শিরোনাম
কে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান?
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৩১
কে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান?
শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

একসময় ঢাকায় এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠেছিল সন্ত্রাসী বাহিনী। যাদের নাম শুনলে আঁতকে উঠত মানুষ। দিনে-দুপুরে তারা চাঁদা চেয়ে চিরকুট পাঠাত। সঙ্গে পাঠাতো কাফনের কাপড়। অনেকেই নীরবে দাবিকৃত সেই চাঁদা দিয়ে দিত। না দিলে জীবন দিতে হতো।


তাদের সন্ত্রাস, দখল, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ। এক সময় এমন সন্ত্রাসীদের নামের তালিকা তৈরি করে প্রশাসন তাদের নাম দিয়েছিল ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’।


দেশের তালিকাভুক্ত এমন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টি। সে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে বুধবার (৩ অক্টোবর) রাতে গ্রেফতার হয়েছে।


পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) মহিউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘ইন্টারপোলের মাধ্যমে দুবাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশ যোগাযোগ করছে। তারা জানিয়েছে, জিসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ এ পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, দুবাই কর্তৃপক্ষ জিসানকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।


জানা গেছে, জিসান একটি ভারতীয় পাসপোর্ট বহন করছে। সেখানে তার নাম বলা হয়েছে আলী আকবর চৌধুরী।


কে এই জিসান


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত দেশের গত এক দশকের শীর্ষ ২৩ সন্ত্রাসীর একজন জিসান। তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজধানীর গুলশান, বনানী, বাড্ডা, মতিঝিলসহ বেশ কিছু অঞ্চলে তার একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করতে। ইন্টারপোল তার নামে রেড অ্যালার্ট জারি করে রেখেছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে জিসান সম্পর্কে বলা আছে, তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড ঘটানো এবং বিস্ফোরক বহনের অভিযোগ আছে।


২০০৩ সালে মালিবাগের একটি হোটেলে দুজন ডিবি পুলিশকে হত্যার পর আলোচনায় আসে জিসান। এরপরই গা ঢাকা দেয়। ২০০৫ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে সে দেশ ছাড়ে বলে ধারণা করা হয়।


সূত্র জানায়, সে সময় পালিয়ে ভারতে প্রবেশ করে জিসান। এরপর নিজের নাম পরিবর্তন করে আলী আকবর চৌধুরী নামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে।


সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে দুই যুবলীগ নেতা জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটকের পর জিসানের নাম নতুন করে আলোচনায় আসে। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে।



ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাবের সদর দফতরের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার শীর্ষ ২৩ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করে। এদের ধরিয়ে দিতে ৮ জনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়।


আলোচিত আরো শীর্ষ সন্ত্রাসীরা


আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা হলো- সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, কালা জাহাঙ্গির, খন্দকার তানভীরুল ইসলাম জয়, সোহেল রানা চৌধুরী ওরফে ফ্রিডম সোহেল, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন, খোরশেদ আলম রাসু, ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, আব্দুল জব্বার মুন্না, আব্বাস ওরফে কিলার আব্বাস, আরমান, হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, শামীম আহম্মেদ ওরফে আগা শামীম, জাফর আহম্মেদ মানিক ওরফে মানিক, সাগর ওরফে টোকাই সাগর, মশিউর রহমান কচি, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান, সানজিদুল ইসলাম ইমন, জিসান ওরফে মন্টি কচি ও মশিউর রহমান।


সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে ১ জন বন্দুক যুদ্ধে নিহত ও একজন গণপিটুনিতে মারা গেছে। ৮ জন বাংলাদেশের কারাগারে রয়েছে। বাকি ১৩ জন ভারত, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাইয়ে পলাতক।


ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, জিসান ইন্টারপোলের দাগি আসামি। বাংলাদেশে পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাকে গ্রেফতারে বছরখানেক আগে ইন্টাপোলের সহযোগিতা চেয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ। এ নিয়ে কয়েক দফা চিঠি চালাচালিও হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ইন্টারপোলের তথ্যের ভিত্তিতেই দুবাই পুলিশ জিসানকে গ্রেফতার করে থাকতে পারে।


জিসান দীর্ঘদিন ধরে দুবাইয়ে অবস্থান করছে। সেখানে বসেই দেশের অপরাধ জগতের অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। ক্যাসিনোকাণ্ডে সম্প্রতি বেশ কয়েকজন যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জিসানের নামে অপরাধ জগতের অনেক অজানা তথ্য দিয়েছেন।


গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘টেন্ডারবাজ’ যুবলীগ নেতা জি কে শামীম তারই লোক। তার মাধ্যমেই দুবাইয়ে বসে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করত জিসান।


বিবার্তা/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com