aপ্রতিষ্ঠার ৫৬ বছরে পা রেখেছে ছাত্র সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি তিতুমীর কলেজ। ১৯৬৮ সালের ৭ মে শুরু হওয়া এই বিদ্যাপীঠের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস।
বর্তমান সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহমেদ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন, গীতিকার ও সাংবাদিক রবিউল ইসলাম জীবন, অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ, হাসান মাসুদ, জিয়াউল হক পলাশ, শবনম বুবলীসহ অসংখ্য কৃতি শিক্ষার্থীদের চারণভূমি ছিল ৫৫ বছর বয়সী সরকারি তিতুমীর কলেজ।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান জগন্নাথ কলেজের ছাত্র আন্দোলনকে নির্মূল করার জন্য মহাখালীতে অবস্থিত ডিআইটি খাদ্যগুদাম হিসেবে পরিচিত ভবনে জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রি শাখা স্থানান্তর করেন। এর নামকরণ করা হয় জিন্নাহ কলেজ।
১১ একরের সুবিস্তীর্ণ জায়গায় প্রায় ৬০ হাজার বিদ্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত এই বিদ্যাপীঠ।
কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকাকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বিভাগ চালু ছিল। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পরও আগের সব কার্যক্রম চালু রয়েছে। এখন বিজ্ঞান অনুষদ, বাণিজ্য অনুষদ এবং কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভিন্ন বিভাগ চালু রয়েছে। ‘জ্ঞানই শক্তি’ নীতিবাক্য ধারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষাকার্যক্রম চালু রয়েছে। কিন্তু একসময় এই কলেজটিতে শুধু উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ক্লাস নেওয়া হতো। পরে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান রেডিও-টেলিভিশনে এক ভাষণে জাতীয় পরিষদ স্থগিত ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে জিন্নাহ কলেজ শাখার ছাত্র সংসদের প্রথম সহ সভাপতি (ভিপি) সিরাজউদ্দৌলার নেতৃত্বে টিপু মুনশি ও শাহাবুদ্দিনসহ তৎকালীন কয়েকজন ছাত্রনেতা প্রতিক্রিয়া হিসেবে জিন্নাহ কলেজের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলেন। তখন আনিসুজ্জামান খোকন (জিন্নাহ কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক) জিন্নাহ কলেজের নাম ‘তিতুমীর কলেজ’ প্রস্তাব করেন। পরে ২ মার্চ ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় জড়ো হলে সেখানে তৎকালীন ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রবের মধ্যস্থতায় জিন্নাহ কলেজের নাম ‘তিতুমীর কলেজ’ হিসেবে চূড়ান্ত হয়। ওই রাতেই ‘তিতুমীর কলেজ’ নামকরণের সাইনবোর্ড লেখা হয় এবং দেয়ালে টানিয়ে দেওয়া হয়। এলাকার কিছু যুবকও কলেজের নাম ‘তিতুমীর’ করার ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
এই কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আবাসিক ছাত্রাবাসের সুবিধাও, যদিও তা প্রয়োজন এর তুলনায় অপ্রতুল। নতুন-পুরোনো মিলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক পাঁচটি হল রয়েছে– আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাস, সুফিয়া কামাল ছাত্রী নিবাস, সিরাজ ছাত্রী নিবাস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল।
শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজের রয়েছে সম্পুর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এক সমৃদ্ধ পরিবহন পুল। পুরো ঢাকা শহর ও এর আশেপাশের জেলা যেমন নরসিংদী, গাজীপুর বা নারায়ণগঞ্জের জন্য বিআরটিসি লাল বাস, সম্পর্ক, অগ্নিবীণা, সোনার তরী, সাদা বাস, চলন্তিকা, সৌহার্দ্য, মতিউর রহমান, ও অনিন্দ্য বাস রয়েছে।
বর্তমানে কলেজটির অধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক ফেরদৌস আরা বেগম এবং উপাধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন দায়িত্ব পালন করছেন। যিনি এই কলেজেরই উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
বিবার্তা/গালিব/নিলয়
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]