শিরোনাম
থমকে গেছে পা হারানো সেই জবি ছাত্রীর জীবন
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:৪৯
থমকে গেছে পা হারানো সেই জবি ছাত্রীর জীবন
দুই পা হারানো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবিনা আখতার
জবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দুই পা হারানো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবিনা আখতারের জীবন চাকা যেন থেমে গেছে। কৃত্রিম পা লাগানো হলেও তার ওজন বেশি, তাই হাঁটতে পারছেন না। তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক তাকে চাকরি দেয়ার যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তারও বাস্তবায়ন হয়নি।


রুবিনার স্বপ্ন ছিল বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরি নেবেন। কিন্তু এখন পড়ালেখাই বন্ধ। কারণ, তার শারীরিক যে অবস্থা, তাতে একা ঢাকায় থাকা সম্ভব নয়। তাই বাড়িতে চলে গেছেন। এখন তার পড়াশোনা করাই অনিশ্চিত হয়েছে।


রুবিনার বাড়ি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ থানার শান্তিনগর গ্রামে। পিতৃহারা পরিবারে দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রুবিনা মেজ। বড়বোন প্রতিবন্ধী, মায়ের সঙ্গে বাড়িতেই থাকেন। ছোট ভাই রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।


স্কুলজীবন থেকেই রুবিনা উপবৃত্তি আর টিউশনির টাকায় লেখাপড়া করতেন। স্থানীয় শান্তিনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কালীগঞ্জ মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করেন। এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পান। কোচিং না করেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও টেকেন। কিন্তু এক বছর সময় নষ্ট হবে ভেবে পাল্টাতে চাননি।


স্বপ্ন দেখেছিলেন চাকরি করে ছোট ভাইকে উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তুলবেন। কিন্তু গত বছরের ২৮ জানুয়ারি কমলাপুর রেল স্টেশনে দুই পা হারিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে দরিদ্র পরিবারের ভবিষ্যৎ।


সেদিন টিউশনি শেষ করে ঢাকা থেকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য কমলাপুর স্টেশন যান রুবিনা। ছয় নম্বর প্লাটফর্ম থেকে পাঁচ নম্বর প্লাটফর্মে যেতে রেললাইন পার হতে গেলে ইঞ্জিনে কাটা পড়ে দুই পা।


রুবিনা ট্রেন দুর্ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত দশ লাখ টাকার ওপরে ব্যয় হয়েছে। সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং বিভিন্ন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় এই টাকা উঠেছে। তবে জীবনের চাকা আবার সচল করতে আরেকটু সহযোগিতা প্রয়োজন।


দুর্ঘটনার পর সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তার চিকিৎসার দাবি জানায়। আর সে সময়কার রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। পাশাপাশি সুস্থ হলে রেল মন্ত্রণায়ে চাকরির আশ্বাসও দেন।


এর ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৫ এপ্রিল রুবিনাকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান মন্ত্রী। সে সময় কৃত্রিম পা লাগানোর জন্য নগদ আড়াই লাখ টাকা তুলে দেন। এ ছাড়াও রুবিনার পরিবারকে আরও ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়।


দুই দিন পর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়। সেখানে চার থেকে পাঁচ মাস হাঁটা চলার প্রশিক্ষণও দেয়া হয় রুবিনাকে।


এক বছর চিকিৎসা নেয়ার পর রুবিনা এখন তার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, ‘এখন মোটামুটি সুস্থতা অনুভব করছি। তবে এখনো পুরোপুরি হাঁটা-চলা করতে পারি না। আমাকে যে কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে সেগুলো অনেক ভারী। যার জন্য চলাফেরা করাটা অনেকটাই কঠিন। হালকা পা লাগালে এতোদিন ভালোভাবে হাঁটতে পারতাম। কৃত্রিম পা লাগানোর সময় আমি তাদের বলেছিলাম হালকা পা লাগানোর জন্য। কিন্তু তারা টাকার জন্য কমদামী পা লাগিয়েছে।’


রুবিনা আরো বলেন, ‘সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক সুস্থ হওয়ার পর রেল মন্ত্রণালয়ে চাকরির আশ্বাস দিয়েছিলেন। চাকরিটা হলে আমি আবার ঢাকায় গিয়ে লেখাপড়াটা শেষ করতে পারতাম। কিন্তু তিনি আর মন্ত্রী না থাকায় চাকরি পেতে বিলম্ব হচ্ছে।’


চাকরি না পেলে পড়ালেখাটাও আর শেষ করা সম্ভব হবে না বলে শঙ্কিত রুবিনা। বলেন, ‘কারণ, এখন ঢাকায় আমার পক্ষে একা চলাচল করা সম্ভব না। আমার চলাফেরার জন্য সহযোগী হিসেবে একজন লোক দরকার এবং আলাদা বাসারও দরকার। আর এগুলোর ব্যবস্থা করতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন। যা আমার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।


বিবার্তা/আদনান/আকবর/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com