হিন্দু পুরাণে উমাㅡ অধিকতর ক্ষমতার অধিকারী দেবী যিনি আদি পরাশক্তি। বলা হয়, পিতৃগৃহে গৌরী, কৈলাশে পার্বতী, শিবের ঘরনী উমা, অসুরবধে দুর্গা। অর্থাৎ আলাদা আলাদা পরিচয়ে এ যেন দেবীরই এক রূপ। তবে হিন্দু পুরাণ থেকে কোনো কাহিনি নয়ㅡ আজ বাস্তব জীবনের এক উমার গল্প শোনাতে চাই, বলতে চাই আপন আলোয় উদ্ভাসিত এক নারীর কথাㅡ যিনি গতিতে অপ্রতিরোধ্য, কর্মে পটিয়সী, গুণে অনন্য এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় অতুলনীয় এক মেধাবী বাঙালি তরুণী। গুণের যেন অন্ত নেই তারㅡ তিনি আজকের গল্পের মুখ্য চরিত্র তানিয়া আহমেদ উমা।
তানিয়া আহমেদ উমা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নেত্রকোনা সরকারি কলেজে। বিসিএস পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়ে সরকারি কর্মকমিশন থেকে প্রভাষক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। বলা হয়ে থাকে, মহুয়া মলুয়ার দেশে সবুজে ঘেরা নেত্রকোণা সরকারী কলেজ, নেত্রকোণা জেলার একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর সেই প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষক তানিয়া আহমেদ উমা।
কর্মজীবনের শুরুতে তানিয়া আহমেদ উমা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের মে পর্যন্ত গণযোগাযোগ বিভাগে সহকারী তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবনের শুরু। শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তানিয়া আহমেদ উমা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। মূলত উচ্চ ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত (প্রশিক্ষণ শাখা) ছিলেন তিনি। বর্তমানে চাকরিসূত্রে নেত্রকোণাতেই আবাসস্থল।
উমার জন্ম সবুজ ঘেরা স্নিগ্ধ সৌন্দর্যের পাহাড়ের কোলে, বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে। সেকারণেই পাহাড়ের মতো এক অটল-অবিচল-অপ্রতিরোধ্য গতি উমার মধ্যে বর্তমান৷ জীবনের শুরু থেকে নানা ঝড়-ঝঞ্ঝা আঘাত হেনেছে কিন্তু উমার জীবন যেন রোয়াংছড়ি ছুঁয়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদীর মতোই বহমান। নিশ্চিত জানেন নদীর মতোই জোয়ার-ভাঁটা নিয়ে বহমান থাকা চাই জীবনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে, তাই সাদরে গ্রহণ করে নেন জীবনের চ্যালেঞ্জ।
জীবনের শুরুটাই ছিল চ্যালেঞ্জ। উমার বাবা সুলতান মহিউদ্দিন আহমেদ রোয়াংছড়িতে ফরেস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেসময়েই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ঊষা সুলতানার সাথে। ঊষা সুলতানা মূলত মারমা সম্প্রদায়ের ছিলেন। পূর্বে নাম ছিল ঊষা মারমা থিম, পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ঊষা সুলতানা হয়ে ওঠেন। উমার বাবা-মাকে পারিবারিকভাবে খুব প্রতিকূলতার মুখে দাঁড়াতে হয়েছে ঠিক তাও নয়, তবে সেসময়টা খুব সহজ ছিল না। বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান হিসেবে ঝড়-ঝঞ্ঝার কিছুটা আঁচ উমার গায়েও লেগেছে বৈকি। এমনকি তার নিজেরও খুব দ্রুত বিয়ে হয়ে যায়, বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন সময়ে। বিবাহিত জীবন, সন্তান-সংসার সব সামলেই তাকে সামনে এগিয়ে যেতে হয়েছে। প্রতিকূলতা তার নিত্য সঙ্গী, কিন্তু সাহসকে তিনি করেছেন জীবনের পাথেয়। তাই উমা কখনো থেমে যান না, অসুরের কাছে বধ হন না।
একজন শিক্ষক হিসেবে দেশ ও সমাজের প্রতি নিজের কাজ নিয়ে দায়বদ্ধ থাকেন উমা। এছাড়াও, সবসময়ই মায়ের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর অনুরাগী উমা। স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করার, নিজের জায়গা থেকে নিজের সাধ্য অনুযায়ী ক্ষুদ্র প্রয়াসে যা করতে পারবেন সেটা করার তাগিদ অনুভব করেন নিজের মধ্যে। তবে তার মধ্যে স্বপ্নের বীজ বোনা হয়েছে সেই ছোটোবেলাতেই। সে বীজ বুনেছিলেন মোসা. লজ্জাতুননেসাㅡ উমার দাদি। তিন ভাইবোনের মধ্যে উমা সবার বড়ো। উমাকে নিয়ে দাদির ছিল আকাশ সমান স্বপ্ন। উমার দাদিই তাকে ক্যাডেটে ভর্তি করানোর সকল চেষ্টা করেছেন, কীভাবে কোথায় পড়ালে উমার সফল জীবন নিশ্চিত হবে সেই প্রচেষ্টায় লজ্জাতুননেসা সবসময়ই সচেষ্ট ছিলেন। চাইতেন উমা আর্মি অফিসার হবেন কিংবা দেশের প্রশাসন সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত হবে। তবে, উমা প্রশাসন নয়, শিক্ষা ক্যাডারে দেশসেবার হাতিয়ার পেয়েছেন। এই দায়িত্বটি সঠিকভাবে পালন করতেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ উমা।
উমা সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে "চীন-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সমস্যা এবং সম্ভাবনা : একটি বিশ্লেষণ" বিষয়ের উপর এম.ফিল এর অধীনে থিসিস সম্পন্ন করেছেন। এর আগে ২০২২ সালে ভারতের অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করার আগেও তিনি স্নাতকোত্তর করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে। একই বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) করেন উমা এবং সেটিও কৃতিত্বের সাথেই।
উমা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন সময়ে ২০১৩ সালে ডিউক অফ এডিনবার্গের আন্তর্জাতিক পুরস্কার- গোল্ড লেভেল প্রাপ্ত হন। এই পুরস্কার প্রদান করে থাকে দ্য ডিউক অফ এডিনবার্গের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন। সাধারণত তরুণদের নতুন দক্ষতা শিখতে, শারীরিকভাবে সক্রিয় হতে, তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক হতে এবং শ্রেণীকক্ষের বাইরে সাহসিকতার অনুভূতি তৈরি করতে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।
উমার স্কুল ও কলেজজীবন কেটেছে ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজে। ২০০৩ সালে কৃতিত্বের সাথে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি ও ২০০৫ সালে কৃতিত্বের সাথে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। মূলত শৈশব ও কৈশোরে ক্যাডেট কলেজের শৃঙ্খলা ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন উমাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হতে সহায়তা করেছে। লক্ষ্যকে স্থির রেখেㅡ সব বাধাকে অতিক্রম করে সচেষ্ট থাকতে উমা সর্বদাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিশ্বাস রাখেন নিজের উপর, মনোবলকে জানেন শক্তি হিসেবে, তাই সফল হতে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই উমার কাছে। আর তাই ব্যক্তিগত জীবনের শত প্রতিকূলতা উতরে যান খুব দক্ষতার সাথে। শত কাজের ভিড়েও পড়ালেখা যেন ভীষণ আপন, উচ্চতর শিক্ষার জন্য পুনরায় কাজ শুরু করেছেন অতি সম্প্রতি।
সফলতার মূলমন্ত্রে ইংরেজির উপর দক্ষতা খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন উমা। কারণ, কর্মদক্ষতাকে প্রসারিত করতে বহির্বিশ্বের সাথে সংযোগটা খুব জরুরি। উমার নিজের জীবনেও সেটি লক্ষণীয়। আইইএলটিএস, ডুওলিঙ্গো ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ইংরেজি ভাষার উপর জুনিয়র সার্টিফিকেট কোর্স করেছেন তিনি এবং অবশ্যই সেটি দক্ষতার সাথেই করেছেন। ছবি আঁকা, গান একই সাথে জীবনে তার পছন্দের অনুসঙ্গ।কাজ করতে চান ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে, সে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কাজের সাথেও যুক্ত করেছেন নিজেকে।
তানিয়া আহমেদ উমা ভারতের অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণামূলক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। তার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তি সরকারের সন্ত্রাস-বিরোধী নীতি, বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অন্বেষণ : কনভারজেন্স এবং ডাইভারজেন্সের নিরাপত্তা সমস্যা এবং বাঙালি বনাম বাংলাদেশি- পরিচয়ের সন্ধান: বাংলাদেশের বিশেষ উল্লেখ সহ রাজনীতির একটি হাতিয়ার হিসেবে দ্বন্দ্ব এবং সংস্কৃতির মধ্যে বিরোধ।
এছাড়াও তার গবেষণামূলক কাজ হচ্ছেㅡ
★ লিবিয়া থেকে ফেরত আসা অভিবাসীদের ক্ষতিপূরণ কর্মসূচির বাস্তবায়ন, রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (RMMRU), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ, ২০১১।
★ শিশু আঘাত প্রতিরোধ এবং নীতি উন্নয়ন
সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ (সিআইপিআরবি), বাংলাদেশ, ২০০৭।
সেসময় "একবিংশ শতাব্দীতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রাসঙ্গিকতা: চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ" বিষয়ক জাতীয় ওয়েবিনার, "মহামারী বিশ্ব মোকাবেলা: ভারতীয় প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে" আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার, "বৈষম্য কমানো: মানবাধিকারের অগ্রগতি" বিষয়ক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারসহ আরো একাধিক সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। তানিয়া আহমেদ উমা আদি প্রকাশনীর বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি বইয়ের সম্পাদনা করেছেন।
নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংস আচরণ দূরীকরণ, শিশু ও নারী প্রকল্পের জন্য অ্যাডভোকেসি এবং যোগাযোগসহ নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের কনভেনশনের উপর প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা (CEDAW) এবং কনভেনশন অন দ্য রাইটস অফ দি চাইল্ড (CRC), মীনা, গার্লস এডুকেশনসহ নারী ও শিশুদের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে উমার।
"ছিদাকাশ ফাউন্ডেশন" এর সাথে কাজ করেন উমা যেটি সমগ্র সম্প্রদায় জুড়ে যুব সেবা প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে। এছাড়াও তিনি "পোবা - পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন" এর কর্মী। এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ ও উন্নয়নে নিবেদিত। একইসাথে তিনি "লোরক - সেভ দ্য ফোকলোর" এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। উমা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে কাজ করতেও ভালোবাসেন। তিনি কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের আজীবন রক্তদাতা এবং "ব্লাড ট্রান্সফিউশন কাউন্সিল, পশ্চিমবঙ্গ"-এ স্বেচ্ছায় রক্তদাতা।
উমা নিজের সাম্প্রতিক একটি কাজের বিষয়ে জানান। ইন্টারডিসিপ্লিনারি ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান সিকিউরিটি অ্যান্ড গভর্নেন্স, দিল্লি, ভারত কর্তৃক আয়োজিত নিরাপত্তা, পরিচয় এবং বৈশ্বিক শাসন : ভারত ও বিশ্ব বিষয়ক দুই দিনের IIHSG আন্তর্জাতিক সম্মেলন ২০২৩ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৬ ও ১৭ নভেম্বর। এই সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য তানিয়া আহমেদ উমার "ভবিষ্যত রক্ষা: রোহিঙ্গা শিশু অধিকার ও কল্যাণের উপর একটি ব্যাপক অধ্যয়ন" বিষয়ক পেপার উপস্থাপনের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়াও, উমার এই পেপার প্রেজেন্টেশন ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, এসআরকে গোয়েঙ্কা কলেজ, সীতামারহি দ্বারা আয়োজিত 'ভারতে শাসন, গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন' বিষয়ক জাতীয় সেমিনারে উপস্থাপনের জন্য গৃহীত হয়েছে।
দুই সন্তানের জননী উমা জীবনকে দেখেন একইসাথে শিক্ষকের আদর্শ ও মায়ের মমতায়। তিনি বলেন, একটা শিশু জন্মের পরই প্রতিযোগিতায় ঢুকে যাচ্ছে! বাবা-মা সচেতন বা অবচেতনেই শিশুটিকে প্রতিযোগিতায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ভালো রেজাল্ট, দামি চাকরি, বিলাসী জীবন, শিল্প-সংস্কৃতি অনুরাগী মন একাধারে সবই চাই অভিভাবকের। কিন্তু একজন মানুষ একসাথে সব হতে পারে কি? সেই চেষ্টা করাটাও ভুল। প্রত্যাশার চাপে বাচ্চাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হয়, এটা এখনকার বাবা-মায়েরা বুঝতে পারেন না। ফলাফল, এক একটি পরীক্ষার ফলাফলের পর দেখতে পাই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা। অথচ প্রতিটা জীবন ফুলের মতো সুন্দর, একটি ফুল ঝরে যাওয়া মানেই নিদারুণ ক্ষতি।
উমা ঠিক বুলি আউড়ে ক্ষান্ত হওয়ার মেয়েটি নন, নিজের জীবনেও বহাল রেখেছেন সেই জীবনচর্চা যা তার বয়ানে জানা গেল। নিজের দুই সন্তানের কাঁধে প্রত্যাশার বোঝা চাপিয়ে দেননি ক্ষুণাক্ষরেও। বরং দুই সন্তানকে সাধারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানে পাঠিয়ে সাথে খুলে দিয়েছেন সংস্কৃতিচর্চার দুয়ার। উমা বলেন, একটা শিশুর মানুষ হওয়া, মানবিক হওয়াটা সবচেয়ে জরুরি। সে কোনো পেশায় নিয়োজিত হবে সে বিষয়ে যেন তাকে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা না হয়। সব বাবা-মা চান তার সন্তান ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে, বিসিএস ক্যাডার হবে। তাহলে কৃষক কে হবে? দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক কাজে নিয়োজিত হবে কারা? সমাজের জন্য কাজ করবে কে? কারাই বা শিল্প-সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করবে?
মেয়েদের কাজ হল ঘর-সংসার করা, চাকরি কেন করবে মেয়েরা, মেয়েদের চাকরি করা জাস্ট অলংকার সামাজিক এই চিন্তাগুলো থেকে বেরিয়ে আসা খুব জরুরি বলে মনে করেন উমা। এই চিন্তাগুলো মেয়েদের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে। শিক্ষাক্ষেত্রে- কর্মক্ষেত্রে নানারকম বুলিং-টিজিং মেয়েদের হতাশ করে, মেয়েরা মনোবল হারায়। তাই এসব মনোভাব থেকে সমাজের বেরিয়ে আসা উচিত। তবে উমা আবার এও মনে করেন যে, মেয়েদের জীবনে বাধা থাকবেই সেগুলোর ভয়ে পিছিয়ে গেলে চলবে না। বাধাকে অতিক্রম করার ক্ষমতা নারীর আছে, শুধু সেই ক্ষমতাকে জানাটাই নারীর জন্য বেশি জরুরি।
উমা বলেন, 'টক্সিক রিলেশন' জীবনকে পিছিয়ে নেয়। তাই টক্সিক জীবনে কোনোভাবেই থাকা যাবে না। সুস্থ জীবনের জন্য সুস্থ সম্পর্ক, সুস্থ চিন্তা, সুস্থ জীবনব্যবস্থা একান্ত প্রয়োজন। একইসাথে তানিয়া আহমেদ উমা প্রত্যাশা করেন ধর্মান্ধতা থেকে মুক্ত সুস্থ সহজ বাংলাদেশ, প্রত্যাশা করেন বাংলার শিশুদের সুস্থ শারীরিক মানসিক বিকাশㅡ যা গড়বে এক সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও সুস্থ-সুন্দর জাতি।
বিবার্তা/এসবি/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]