হিজড়া জনগোষ্ঠীর পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দাবিতে আইনি নোটিশ
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৩, ১৩:৩৪
হিজড়া জনগোষ্ঠীর পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দাবিতে আইনি নোটিশ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সমাজের অবহেলিত হিজড়া জনগোষ্ঠীকে মাসিক ভাতা, পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সুবিধা প্রদানের দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।


৫ জুলাই, বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এ নোটিশ পাঠান।


নোটিশে বলা হয়েছে, হিজড়া জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠী। তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, সমাজ থেকে অবহেলিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্যের শিকার।


বাংলাদেশ সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের যেকোনও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার বিশেষ বিধান প্রণয়ন করতে পারবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে সরকার এই চরম অবহেলিত হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালে হিজড়াদের উন্নয়নে নীতিমালা করেছে কিন্তু সেটা কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ এবং হিজড়াদের কল্যাণে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে হিজরা জনগোষ্ঠী মানবেতর জীবন যাপন করছে এবং বেঁচে থাকার জন্য মানুষের কাছে হাত পাততে বাধ্য হচ্ছে।


বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকার ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের সব নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং সংবিধানের মৌলিক অধিকার ২৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকদের মধ্যে কোনও ধরনের বৈষম্য করা যাবে না।


বাংলাদেশের হিজরা জনগোষ্ঠী এ দেশের নাগরিক এবং সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের কাছ থেকে সমান সুযোগ-সুবিধা লাভের অধিকারী। কিন্তু সরকার হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে হিজরা জনগোষ্ঠী মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে এবং সংবিধানের মৌলিক অধিকার ৩২ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত হচ্ছে।


জন্মের পর থেকে হিজড়া হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর থেকে তারা পরিবার থেকেই বঞ্চনার শিকার হন। একসময় পরিবার থেকে এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তারা। এ ছাড়া শারীরিক পার্থক্যের কারণে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা করতে পারেন না। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় বঞ্চনার কারণে তারা স্বাভাবিক কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে রাষ্ট্র কর্তৃক বৈষম্যের শিকার হয়ে এই জনগোষ্ঠী অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করে যুক্ত করা হয় ওই নোটিশে।


সরকার দেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে মাসিক নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে। যেমন দেশের বয়স্ক নাগরিকদের জন্য বয়স্ক ভাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক ভাতা, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন খাদ্যসহায়তা ইত্যাদি। কিন্তু হিজড়া জনগোষ্ঠী এসব থেকে বঞ্চিত হয়ে সবচেয়ে অবহেলিত আছে।


তাই দেশের প্রত্যেক হিজড়াকে মাসিক ভাতা দিতে হবে, তাদের জন্য পৃথক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। এ ছাড়া হিজড়াদের রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী হিজড়াদের জন্য সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।


আইনি নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে এবং হিজড়াদের কল্যাণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়নে সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুযায়ী সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে নোটিশে।


বিবার্তা/রাসেল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com