
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, শেখ কামাল ছিলেন বহু প্রতিভার অধিকারী একজন মানুষ। তিনি ছিলেন সাংস্কৃতিক জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ছিলেন সাধারণ জীবনযাপনে অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব। তার দর্শন ছিলো সিম্পল লিভিং বাট হাই থিংকিং।’
শুক্রবার (৫ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে ‘শেখ কামাল: বহুমাত্রিক অনন্য প্রতিভাবান সংগঠক’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য।
উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, শেখ কামাল সরল জীবনে থেকে উঁচুমানের চিন্তা করতেন। তার মধ্যে ছিল অসাধারণ দেশপ্রেম। সেই তরুণকে ১৫ আগস্টে প্রথম হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ধসে পড়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ক্রীড়া জগতের অভিভাবক প্রিয় শেখ কামাল। কিন্তু হত্যাকারীরা জানতো না-গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যে মহানায়কের জন্ম হয়েছে এক রাতে তা স্তব্ধ করা যায় না। হত্যাকারীরা জানতো না-১৫ আগস্ট জাতির পিতার শুধুমাত্র শারীরিক প্রস্থান ঘটেছে, রাজনৈতিক নয়। হত্যাকারীরা জানতো না বঙ্গবন্ধুর পুনর্জাগরণ কোন পথে হবে। তিনি আবার কোন পথে আসবেন। তিনি এসেছেন। তিনি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন বারবার, বিভিন্ন রূপে। বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য বা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক নয়, তিনি সারাবিশ্বের জন্য সবসময় প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধু বলেছেন- বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।
উপাচার্য আরো বলেন, আমরা যে কোনো একটি হত্যাকাণ্ডে প্রতিক্রিয়া দেখাই। বিমূর্ষ হই। ক্ষুব্ধ হই। সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু একটি কালো রাতে পিতা, মা, ভ্রাতা, শিশু সন্তান, গর্ভবতী নারীসহ সকলকে নিষ্ঠুরভাবে একের পর এক হত্যা করা হয়েছে। মূলত এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে লাল-সবুজের পতাকাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে সংবিধানের চার মূলনীতিকে। হত্যা করা হয়েছে ২৬ বছরের টগবগে যুবক শেখ কামালকে। শেখ কামালের সবচেয়ে বড় পরিচয় বঙ্গবন্ধুর দেয়া সংবিধানের চার মূলনীতিকে ধারণ করে এমনভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন যাতে করে পিতার অবর্তমানে বাংলাদেশ যাতে করে নেতৃত্বহীন না হয়, সংস্কৃতি চর্চার অভাবে না পড়ে। ক্রীড়া চর্চার অভাবে না পড়ে। সেই আদলে পিতার গড়া বাংলাদেশকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রতিটি কাজ নিভৃতে করে গেছেন।
ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আজকের টিএসসির প্রতিটি পরতে পরতে শেখ কামালের স্পর্শ আছে। এই টিএসসিতেও মাঝে মাঝে মৌলবাদীদের থাবা পড়ে। আমি সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানাই। অতন্ত্র প্রহরীর মতো এই টিএসসিকে পাহারা দিয়ে রাখতে হবে। কারণ শেখ কামাল এখান থেকেই একের পর এক সংস্কৃতি চর্চা করে গেছেন। মঞ্চ নাটক থেকে শুরু করে ক্রিকেট, ফুটবল, আবৃত্তি, গান-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের এমন কোনো দিক নেই যেখানে তার পদচারণা ছিল না। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। একারণেই তিনি শাহীন কলেজ থেকে ঢাকা কলেজ, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি সমাজবিজ্ঞানকে বেছে নিয়েছিলেন কারণ এটিও তার চেতনারই অংশ। তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক শিক্ষার। গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল তার মননে। তিনি সেনাবাহিনীতে থাকতে পারতেন। কিন্তু সেটি করেননি। তিনি চেয়েছেন এদেশের জনমানুষের জন্য কিছু করতে। অথচ দীর্ঘকাল তাকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে। নানা রকমের অপপ্রচার করা হয়েছে। কিন্তু এখন সত্য বেরিয়ে আসছে। কী মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মানুষ ছিলেন তিনি। তিনি একটি খোলা শার্ট পরতেন। স্যান্ডেল পরতেন। কিন্তু কৃষ্টিতে ছিলেন অনন্য’।
উপাচার্য মশিউর রহমান বলেন, ‘আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ কামালকে নিয়ে এক স্মৃতিকথায় বলেছেন- তিনি জার্মানিতে যাওয়ার সময় শেখ কামালের কাছে জানতে চেয়েছেন তার জন্য কি আনবেন, তখন শেখ কামাল বলেছিলেন- জার্মানি থেকে আবাহনীর খেলোয়াড়ের জন্য এডিডাসের বুট যেন নিয়ে আসেন। এই হলো জাতির জনকের পুত্র। রাজনৈতিক শিক্ষা যার আঁতুরঘর থেকে। রাষ্ট্র সৃষ্টির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু কারাগারে বসে বসে বাংলাদেশের মানচিত্র এঁকেছেন। সবাইকে বুকে ঠাঁই দিয়েছেন। সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে আলিঙ্গন করেছেন, ঐক্যবদ্ধ করেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যদি প্রকৃত অর্থেই কাউকে বঞ্চিত করে থাকেন সেটি হচ্ছে তার প্রিয়তম স্ত্রী এবং সন্তানদের। আর বাঙালি যদি তাদের ধারণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেটি হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা। সুতরাং শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখা আর অন্যান্য রাষ্ট্রে ক্ষমতায় থাকার সঙ্গে কোনো মিল নেই। কেন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় অনেক দিন রাখতে হবে তার একটি মাত্র কারণ রক্তঋণে বাঙালি আবদ্ধ। সেই রক্তঋণ কিছুটা শোধ করতে হলেও মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে ধারণ করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে ও আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আবদুল মান্নান চৌধুরী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক সুভাষ সিংহ রায়।
বিবার্তা/রাসেল/এসএফ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]