শিরোনাম
বাংলাদেশেও অর্থপাচার করছে বিদেশীরা
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:৩৬
বাংলাদেশেও অর্থপাচার করছে বিদেশীরা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

এ যাবৎ বাংলাদেশ থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়ার তথ্য পাওয়া গেলেও এবার মিললো উল্টো তথ্য। অন্য দেশের নাগরিকরাও অবৈধভাবে অর্থপাচার করে বিনিয়োগ করছে বাংলাদেশে। এ অভিযোগে বিদেশে গ্রেফতারও হয়েছেন একজন। বাকিদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস।


অর্থমন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক নাগরিক বাংলাদেশে অর্থপাচার করে শিল্প কারখানা গড়ে তুলেছে বলে দেশটির দূতাবাস থেকে সরকারকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। খাতের আবদুল্লাহ মাসাত নামের ওই নাগরিককে গতবছর গ্রেফতারও করা হয়েছে। তার নামে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থপাচারের মামলা হয়েছে। ওই মামলা পরিচালনায় বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির পাবলিক প্রসিকিউশন ডিপার্টমেন্ট মাসাত ও তার পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশে লেনদেন ও বিনিয়োগের তথ্য চেয়েছে।


বিশ্বজুড়ে অর্থপাচার নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি (জিএফআই) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৭৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার কোটি টাকা। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতেও বাংলাদেশীদের বিপুল পরিমাণ আমানত রয়েছে। মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম কর্মসূচিতে এশিয়ার শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশীরা। এছাড়া, কানাডার বেগম পাড়াসহ সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ করসুবিধা দেয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশগুলোতেও বাংলাদেশীরা অর্থপাচার করছে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্যে উঠে এসেছে। এ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশে বিদেশীদের অর্থপাচার করে বিনিয়োগ করার খবরও মিলছে।


ঢাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাস খাতের আবদুল্লাহ মাসাতের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে সহযোগিতা চেয়ে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নোট ভারবাল পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। তার প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এবিএম সারোয়ার-ই-আলম সরকার স্বাক্ষরিত একটি পত্র অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হয়েছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবিরকে পাঠানো চিঠি অনুযায়ী, খাতের আবদুল্লাহ মাসাত কেবল সংযুক্ত আরব আমিরাতে নাগরিকই নয়, তিনি একই সঙ্গে সুইজারল্যান্ড, লেবানন ও জর্জিয়ারও নাগরিক। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রাশ আল খাইমা’র প্রধান নির্বাহীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরিরত ছিলেন। ২০১২ সালে তার অর্থপাচারের বিষয়টি উন্মুক্ত হলে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান। দেশটির সরকার মাসাতসহ তার ছেলে বার্নার্ড গিলবার্ট মাসাতের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা করেছে। বার্নার্ড গিলবার্ট মাসাত সুইজারল্যান্ডের নাগরিক।


সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ মামলা তদন্তকালে প্রমাণ পেয়েছে যে, মাসাত সরকারি তহবিল গোপনে নিজের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে তা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। পাচারের অর্থ বাংলাদেশে স্টার সিরামিকস লিমিটেড (কোম্পানি নিবন্ধন নং সি৮৭০৮১), স্টার পোরসিলাইন লিমিটেড (সি৯৮৭৮৯), ও রাকেন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিতে (সি৬৯৫৬২) বিনিয়োগ করেছে বলে দেশটির দূতাবাস জানিয়েছে। মাসাত এসব কোম্পানির মালিকানা তার পুত্র-কন্যাসহ পরিবারের সদস্যদের নামের হস্তান্তর করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আদালত মাসাতের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব থেকে গ্রেফতার হন তিনি।


বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন-কানুন ও বিধি মোতাবেক এ বিষয়ে তদন্ত পরিচালনাপূর্বক সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।


বিবার্তা/কাশেম/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com