ তার শিশুদের জন্য সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করলে ওই দেশের স্কোর বা নম্বর ১ ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের স্কোর এক্ষেত্রে দশমিক ৪৮। অর্থাৎ শিশুদের জন্য সর্বোচ্চ যে মানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থাকা দরকার, বাংলাদেশে তার অর্ধেকও নেই।


পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে নেপাল দশমিক ৪৯ ও শ্রীলঙ্কা দশমিক ৫৮ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে আছে। এছাড়া ভারতের স্কোর দশমিক ৪৪, পাকিস্তানের দশমিক ৩৯ ও মিয়ানমারের দশমিক ৪৭। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ চীনের স্কোর দশমিক ৬৭।


ধনী দেশগুলোর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ফিনল্যান্ড। দেশটির স্কোর দশমিক ৮১। এরপরে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেনের স্কোর দশমিক ৮০। ফ্রান্স, নরওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির স্কোর দশমিক ৭৫ থেকে দশমিক ৭৯ এর মধ্যে।


বালির ওয়েস্টিন হোটেলে বৃহস্পতিবার পৃথক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম ও আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্রিস্টিন ল্যাগার্ড স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের খাতিরে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।


বাংলাদেশের শিশুদের ৩৬ শতাংশই শরীরের প্রতি যত্মশীল নয়- উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর ফলে শারিরীক দুর্বলতা ও অক্ষমতা নিয়ে তাদের সারাজীবন বেঁচে থাকতে হয়।


প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আজ যে শিশুটি জন্ম নিলো, তার ৫ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৯৭ শতাংশ। অথাৎ ৩ শতাংশ শিশু ৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই মারা যাচ্ছে। আর যে শিশুটি ১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচলো, ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৮৭ শতাংশ। অথাৎ ১৫ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে বিভিন্ন রোগে তাদের ১৩ শতাংশই মারা যায়।


বাংলাদেশের কন্যা শিশুরা মানবসম্পদ সূচকে ছেলে শিশুদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।


বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বলছে, বিশ্বব্যাপী জন্ম নেয়া শিশুদের ৫৬ শতাংশই উপযুক্ত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অভাবে তাদের অর্ধেক সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলছে।


প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের শিশুরা সাড়ে ৬ বছর বয়সে স্কুলে যায় এবং স্কুল শিক্ষা (১১ ক্লাস পর্যন্ত) সম্পন্ন করতে ১৮ বছর লেগে যায়।


সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, টেকসই ও অর্ন্তভূক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মূল চালিকাশক্তি হলো মানবসম্পদ। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ কাক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না। আমি আশা করছি, দেশগুলো তাদের নাগরিকদের জন্য আরো কার্যকরভাবে আরো বেশি অর্থ এ দু’টি খাতে বিনিয়োগ করবে।


তিনি বলেন, সবার জন্যই প্রতিবন্ধকতা বাড়ছে। ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো সক্ষম করে বিভিন্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর হিউম্যান ক্যাপিটাল গড়ে তোলা সকল দেশের জন্যই কঠিন কাজ।


বিবার্তা/কাশেম/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com