শিশু কিশোরদের জন্য চলচ্চিত্র খুব একটা হয়না দেশে। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিষয় নিয়ে হয় আরও কম। ছোটরা যে ছবি দেখার ভিতর দিয়ে সামাজিক ভাবে জাগ্রত, এবং ভবিষ্যতের দায়িত্ববান নাগরিক হয়ে উঠতে পারে, সেই ভাবনাটা আমাদের চলচ্চিত্র ভুবনে নেই। হঠাৎ হঠাৎ একেকটি ছবি আসে, যেমন এখন এসেছে ‘মাইক’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ভিত্তি ধরে সরকারি অনুদানে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাইক’। এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে পারবে।
ছবিটার শুরু থেকে দেখতে থাকলে কিছুটা ধীর গতির মনে হবে। কিন্তু ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী বাংলাদেশ যে আরও একবার ১৯৭১-এর মতো অবরুদ্ধ ছিল, স্বাধীনতা বিরোধীদের বাড়বাড়ন্ত ছিল, তখনকার সরকারি প্রশাসন যে রূঢ় আচরণ করছিল মুক্তিযোব্ধাদের সাথে, ১৯৭১-এ রাজাকারদের সহায়তায় স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ধারা যে ফিরে এসেছিল - সেগুলো উঠেছে একটি গ্রামীণ উপাখ্যান-এ। বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণই নিষিদ্ধ ছিল যে সময়টায় তখন মুক্তিযোদ্ধা দাদার সহায়তায় এক শহুরে কিশোর দাদীর মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে গ্রামে গিয়ে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে স্থানীয় কিশোরদের সাথে এবং তারাই বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে আনে রাজাকার শাসিত সেই গ্রামে। তারা মাইক চায় বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ বাজাতে, সেটা পায়নি দোকানীর কাছে থেকে। অবশেষে রাতের অন্ধকারের মাইক চুরি এবং ৭ই মার্চের দিন সেই ভরাট কন্ঠ গ্রামের প্রতিটি ঘরকে স্পর্শ করে, স্পর্শ করে সাধারণ মানুষকে। তাই রাজাকার জাফর ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরোধিতা পরাজিত হয় মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধে। একাত্তরে যে কন্ঠ মানুষকে রণাঙ্গনে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে, এই ভাষণ তেমনিভাবে আবার অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসে মানুষকে। ছবিতে ব্যবহৃত ‘একটা আঙুল’ শিরোনামের গানটি ৭ মার্চ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর একটি তর্জনীকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে।
ছোটরা এখন যে সময়টায় বড় হচ্ছে সে সময়টা যাতে তারা চিনতে পারে অতীতের প্রেক্ষাপট থেকে সে জন্যেই এই ছবি। ইতিহাস চেনানোর কাজটা সহজ নয়, কিন্তু এই বয়সেই সেটা চেনাতে হয়।
স্বাভাবিকভাবে চমৎকার অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, নাদের চৌধুরী, তানভিন সুইটি ও ফেরদৌস। দাইয়ান, সানজিদ সহ শিশুশিল্পীরা চমৎকার অভিনয় করেছে।
সিনেমায় ড্রোন ফুটেজগুলো সুন্দর, সেই সময়টাকে তুলে আনবার জন্য লোকেশন এবং কস্টিউমও ঠিক ছিল। গানগুলোও সুন্দর।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ মানুষের চেতনা, মননে যে গভীর আলোড়ন এবং সে সময় পাকিস্তানি ও রাজাকারদের অত্যাচার সমাজে যে ভয়াবহতা সৃষ্টি করেছিল সেটি যেমন তুলে আনতে হবে তেমনি করে ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধা খুনের যে উৎসব চলছিল, যার জের আমরা টেনে চলেছি তাকেও বিভিন্ন মাধ্যমে তুলে আনতে হবে। চলচ্চিত্র তার অন্যতম মাধ্যম।
তরুণ লেখক, কলামিস্ট ও সংগঠক এফ এম শাহীনের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে পরিচালনা করছেন এফ এম শাহীন ও হাসান জাফরুল বিপুল। তাদের অভিনন্দন জানাই এই উদ্যমী উদ্যোগের জন্য।
লেখক : সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, গ্লোবাল টেলিভিশন।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]