পঁচে যাচ্ছে ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩, ১৭:৫৩
পঁচে যাচ্ছে ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক দীর্ঘদিন সীমান্তে আটকে থাকার কারণে পঁচে নষ্ট হওয়ার দাবি করেছেন আমদানিকারক ও আড়তদাররা। তীব্র তাপদাহে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পেঁয়াজ পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে অভিযোগ তাদের।


বর্তমানে ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক থেকে টনের পর টন নষ্ট পেঁয়াজ বের হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন হিলি স্থল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সহ-সভাপতি শাহিনুর রেজা।


শাহিনুর রেজা বলেছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলেও কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমোদন বা আইপি দিতে ১৫ থেকে ২০ দিনের মত দেরি করে। এই দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকার কারণে ট্রাকে পড়ে থেকে পেঁয়াজগুলো পচে গেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।


রেজা বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী পেঁয়াজ আমদানির কথা বলার পরপরই বন্দরের আমদানিকারকরা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ট্রাকে পেঁয়াজ বোঝাই করতে বলেছিলেন। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে বিলম্বের কারণে এই ট্রাক বোঝাই বস্তাবন্দি পেঁয়াজগুলো বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের ভেতরে দীর্ঘ দিন ধরে আটকে পড়ে ছিল। তীব্র গরমের মধ্যে এতো লম্বা সময় ধরে আটকে থাকায় পেঁয়াজের চালানের বড় অংশ পঁচে নষ্ট হয়ে যায়।


তিনি বলেন, ভারতের এই পেঁয়াজগুলো নাসিক, ইন্দোর থেকে লোড হয়। সেখান থেকে হিলি বন্দর পর্যন্ত আসতে ৪/৫ দিন সময় লাগে। আবার আইপির অপেক্ষা। সব মিলিয়ে এখন পঁচা মাল ঢুকছে। একটা ট্রাকের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পেঁয়াজই নষ্ট। এখনও এমন আরও দুই থেকে আড়াইশ পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক দশ দিন ধরে হিলি বন্দরে আটকে আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।


আমদানিকারকদের এই দাবি কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রবিন্দ্রশ্রী বড়ুয়া।


তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির অনুরোধ জানানো মানে এই নয় যে আমদানিকারকরা ট্রাক বোঝাই করতে শুরু করবেন।


বড়ুয়া বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আইপি ইস্যু করা হলেই ব্যবসায়ীরা এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারবেন। এরপর ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে। আমদারিকারকরা আমাদের কিছু অবহিত করেনি।


এবিষয়ে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থানীয় নিম্নবিত্ত মানুষ এই পঁচা পেঁয়াজগুলো সংগ্রহ করে আবার রাস্তার পাশে পাঁচ থেকে আট টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। আশেপাশের নিম্নমানের হোটেলগুলো রান্নার জন্য এই পঁচা পেঁয়াজগুলো কিনে নিচ্ছে। ফলে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পেরে ও কিনতে পেরে এই নিম্ন আয়ের মানুষগুলো দারুণ খুশি বলে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করেন।


অন্যদিকে দিনাজপুরের হিলিতে আংশিক নষ্ট পেঁয়াজগুলো পাইকারি বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মোকামগুলোয় ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২-৩৫ টাকা কেজিতে। খুচরা বাজারে তা ৪০-৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আমদানি শুরুর আগে ৯০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।


খাতুনগঞ্জের আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, ১৫ দিন আগে সরকার আইপি (আমদানি অনুমোদন) দিলে এমন ঝামেলা হতো না। এতদিন ট্রাকগুলো বর্ডারে আটকে ছিল। দেশে ঢুকতে ঢুকতে অর্ধেক মালই নষ্ট। ইন্ডিয়াতে থাকতেই নষ্ট হয়েছে। আংশিক পচন ধরা পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে ২৮ থেকে ৩২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান


অন্যদিকে ভালো পেয়াজগুলো বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৪৪ টাকায়। যা খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ৫০ টাকায় উঠে যাওয়ার কথা।


এদিকে খাতুনগঞ্জের স্থানীয় ভ্যান চালক ও রিকশাচালকদের পুরোপুরি নষ্ট পেঁয়াজগুলো সংগ্রহ করে ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এখনও বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। বন্দরের পথে আছে আরও অন্তত দুই থেকে তিনশ ট্রাক ভর্তি পেয়াজ।
এই নতুন পেঁয়াজগুলো মানে ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com