মধুপুর বনের পিছিয়ে পড়া তরুণদের স্বপ্নের কারিগর সুবীর
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২২, ১১:৪০
মধুপুর বনের পিছিয়ে পড়া তরুণদের স্বপ্নের কারিগর সুবীর
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

টাঙ্গাইলের মধুপুরের বনাঞ্চল। কোথাও সমতল, কোথাও ছোট ছোট টিলা। আবার কোথাও উঁচু টিলায় ঘেরা শান্ত-সুনিবিড়, ছায়া ঘেরা অনন্য প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। এখানে গারো, কোচ ও বর্মনসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বাস। আধুনিক যুগের সব সুযোগ-সুবিধা থাকলেও এখনও মোবাইল, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি খুবই ধীর। এমনই পরিবেশে ফ্রিল্যান্সিং করে নিজের ভাগ্য বদলের চিন্তা করেন ঢাকা শহর থেকে এমবিএ পাস করা সুবীর নকরেক। বড় চাকরির অফার পেয়েও স্বাধীনভাবে কাজ করার জেদ থেকে হন ফ্রিল্যান্সার। এখন তিনি শুধু সফল ফ্রিল্যান্সারই না, নিজের অদম্য চেষ্টায় প্রতিষ্ঠা করেছেন ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। হয়েছেন হাজারো তারুণ্যের স্বপ্নদষ্টা ও তাদের এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা।


বলছিলাম সফল ফ্রিল্যান্সার ও নকরেক আইটি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর জেভিয়ার নকরেকের কথা। মাত্র পাঁচ বছরে ২০টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৬ হাজারেরও বেশি তরুণ-তরুণীকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উপযোগী ও দক্ষ করে তুলেছেন। এর মধ্যে হাজারেরও বেশি তরুণ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসে সফলতার সাথে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। তার এই সফলতার পেছনে রয়েছে নানান ঘটনা।



প্রথাগত চাকরি ছেড়ে নিজে কিছু করতে চেয়েছি


টাঙ্গাইলের মধুপুরের গায়রা নামের প্রত্যন্ত টিলাবেষ্ঠিত বনাঞ্চলে শিক্ষিত গারো পরিবারে জন্ম সুবীর জেভিয়ার নকরেকের। বাবা বেলজিয়ামের একটা সংস্থায় চাকরি করেন। মা গৃহিণী। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত আছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে সুবীর দ্বিতীয়।


বনাঞ্চলে গ্রাম হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই গ্রামে, বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়িয়ে, ফুটবল খেলে কাটে সুবীরের শৈশবের স্বর্ণালী দিনগুলি। পড়ালেখায় বরাবরেই ভাল ছিলেন। প্রাথমিকের সব শ্রেণিতে ভাল রেজাল্ট করেছেন। ২০০৫ সালে নিজের এলাকার স্কুলের সায়েন্স বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করে সন্ন্যাস জীবনযাপন করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মানব সেবার ব্রত নিতে মধুপুর থেকে পারি জমান রাজধানী ঢাকায়। উদ্দেশ্য হলিক্রস ব্রাদার সংঘে যোগ দিয়ে সন্ন্যাসব্রতী হওয়া। মানুষের সেবায় জীবন উৎসর্গ করা। ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে কমার্স বিভাগে। তখনও তিনি কম্পিউটার চালানো শেখেননি। যাদুর যন্ত্রটি সবসময় খুব কাছে টানতো তাকে।


যন্ত্রটি চালানোর শেখার খুব ইচ্ছে। মনের ইচ্ছের কথা জানালে হলিক্রস কর্তৃপক্ষ তাকে পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের সংঘে কম্পিউটার অপারেটর ও লাইব্রেরিয়ান হিসেবে খণ্ডকালীন চাকরি করার সুযোগ করে দেয়। সুযোগটা কাজে লাগান সুবীর। নটরডেম কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি দুই বছরে কম্পিউটার চালনোটা শিখে নেন। তখন তার কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ দেখে ব্রাদার্স সংঘের পক্ষ থেকে তাকে কম্পিউটার শিক্ষা এবং বিভিন্ন সফটওয়্যারে বিষয়ে দক্ষ হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। ২০০৮ সালের শেষের দিকে কলেজের পাট চুকিয়ে ফেলেন সুবীর। সন্ন্যাসব্রতী হয়ে জীবনযাপন করার ইচ্ছে নিয়ে ব্রাদার সংঘে যোগ দিলেও কলেজ পাস করার পর জীবনের গতি পথ বদল করেন তিনি।