৯৮ ভরি সোনা লুট: পুলিশ কনস্টেবল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩, ১০:৩১
৯৮ ভরি সোনা লুট: পুলিশ কনস্টেবল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

৯৮ ভরি সোনা ডাকাতির ঘটনায় রাজধানীর কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় করা মামলায় পুলিশ কনস্টেবল মুন্সী মো. কামরুজ্জামান ওরফে লিংকন ও তার স্ত্রী নাহিদা নাহারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়।


১৫ মার্চ, বুধবার সকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক অলোক কুমার দে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।


তিনি বলেন, ৯৮ ভরি সোনা ডাকাতির মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিটে পুলিশ কনস্টেবল কামরুজ্জামান ও তার স্ত্রী নাহিদাসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। নাহিদার কাছ থেকে ৩৬ ভরিসহ মোট ৫১ ভরি সোনা ও লুণ্ঠিত সোনা বিক্রির নগদ ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। যা আদালতের মাধ্যমে বাদীর জিম্মায় দেয়া হয়েছে।


চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- পুলিশ কনস্টেবল কামরুজ্জামানের স্ত্রী নাহিদা নাহার মেমি, মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে সুমন, উত্তম চন্দ্র মজুমদার, মো. শরীফুল ইসলাম, মো. জাকির হোসেন, মো. রহমান সরদার, আনন্দ পাল, মো. নজরুল ইসলাম ওরফে বাবুল, উত্তম পাল ও দুলাল চন্দ্র পাল।


আসামিদের মধ্যে আনন্দ পাল, উত্তম পাল ও দুলাল পাল পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া নাসির ও মালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। তবে তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।


চার্জশিটে বলা হয়েছে, আসামিদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম ওরফে সুমন মামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও ডাকাতদলের হোতা। অন্যরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। শফিকুলের নেতৃত্বে অপরাপর আসামিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরে সংঘবদ্ধভাবে যানবাহনে থাকা যাত্রীদের টার্গেট করতো। এরপর সুযোগ বুঝে তাদের পথরোধ করে ডাকাতিসহ নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতো। আসামী জাকির ও উত্তম মজুমদার পরস্পর বন্ধু। তারা একত্রে বিভিন্ন ডাকাতিতে অংশ নেয়।


চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগীর দোকান কর্মচারী বরুণ ঘোষ ছয় মাস আগে থেকে বিভিন্ন সময় গলানো সোনা কারখানায় আনা-নেওয়ার কাজ করতেন। ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে গলানো ৯৮ ভরি সোনা নিয়ে মোটরসাইকেলে রাজধানীর তাঁতিবাজারে রওনা করেন। এরপর কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন এলাকায় মোটরসাইকেল রাখেন বরুণ ঘোষ। এরপর নৌকায় নদী পার হয়ে ওয়াইজঘাট ডাব পট্টি ঘাটে নেমে তাঁতিবাজার যান। কিন্তু কারখানা বন্ধ থাকায় বরুণ তার সঙ্গে থাকা সোনা নিয়ে ফিরে আসেন। একইভাবে নদী পার হয়ে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন জনি টাওয়ার সংলগ্ন সাজেদা হাসপাতালের গলি রাস্তায় মোটরসাইকেলের কাছে আসেন। এসময় দুজন সিভিল ও দুজন মহানগর পুলিশের পোশাক পরা লোক তার সামনে আসেন এবং তাকে বলেন তার কাছে অবৈধ মাদকদ্রব্য আছে।


আসামিরা বরুণকে তাদের সঙ্গে যেতে বলে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। গাড়িতে তুলে তাকে কিলঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন এবং তার পরা প্যান্টের ভেতরে ডান কোমরে বাঁধা কালো কাপড়ের তৈরি ব্যাগে রাখা দোকানের ৯৮ ভরি সোনা ও নগদ তিন হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর তারা বরুণকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে। চিৎকার-চেচামেচি করলে জানে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। আসামিরা বরুণকে তাদের মাইক্রোবাসে করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন ঝিলমিল প্রজেক্টের ফাঁকা রাস্তায় ফেলে রেখে রায়।


চার্জশিটে আরও বলা হয়, পুলিশ কনস্টবল মুন্সী কামরুজ্জামান ও আসামি আনন্দ পালকে গ্রেফতার করা হয়। উত্তম পালের বাসা থেকে ৯ ভরি ৮ আনা সোনা, দুলাল পালের বাসা থেকে পাঁচ ভরি ১৪ আনা সোনা জব্দ করা হয়। পরবর্তী সময়ে আসামি সুমনের কাছে লুণ্ঠিত সোনার অলংকার বিক্রির আট লাখ টাকা, আসামি উত্তম মজুমদারের কাছে থেকে চার লাখ টাকা ও আসামি শরীফের কাছে থেকে তিন লাখ টাকা জব্দ করা হয়। আসামি রহমানকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার কাছে থেকে মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়।


এছাড়া আসামি কামরুজ্জামানের তথ্যমতে নাহিদাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছে থেকে ৩৬ ভরি সোনা জব্দ করা হয়। উদ্ধার হওয়া মোট ৫১ ভরি ৫ আনা সোনা এবং লুণ্ঠিত সোনা বিক্রির নগদ ১৫ লাখ টাকা ভুক্তভোগীর জিম্মায় দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।


বিবার্তা/কেআর


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com