শিরোনাম
স্বর্ণে হেরফের হয়নি, লেখার ভুল : বাংলাদেশ ব্যাংক
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০১৮, ২০:০৩
স্বর্ণে হেরফের হয়নি, লেখার ভুল : বাংলাদেশ ব্যাংক
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত স্বর্ণ হেরফের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভল্ট সুরক্ষিত, এখানে ফাঁক-ফোকরের অবকাশ নেই।


একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখায় এমন দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এস এম রবিউল হাসান।


তিনি বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের প্রতিবেদন সঠিক নয়, এবিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


অবৈধ পথে আসা স্বর্ণের চালান ধরার পর আদালতের মাধ্যমে তার স্থান হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট। সেখানে সংরক্ষিত ৯৬৩ কেজি স্বর্ণ পরীক্ষা করে অনিয়ম পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার চাকতি ও আংটির জায়গায় এখন আছে মিশ্র বা সংকর ধাতু। ২২ ক্যারেট সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট।


মঙ্গলবার বিকেলে অবস্থান ব্যাখা করতে সাংবাদিকদের সামনে হাজিন হন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা। ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে রাজস্ব বোর্ডের মেশিনের মাপের পার্থক্য থাকায় ভল্টের স্বর্ণ পরিমাপে পার্থক্য হয়। কষ্টিপাথরের মাধ্যমে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই স্বর্ণ যাচাই করে তা ভল্টে সংরক্ষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাচাই করার জন্য অন্য কোনো সঠিক মাধ্যম নেই।


রবিউল হাসান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে রাজস্ব বোর্ডের মেশিনের মাপের পার্থক্যর কারণে স্বর্ণ পরিমাপে পার্থক্য হয়েছে। যে রিপোর্টের উল্লেখ করে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, সেটি শুল্ক গোয়েন্দাদের নিজস্ব রিপোর্ট। তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভল্টে রক্ষিত স্বর্ণ পরীক্ষার আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।


তিনি আরো বলেন, ম্যানুয়াল মাধ্যমে স্বর্ণ পরীক্ষা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভল্টে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। এমনকি গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরকেও সেখানে প্রবেশ করতে অনুমতি নিতে হয়। ভল্ট থেকে ইচ্ছা করলেই কেউ স্বর্ণ বের করতে পারে না বলেও দাবি করেন।


ভল্টের দায়িত্বে থাকা কারেন্সি অফিসার আওলাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রুটি বলতে যা আছে, নথিভুক্ত করার সময় ইংরেজি-বাংলার ভুল। এর বাইরে অন্য ত্রুটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই। ২২ ক্যারেটের জায়গায় ১৮ ক্যারেট হওয়ার বিষয়টি দুটি ভিন্ন যন্ত্রে পরিমাপের কারণে হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দারা যখন স্বর্ণ জমা রাখেন, তখন হয়তো তাদের মেশিনে ২২ ক্যারেট দেখিয়েছিল, কিন্তু আমাদের মেশিনে সেটি ১৮ ক্যারেটই হয়েছিল।


শুল্ক গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে শীর্ষ দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত একটি সোনার চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত সোনার রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন ওই চাকতি এবং আংটি যথাযথ ব্যক্তি দিয়ে পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশ (১৯ দশমিক ২ ক্যারেট) বিশুদ্ধ সোনা হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দেয়।


কিন্তু দুই বছর পর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শন দল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১ দশমিক ২ ক্যারেট) সোনা পায়। আংটিতে পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ সোনা (৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট)। ধারণা করা হচ্ছে ভল্টে রাখার পর এগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে। ভল্টে থাকা সোনার চাকতি এবং আংটি পরীক্ষার পর দেখা গেল এগুলো সোনার নয়, অন্য ধাতুর মিশ্রনে তৈরি।


এর জবাবে আওলাদ হোসেন বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের দেয়া স্বর্ণ জমা রাখার সময় খাঁটি স্বর্ণ ৪০ শতাংশই ছিল। কিন্তু ইংরেজি-বাংলার হেরফেরে সেটা ৮০ শতাংশ লিখে ভুলবশত নথিভুক্ত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত শখ জুয়েলার্সের স্বর্ণকার এই ভুলটি করেছিলেন।


সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পাবলিকেশন্সের মহাব্যবস্থাপক জি এম আবুল কালাম আজাদ ও ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্টের মহাব্যবস্থাপক সুলতান মাসুদ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/মৌসুমী/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com