অস্থিতিশীল বাজারে দিশেহারা ক্রেতা
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৩, ১৭:০৫
অস্থিতিশীল বাজারে দিশেহারা ক্রেতা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্থিতিশীল বাজারে গিয়ে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন ক্রেতারা। একটির দাম কিছুটা কমলে বাড়তে থাকে অন্যটির দাম। যে পণ্যে হাত দিচ্ছেন সেটাই আগুন মনে হচ্ছে তাদের কাছে। গত সপ্তাহে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছিল, এবার বেড়েছে সবজি ও মাছের দাম। গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ১৮০ টাকা ডিমের ডজন আজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। ফলে বাজার করতে আসা ক্রেতাদের অবস্থা বরাবরের মতোই শোচনীয়।


গরিবের মাছ খ্যাত পাঙ্গাশ ছাড়া বাজারে তিনশ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। গরু আর খাশির মাংসের কথা তো অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার চিন্তাও করতে পারে না। দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগিরও। চড়া সবজির বাজারও।


১৮ আগস্ট, শুক্রবার সকালে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের এই চিত্র দেখা গেছে।


আমদানি হলেও এখনো চড়া পেঁয়াজের বাজার। দেশি রসুন ও ডালের দামও তুলনামূলক বেশি, পণ্য দুইটির দাম কিছুটা বেড়েছে। সুখবর নেই মসলার বাজারেও।


দুই মাস ধরে উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে মসলা জাতীয় প্রায় সব পণ্য। এর মধ্যে নতুন করে কিছুটা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। সাত-আট দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। তবে অস্বাভাবিক বাড়ার পর দাম কমেছে কাঁচামরিচের।


সম্প্রতি সয়াবিন তেল ও চিনিতে ৫ টাকা করে কমলেও এখনও পণ্য দুটির উচ্চমূল্যই রয়েছে বলা চলে। চালের বাজারও উচ্চমূল্যে স্থির রয়েছে। প্রয়োজনের তাগিদে বাড়তি দামেই এসব পণ্য ক্রয় করলেও বাজারে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।


তারা বলছেন, সবকিছুর দাম বাড়তি। সবকিছুই কম কম করে কিনতে হচ্ছে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের আয় বাড়ছে না। তবে খরচ বেড়েছে ৩-৪ গুণ। টিকে থাকাটাই মুশকিল।


তারা আরও বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে খুব দ্রুত তারা বিপদে পড়বেন। তখন আর চলার উপায় থাকবে না।


রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি পর্যায়ে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং দুর্বল মানের পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চার-পাঁচ দিনে দেশি রসুনের কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা রসুনের দামও ২০০ থেকে ২২০ টাকা। আদা, জিরাসহ অন্যান্য মসলার দামও বাড়তি।


সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, গত এক মাসে দেশি পেঁয়াজ ১২ ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ২৮ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া এক মাসের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ৬৪ শতাংশ।


রাজধানীর কারওয়ানবাজারে সবজি কিনতে আসা ইবরাহিম বলেন, বাজারে সব ধরনের সবজি আছে। কিন্তু দাম অনেক বেশি। বিক্রেতারা বাড়তি দরে বিক্রি করছেন। কেনার উপায় নেই। বাজারে যদি সংকট থাকত, তা হলে মানা যেত। কিন্তু সংকট নেই। দাম বেশি। তাই আমাদের মতো সাধারণ মানুষের সবজি কিনতেও কষ্ট হচ্ছে।


হতাশা প্রকাশ করে শাহিন আলম বলেন, বাজারে তো সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। কিন্তু বেতন-ভাতা বাড়েনি। বাঁচতে তো হবে। এ জন্য বাড়তি ব্যয় সামাল দিতে প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনতে হচ্ছে।


মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান বাজারের মাছ বিক্রেতা মো. ফরিদের কাছে মাছের দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঙ্গাশ ২৫০ টাকা, রুই সাড়ে তিনশ, কাতল ৩৪০ টাকা, তেলাপিয়া ৩০০ টাকা।


গত সপ্তাহের সাথে এই সপ্তাহের দামের পার্থক্য জানতে চাইলে ফরিদ বলেন, পাঙ্গাশের দাম বাড়ছে। ২০০-২২০ টাকা ছিল। বাকিগুলা তো আগের দামেই আছে।


শিয়া মসজিদ বাজারে দেখা গেল ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। দাম অনেকেরই ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আধা কেজি ওজনের ইলিশের কেজি হাজার টাকার বেশি। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে কেজি প্রতি ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। এক কেজির কাছাকাছি ওজনের ইলিশ ১৭০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত৷


এছাড়া বাজারে পোয়া মাছের কেজি ৪০০ টাকা কেজি, তুলার ডাডি ৪৫০ টাকা, চিংড়ি গুড়া ও বড় ৮০০ টাকা কেজি, সুরমা মাছের কেজি ৩২০ টাকা কেজি, ট্যাংড়া মাছ ৫০০ টাকা কেজি। মৃগেল মাছের কেজি ৩০০ টাকা। বাতাসি মাছের কেজি ৩৫০ টাকা।


ব্রয়লার মুরগি গত সপ্তাহে ১৮০-১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আবার তা ২০০ টাকায় পৌঁছেছে।


এ বিষয়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা কালাচানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আড়তে দাম বেশি। আমরা কেজিতে ৫/১০ টাকা লাভ পাই।


এদিকে উচ্চ দামের বোঝা বইতে গিয়ে বিপাকে ক্রেতাদের একটি অংশ৷ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী শামসুল হক শিয়া সমজিদ বাজারে বাজার করতে আসেন শুক্রবার সকালে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আয়ের চাইতে ব্যয় বেশি। এমন কোনো অপশন নাই যে, আপনি কম দামে কিছু কিনতে পারবেন। প্রতি মাসেই ঋণ হচ্ছি। এভাবে চলে না।


ক্রেতাদের হতাশার আরেকটি জায়গা সবজির বাজার। ২০-২৫ টাকার আলু এখন ৪৫ টাকা।


বাজারে প্রতি কেজি ঢেড়স বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, পেঁপের কেজিও ৫০ টাকা। পটল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, দুন্দল ৮০ টাকা, বেগুনের কেজি ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ৯০ টাকা। লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস, কচুর মুখী ৮০ টাকা, কাকরোল ৮০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা।


সবজির দামের বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে নগরীর আদাবর এলাকার মুদি ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন বলেন, কী বিক্রি করুম আর কী কিনুম! সবার অবস্থা একই। আমার থেকে যারা কেনে, তারাও কষ্টে আছে। সব জিনিসের দাম বেশি। আমি কিছু কিনতে গেলে, সেখানেও দাম বেশি। সকালে এক কেজি বরবটি কিনতে গেছি, দেখি ৮০ টাকা। পরে আধা কেজি নিয়া আসছি। টমেটো কিনি না কতদিন মনে নাই। ১২০, দেড়শো টাকা কেজি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com