তারকাদের চোখে শ্রেষ্ঠ নারীর কথা
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:২৪
তারকাদের চোখে শ্রেষ্ঠ নারীর কথা
বিনোদন ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’। এ প্রতিপাদ্যে আজ ৮ মার্চ বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হচ্ছে নারী দিবস। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করা, নারীর কাজের স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য উদযাপনের উদ্দেশ্যে নানা আয়োজনে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় দিনটি। নারী দিবস নিয়ে তারকারা জানালেন তাদের চোখে শ্রেষ্ঠ নারীর কথা।


রুবাইয়াত হোসেন, চলচ্চিত্র নির্মাতা
অসাধারণ নারীর প্রসঙ্গ এলে সবার আগে চোখে ভেসে ওঠে আমার মায়ের কথা। আমার মা খাজা নার্গিস হোসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করেছিলেন, তবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন অনেক পরে। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেছি, তখন তিনি কর্মজীবনে এসেছেন। সে জন্য আমরা ছোটবেলায় মাকে পরিপূর্ণভাবে পেয়েছি। আর দশজন সাধারণ মায়ের মতো আমাকে বড় করেননি। সাধারণত মায়েরা নিজের মেয়ের সাজসজ্জা নিয়ে একটু বেশিই সচেতন থাকেন, বিয়ে নিয়েও চিন্তায় থাকেন। আমার মা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। শুধু বলেছেন, পড়াশোনা করে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাও। ছোটবেলায় খুব রাগ হতো, বড় হয়ে বুঝেছি মায়ের ওই উপদেশ বা পরামর্শই আমার জীবনে সুফল এনেছে। বাবা চলে গেলেন, তারপর মা-ই আমার সব। তিনি ভেঙে পড়েননি, আমাদের যেসব প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে এখনো তিনি প্রধান ব্যক্তি।


শোবিজের নারীদের মধ্যে দেশের বাইরের একজনের কথা বলতে চাই। আমি তাকে খুব পছন্দ করি, বিশ্বনন্দিত বেলজিয়ান নির্মাতা চান্তাল আকারম্যান। তার জীবনদর্শনে আমি ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত। তার ‘জেন দিলমান’ ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের জরিপে সর্বকালের সেরা ছবি। নির্মাণ ভাবনায় তিনি নারীদের বৈচিত্র্যময় করে তুলে ধরতেন। নারী মানেই গ্ল্যামার, নিছকই বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা নয়, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নারীকে নানা রূপে দেখিয়েছেন। সর্বশেষ ছবি ‘নো হোম মুভি’ বানিয়েছিলেন নিজের মায়ের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। এর কিছুদিন পর সে বছরই তিনি আত্মহত্যা করেন। শোনা যায়, মায়ের মৃত্যুর পর হতাশায় ভুগছিলেন।


তাসনিয়া ফারিণ, অভিনেত্রী
আমার জীবনে দেখা বেশ কয়েকজন অসাধারণ নারী রয়েছেন। যদি একজনের কথা বলতেই হয়, আমি বলব শিখা ম্যাডামের কথা। তিনি আমাদের হলি ক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ম্যাডাম। আমার কৈশোর থেকে বড় হওয়া ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই। আমার জীবনে ম্যাডামের প্রভাব অনেক। আমি মনে করি, আমার ভেতরে যে মূল্যবোধ গড়ে উঠেছে সেটা তার কাছ থেকেই এসেছে, তাকে দেখেই শিখেছি। আমাদের যে নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে তিনি বড় করে তুলেছেন সেটা পরবর্তী জীবনে সহায়ক হয়েছে। আমার সঙ্গে এখন আর তার কোনো যোগাযোগ নেই, আমার চোখে তিনি যে একজন সাধারণ নারী, সেটা কোনো দিনই তাকে বলা হয়নি। আজই বললাম, জানি না তিনি এটা পড়বেন কি না। তবে ম্যাডামের প্রতি সব সময়ই আমার শ্রদ্ধা থাকবে।


সাংস্কৃতিক জগতের মধ্যে কারো কথা বলতে হলে নুসরাত ইমরোজ তিশার কথা বলব। সাম্প্রতিক ঘটনাই যদি বলি, কিছুদিন আগেই ফারুকী ভাই গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন, তখন দেখেছি তিনি একা হাতে সব কিছু কিভাবে সামলেছেন। একদিকে ফারুকী ভাই পর্যবেক্ষণে, বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কথাবার্তা চলছে। এর মধ্যে ছোট ইলহানও অসুস্থ হলো, তিশা আপুর সব সামলে নিয়েছেন। নিজের শুটিং, ফারুকী ভাইয়ের আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশগ্রহণ বাতিল-সব নিজেই করেছেন। এই কঠিন সময়ে আমি এক অন্য তিশা আপুকে দেখেছি। আমরা তাকে একজন অসাধারণ অভিনেত্রী হিসেবে চিনি, পাশাপাশি তিনি একজন দায়িত্ববান মানুষ।


মাশা ইসলাম, সংগীতশিল্পী
শোবিজে আমার দেখা অসাধারণ নারী হলিউড অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ। অভিনেত্রী হিসেবে তার দক্ষতা ও অবস্থান অবশ্যই প্রশংসনীয়, তবে আমি মানুষ মেরিল স্ট্রিপের ভক্ত। মেরিল স্ট্রিপের অনমনীয় ভাব আমাকে মুগ্ধ করে, তিনি কারো অনুগ্রহ লাভ করে চলেন না। নিজের বুদ্ধিমত্তা, সাহস দিয়ে নিজেকে জয় করে নিয়েছেন। সত্যিকার অর্থেই তিনি একজন ‘আয়রন লেডি’। শোবিজের বাইরে নির্দিষ্ট কারো নাম বলব না, তবে অসাধারণ নারী তারাই যারা নিজের জায়গা থেকে সাহসী ও স্বাধীনচেতা পাশাপাশি কঠিন পরিস্থিতিতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারেন। যিনি সমাজের অন্য নারীর জন্য আদর্শ উদাহরণ হতে পারেন।


আজমেরী হক বাধন, অভিনেত্রী
আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি যেটা সেটা হলো নারীও একজন মানুষ। আমাদের সমাজ মেয়ে, নারী বলে তাদেরকে সবসময় আলাদা করে রাখে। যেহেতু আমিও একজন নারী তাই আমি বলবো তাদেরকে প্রাপ্য সম্মানটা দেওয়া হোক। আর নারী দিবস পালন করা নিয়ে আমার কোন বাঁধা নেই। শুধু একটা দিনই নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবো আর বাকি দিনগুলো অসম্মান করবো এমনটা যেন না হয়। নারীদের প্রতি সম্মানের বিষয়টা যেন একদিনের হয়ে না যায়, প্রতিটা দিনই যেন একটা নারী তার সম্মানটা পায়। আমাদের মা, মেয়েরা যেন সবসময় নিরাপদ থাকে, সবখানে সম্মানটুকু পায় এটাই হোক সবার চাওয়া।


সাবিলা নূর, অভিনেত্রী
সত্যি বলতে আমার কাছে মনে হয়,নারী দিবস পালন করতে কোন উপলক্ষ বা বিশেষ দিনের প্রয়োজন পড়ে না। আমাদের মায়েরা কিন্তু কোনো বিশেষ উপলক্ষে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকে না। আমাদের বোনরা কিন্তু তাদের ছোট ভাই-বোনকে একটা গিফট কিনে দেওয়ার জন্য শুধু কোনো বিশেষ দিনেই পাবলিক বাসে চড়ে টিউশনি করতে যায় না। তাই আমার কাছে মনে হয় প্রতিটা দিনই নারী দিবস। এর জন্য আলাদা কোন দিবস এর প্রয়োজন নেই। আর একটা বিশেষ ধন্যবাদ সেইসব পুরুষদের যারা তাদের জীবনসঙ্গীকে প্রতিদিন ভালো কিছু করতে উৎসাহ দেয়।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com