কর্মচারীদের ধর্মঘটে শেবাচিম হাসপাতালে অচলবস্থা
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৮:৩১
কর্মচারীদের ধর্মঘটে শেবাচিম হাসপাতালে অচলবস্থা
বরিশাল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কর্মচারীদের আন্দোলনে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবায় অচলবস্থা চলছে। জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে বরিশালে শিক্ষার্থী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেন চিকিৎসকসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের ওপর শিক্ষার্থীরা হামলা করেছেন- এমন অভিযোগ তুলে সকল কর্মচারী অঘোষিত কর্মবিরতি করছেন। তারা বেলা ১০টার পর থেকে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ করছেন। এতে রোগীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।


এদিকে কর্মচারীদের তোপের মুখে ৩ জন অনশনকারীসহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আত্মগোপন করেছেন। শিক্ষার্থী সন্দেহে কয়েকজনকে মারধর করা হয়। বৃহস্পতিবার নগরের কোথাও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তৎপরতা ছিলো না।


অপরদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। একপক্ষ বুধবার দিবাগত গভীর রাতে আন্দোলন একমাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন। অপরদিকে আন্দোলনের মূল সংগঠক মহিউদ্দিন রণি জানিয়েছেন, তারা আন্দোলন স্থগিত করেননি।


স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে ৩ দফার আন্দোলন ছাত্র-জনতার ব্যানারে শুরু হয় গত ২৮ জুলাই। গত বৃহস্পতিবার (৭ আগষ্ট) থেকে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা নগরের নথূল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এতে বিভাগের ছয় জেলার সঙ্গে রাজাধনীর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সোমবাার থেকে দুই শিক্ষার্থীসহ ৩ জন আন্দোলনের সমর্থনে শেবাচিম হাসপাতালের প্রধান ফটকে আমরন অনশন শুরু করে। বুধবার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আবু জাফর বুধবার বরিশালে গিয়ে অনশন ভাঙ্গা ও আন্দোলন বন্ধের আহ্বান জানালে শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখান করেন। মতবিনিময় সভায় মহাপরিচালক আন্দোলন বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। সভাতে চিকিৎসক নেতারাও কঠোর মনোভাব দেখান।


বৃহস্পতিবার সকালেই পরিস্থিতি বদলে যায়। চিকিৎসক-নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেলা ১১টায় হাসপাতাল চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তার আগে সকাল ১০টার মধ্যে কর্মচারীরা বিক্ষুব্দ হয়ে উঠে।


টেকনোলজিষ্ট অ্যাসোশিয়েশনের জেলা সভাপতি হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আমরাও হাসপাতালের সংস্কার চাই। এটাতে সময় লাগবে। যারা আন্দোলন করছে তারা ছাত্র নয়, চাঁদাবাজ। তাদের উস্কানীতে রোগীদের স্বজনরাও কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কোনো কর্মচারী কাজে ফিরবেন না।


শিক্ষানবিস চিকিৎসক সৌমিক আহমেদ জানান, তারাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সন্ধার পর তারাও ধর্মঘটের মতো কঠিন কর্মসূচিতে যেতে পারেন।


শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মশিউল মুনীম বলেন, কর্মচারীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। চিকিৎসক-নার্সরা সকলে দায়িত্বে আছেন।


উল্লেখ্য, জাতীয়ভাবে স্বাস্থখাত সংস্কারের দাবীতে গত ২৭ জুলাই থেকে বরিশালে আন্দোলন শুরু হয়েছে। তাদের দাবিগুলো হলো- সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে অবকাঠামোতগত উন্নয়ন, নাগরিকদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ দেশের সব হাসপাতালে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক চিকিৎসকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করণ। ডিজিটাল অটোমেশন ও স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক টাস্কফোর্স গঠণ করতে হবে। এসব সমস্যাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের জন্য স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনকে জনগণের ভোগান্তির বিষয়শুনে তদন্ত সাপেক্ষে পুনরায় সুপারিশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com