শিরোনাম
ইফতারের সময় প্রাণ ফিরে পায় ফাঁকা জবি ক্যাম্পাস!
প্রকাশ : ২৭ মে ২০১৯, ১৭:৩৮
ইফতারের সময় প্রাণ ফিরে পায় ফাঁকা জবি ক্যাম্পাস!
জবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

১১ একরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মূল ফটক দিয়ে হাতে বড় একটা ব্যাগ নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছিলেন সায়েম হোসেন। জবি ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে সায়েমের সাথে দেখা। পূর্ব পরিচয় থাকায় কাছে এসে শুভেচ্ছা বিনিময় হলো। ইফতারের দাওয়াত দিতেও ভুলল না, ‘ভাই, চকবাজার গিয়ে ইফতারি নিয়ে আসলাম।আজ আমাদের সাথে ইফতার করবেন।’ ইফতারের তখন আরো ঘন্টাখানেক বাকি।


কারুকার্যে ভরা প্রশাসনিক ভবনটি তার আভিজাত্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কৃষ্ণচূড়ার রঙে ছেয়ে গেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর, শহীদ মিনারের সম্মুখে, রফিক ভবনের পাশে ডালপালা ছড়ানো বিশাল আকৃতির কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো তাদের সৌন্দর্যের জানান দিচ্ছে। ঈদের বন্ধে যেন অনেকটাই ফাকা ক্যাম্পাস জবি। তবে এই ফাকা ভাবটা আড়মোড়া দিয়ে জেগে উঠে ইফতারের ঠিক আগের মুহূর্তে।


ক্যাম্পাসের আশেপাশে থাকা শিক্ষার্থীরা তো বটেই, দূরে থেকেও অনেকেই আসে বন্ধুদের সাথে পুরান ঢাকার ইফতারের স্বাদ নিতে, প্রিয় ক্যাম্পাসে ইফতার করতে। ইফতারের ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই ক্যাম্পাসজুড়ে দেখা যায় গুচ্ছ গুচ্ছ হয়ে বসে থাকা ছাত্রছাত্রীদের দল। গল্পের ফাঁকেফাঁকে ইফতার আয়োজনে ব্যস্ত তারা। কেউ বিভিন্ন রকমের ফল ধুয়ে আনছে, কয়েকজন শসা, গাজর, ফলমূল কাটাকাটি করছে, কেউবা আবার লেবু চিপে শরবত তৈরিতে ব্যস্ত, আরেক জন সবার বসার জন্য পেপার বিছিয়ে দিচ্ছে।


দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ছেলেমেয়েরা পরিবার থেকে দূরে থেকেও যেন আরেক নতুন পরিবার গড়ে তুলেছে এখানে।


রোজার মাসে ইফতারই যেন ক্যাম্পাসে আড্ডার মূল উপলক্ষ। ক্যাম্পাসের শান্ত চত্বর, ক্যাফেটেরিয়া, নতুন ভবনের নিচে, শহীদ মিনার জুড়ে, কাঁঠাল তলায় প্রাণের আড্ডা জমে ওঠেছে রমজানের ইফতারকে ঘিরে।


মনোবিজ্ঞান বিভাগের ইভা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই প্রতিবছর আমরা বন্ধুরা একসঙ্গে ইফতার করি। সবাই মিলে গল্প করতে করতে ইফতারের মজাই আলাদা। রোজার ক্লান্তির কথা একদমই মনে থাকে না।’ তবে, কেউ রোজা রাখুক বা না রাখুক ইফতারে অংশগ্রহণ নিয়ে উৎসাহ সবারই সমান। আর এমন প্রায় সব আড্ডাতেই পাওয়া যাবে অন্যান্য ধর্মের ছাত্রছাত্রীদেরও।


ক্যাম্পাসে ইফতারের আরেকটা দারুণ দিক হলো প্রতিদিনের আয়োজনের বাইরেও মাঝেমধ্যেই একটু ঘটা করে ‘ইফতার পার্টি’র আয়োজন। আর এই ইফতার আয়োজনগুলো শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে বিশাল ‘গেট টুগেদারে’। ক্যাম্পাসে বহুদিনের আড্ডার বড় ভাইবোনেরাও চলে আসেন ফেলে যাওয়া দিনগুলো ফিরে পাওয়ার জন্য। এভাবে বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসে মেলেন অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও। আর এমন আড্ডা মানেই তো নানা ঠাট্টা-তামাশা আর বাঁধন হারা হাসির ফোয়ারা।


এছাড়া পুরো রমজান মাসজুড়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, জেলা ও অঞ্চলভিত্তিক সংগঠন এবং বিভিন্ন বিভাগের পক্ষ থেকে ইফতারের আয়োজন তো আছেই। এভাবে পুরো রমজান মাসেই একের পর এক সংগঠনের ইফতার আয়োজন চলতেই থাকে।


পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একত্রে ইফতার করতে না পারার দুঃখ অনেকটাই ঘুচে যায় বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করে। এমনটাই জানালেন উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী।


মেসে কিংবা ক্যাম্পাসে যেখানেই ইফতার আয়োজন হোক না কেন, ইফতারির খাবারদাবার কিন্তু আহামরি কিছু নয়। ছোলা, মুড়ি, চপ, বেগুনি, বুন্দিয়া, জিলাপি, খেজুর প্রভৃতি গতানুগতিক খাবারই থাকে বেশির ভাগ সময়েই। কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় আড্ডায় এসব খাবারই যেন অমৃত মনে হয়।


ইফাতারির মুহূর্তে আড্ডার জায়গাগুলো মুখরিত হয়ে উঠেছে 'নতুন পরিবারগুলোর' ইফতার আনন্দে। কৃষ্ণচূড়ার রঙ আর শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধনের সৌন্দর্য যেন একাকার হয়ে উঠে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট্ট ক্যাম্পাসজুড়ে।


বিবার্তা/আদনান/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com