ভিকারুননিসায় ‘মাইক’ সিনেমার প্রচারণা উৎসব
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১৯:১৬
ভিকারুননিসায় ‘মাইক’ সিনেমার প্রচারণা উৎসব
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে নির্মিত প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘মাইক’ সারাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে আগামী ১১ আগস্ট। এরই মধ্যে সারা ফেলেছে সিনেমাটির পোস্টার, ট্রেলার, টিজার ও গান। সরকারি অনুদানে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রটির প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্মাতা, অভিনয় শিল্পী ও কলাকুশলীগণ। গত ৩ আগস্ট রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রচারণার মধ্য দিয়ে সিনেমাটির বর্ণিল প্রচার শুরু হয়।



৯ আগস্ট, বুধবার রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘মাইক’-এর প্রচারণা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে নেন মাইকের অভিনয় শিল্পী চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, অভিনেত্রী তানভীন সুইটি, নাদের চৌধুরীসহ কলাকুশলীগণ।



উৎসবে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, এমন একটি মাসে এমন সময়ে আমরা মাইক সিনেমা নিয়ে এসেছি। মাইক সিনেমার গল্পের সাথে এ মাসের রয়েছে গভীর সর্ম্পক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের উপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। যে সময়ের প্রেক্ষাপটে (পঁচাত্তর পরবর্তী) সিনেমাটি তৈরি হয়েছে, যেটি ছিল নিষিদ্ধ সময়। আমাদের ও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম জানতাই না যে বঙ্গবন্ধু নামে কেউ আছেন। মাঝেমধ্যে বাবার মুখে শুনতাম শেখ সাহেব এটা করেছে, ওটা করেছে। তোমরা অনেক লাকি যে দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছ। তোমরা একটা সুন্দরে সময় বাংলাদেশে জন্মেছ। তোমরা আরও সুন্দর সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে মাইক সিনেমায়। আমি চাইব, তোমরা তোমাদের পরিবার নিয়ে একসাথে হলে গিয়ে মাইক সিনেমা দেখবে।



অভিনেত্রী তানভীন সুইটি বলেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য। আমি যখন ভিতরে ঢুকছিলাম, তখনি অনেক ছাত্রীরা আমাকে বলছিল, আপু কেমন আছেন? ভেতরে ঢুকে দেখি তোমরা সবাই আমাদের অপেক্ষায় বসে আছ। বিষয়টি আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছি, যার নাম ‘মাইক’। আমাদের পরের প্রজন্ম আপনারা যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করবেন- সে জায়গা থেকে এই সিনেমাটি দেখা জরুরি। কারণ আমাদের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। সিনেমাটিতে ’৭৫ পরবর্তী সময়ের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। আমি পঁচাত্তর পরবর্তীতে যখন স্কুলে ভর্তি হয়েছি- তখন স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস, যুদ্ধে কি হয়েছিল তা ছিল না। পরবর্তীতে আমরা আস্তে আস্তে পরিবারের কাছে এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে যেনেছি। সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের পরের প্রজন্মের কাছে এই অজানা ঘটনাগুলো ‘মাইক’ সিনেমায় তুলে এনেছি। মূলত ৭ই মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে। যে ভাষণ শুনে লাখো বাঙালি যুদ্ধে করে জয় ছিনিয়ে এনেছিল। তাই সবার প্রতি আমার আহ্বান, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়ে মাইক সিনেমাটি দেখবেন।



অভিনেতা নাদের চৌধুরী বলেন, এই ছবিতে ছোটরা অসাধারণ অভিনয় করেছে। মাইক ছবিতে সবচেয়ে খারাপ চরিত্রটি আমি করেছি। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে ছবিটি নির্মিত হয়েছে। এ ভাষণটি একদল প্রচার করতে দিবে না, অন্যদিকে সবাই বিশেষ করে বাচ্চারা ভাষণটি প্রচার করার জন্য নানা ধরনের পরিকল্পনা করে। তারা বিভিন্ন কায়দায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে প্রচার করে সাধারণ মানুষের কাছে মাইকের মাধ্যমে। তখন ইন্টারনেট বা এত চ্যানেল ছিল না। মাইক সিনেমার মাধ্যমে সেসব নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। শিশুদের দুঃসাহসিক অভিযান এই শিশুতোষ সিনেমায় ফুটে উঠেছে। আগামী ১১ আগস্ট সিনেমাটি মুক্তি পাবে। আমরা আশা করব তোমরা সবাই পরিবারের সকলকে নিয়ে সিনেমাটি দেখবে এবং অন্যদের দেখতে উৎসাহ যোগাবে।


শিশু শিল্পী মীর্জা ত্বাবীব ওয়াসিত বলেন, আমাদের মাইক সিনেমাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে করা হয়েছে। সিনেমা করার আগে আমি জানতাম না যে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সিনেমাটা করে আমার এত ভালো লাগছিল যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এখানে যারা আছে আমি সবাইকে অনুরোধ করব সবাই হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখেবেন।


অভিনেত্রী সংগীতা চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ ২২ বছর আমি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত। পাশাপাশি অভিনয়ও করি। আজ তোমাদের মত মানুষের সামনে আমরা এসেছি মাইক চলচ্চিত্রটির নির্মাণ ও মূল উপজীব্য তুলে ধরতে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘মাইক’। ভীষণ যত্ন করে সিনেমাটি তৈরি করেছেন এফ এম শাহিন। সিনেমার প্রতিটি দৃশ্য এমন যে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। আমি খুবই গর্বিত এমন একটি চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়ে। সবাইকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র মাইক দেখার আমন্ত্রণ রইল।


লেখক, কলামিস্ট ও সংগঠক এফ এম শাহীনের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে পরিচালনা করছেন এফ এম শাহীন ও হাসান জাফরুল বিপুল। গত ২৯ মে চলচ্চিত্রটি আনকাট সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছিল। ‘মাইক’ চলচ্চিত্রটি দেখে সেন্সরবোর্ডের সদস্যরা ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে এ ধরনের সিনেমা নির্মাণকে তারা সাধুবাদ জানিয়েছেন। গত ২৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে চলচ্চিত্রটির বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।



‘মাইক’ চলচ্চিত্রের গল্পকার, প্রযোজক ও পরিচালক এফ এম শাহীন বলেন, মাইক চলচ্চিত্রটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে নির্মিত প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র। এই ভাষণকে জাতিসংঘের ইউনেস্কো পৃথিবীর অন্যতম ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাকে উপজীব্য করে আশির দশকের প্রেক্ষাপটে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ পৌঁছে দিতে আমাদের এ নির্মাণ।


তিনি বলেন, আমরা ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ যে মাইক চলচ্চিত্রটি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পেরেছি। বিশেষ করে এই স্কুলের শিক্ষিকা সঙ্গীতা চৌধুরীকে কৃতজ্ঞতা জানাই এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজনে সহযোগিতা করবার জন্য। মাইক চলচ্চিত্রটি আগামী ১১ আগস্ট সারাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে। সবাইকে দেখবার অনুরোধ জানাই।



ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা সঙ্গীতা বলেন, আজ আমরা আগস্ট মাসে একটি মহান দিনে মুখোমুখি হয়েছি। এ মাস শোকের মাস। এ মাসে আমরা সবাই কালো ব্যাচ ধারণ করি। আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে নিয়ে আমাদের এ সিনেমা। এখন তোমরা এ ভাষণ পাঠ্যপুস্তকে পড়ছ, টেলিভিশনে দেখছ। আমরা কিন্তু পাইনি। মাইক সিনেমাটিতে আশির দশকের সময়ে নানান চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যে সময় ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। আশাকরি তোমরা বঙ্গবন্ধুকে ভালোভাবে জানবে, যাতে সারাজীবন তোমরা তা সবাইকে জানাতে পারো- এটাই তোমাদের কাছে আমার প্রত্যাশা।


‘মাইক’ সিনেমায় আরো অভিনয় করেছেন অভিনেতা তারিক আনাম খান, ঝুনা চৌধুরী, জয়িতা মহলানবিশ, সংগীতা চৌধুরী, রহিম সুমন, ইকবাল হোসাইন, শিশুশিল্পী সানজিদ রহমান খান, আলী আবদুল্লাহ দাইয়ান ভূঁইয়া, খোন্দকার মেঘদূত জলিল, মীর্জা ত্বাবীব ওয়াসিত প্রমুখ।


অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিদের মধ্য থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।



উৎসবে ‘মাইক’ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালক লাবিক কামাল গৌরব ও তার দল মাইক সিনেমার গান পরিবেশন করেন।


বিবার্তা/রিয়াদ/রোমেল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com