
বিজয় একাত্তর হলের যমুনা ব্লক থেকে নিচে পড়ে নিহত হওয়া ফিরোজের টেবিলে একটি খোলা প্যাডে সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে।
১৯ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে ফিরোজ নিচে পড়ে গেলে দেড়টার দিকে তার মৃত্যুর ঘোষণা আসে।এরপর রাত ২টার দিকে ফিরোজের আবাসস্থল মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২০৩ নাম্বার রুমে তার টেবিল থেকে পাওয়া যায় একটি খোলা খাতায় এই সুইসাইড নোট পাওয়া যায়।
কাজী ফিরোজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন।তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২০৩ নাম্বার রুম থাকতেন।তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়।
ফিরোজের এক রুমমেট বলেন, রাত ১০টার পরে সে রুমে আসে। তার জন্য তার টেবিলে খাবার রাখা ছিল। আমি তাকে বলি, খাবার তো নষ্ট হয়ে যাবে। খাবার খেয়ে নে। সে বলে, খামু। এরপর সে অযু করে এসে নামাজ পড়েছে। নামাজ শেষে সে তার টেবিলে বসলো। আমরা ভেবেছি, সে হয়ত পড়তে বসেছে। এরপর আমরা রুমের লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়ি। এরপর সে বের হয়ে যায়। এ সময় তার বেডমেট জিজ্ঞেস করলো, কই যাস? তখন সে বলে আসতেছি।
‘এর অল্প সময় পর আমরা খবর পাই, বিজয় একাত্তর হল থেকে কেউ একজন নিচে লাফ দিছে। এটা শুনার সঙ্গে সঙ্গে আমি শোয়া থেকে ওঠে পড়ি। যেহেতু ফিরোজ শেষ কিছুদিন ধরে একটু ডিপ্রেসড ছিল, তাই আমি সবাইকে বলি, ফিরোজ কই? দেখি, রুমে ফিরোজ নেই। এরপর আমরা সবাই দৌড় দিয়ে বিজয় একাত্তরের সামনে আসি। তৎক্ষণে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আমরা হাসপাতালে এসে দেখি, ফিরোজই।’
ফিরোজের বেডমেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমি লাইব্রেরি থেকে যখন রুমে আসি এর কিছুক্ষণ পর ফিরোজ রুমে আসে। সাড়ে ১০টার দিকে সে সবাইকে বলছে, তোরা কেউ আমার কাছ থেকে কোনো টাকা পাস কি-না বল। এমনকি দুই টাকা হলেও বল। আমি দিয়ে দিতে চাই। পেলে এখনই বল। এর কিছুক্ষণ পর সে মানিব্যাগ এবং মোবাইল রেখে রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল। তখন আমি বলি, কই যাচ্ছিস? সে বলে আমি একাত্তর হলে যাচ্ছি, একটু কাজে। এরপর আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি।
ফিরোজের কক্ষে গিয়ে তার টেবিলে দেখা যায়, অর্ধখোলা অবস্থায় রাখা খাতার ওপর দুইটা সিগারেটের প্যাকেট। সেই প্যাকেট দুইটি সরিয়ে দেখা যায় সেখানে পৃষ্ঠাভর্তি লেখা।
পৃষ্ঠার ওপরের তারিখের জায়গায় লেখা ছিল ১/০৯/২৩। আর এর নিচে লেখা আছে, ‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। আমার মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ।’
এ লেখার নিচে মাঝ বরাবর লেখা, ‘ফিরোজ।’ এর নিচে লেখা হয়েছে, ‘রাত: ১১টা ৩।’
পৃষ্ঠার বাকি অর্ধেকে আরও লেখা আছে, ‘আমার ওয়ালেটের কার্ডে কিছু টাকা আছে। বন্ধুদের কাছে অনুরোধ রইল মায়ের হাতে দিতে। কার্ডের পাসওয়ার্ড ৮০৭৯, আর ফোনের লক খুলে দিয়ে গেলাম।
‘আমার লাশের পোস্টমর্টেম না করে যেন বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কোনোরূপ আইনি ঝামেলায় কাউকে যেন জড়ানো না হয়। সবাই বাঁচুক। শুধু শুধু পৃথিবীর অক্সিজেন আর নষ্ট করতে চাই না।’
এই লেখার নিচে আবারও লেখা, ‘ফিরোজ।’ এর নিচে লেখা হয়েছে, ‘রাত ১১টা ৫।’
কাজী ফিরোজের বন্ধুরা জানিয়েছেন, এ লেখাটা ফিরোজের হাতের লেখার মতোই তাদের মনে হচ্ছে, তবে ফিরোজের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে আসা তার বড় ভাই জানিয়েছেন, তার এবং ফিরোজের লেখা প্রায় একই। খাতায় থাকা এই লেখাটা ফিরোজের হাতের লেখা নয়। এরপর তারা ফিরোজের মরদেহের সুরতহাল করার সিদ্ধান্ত নেন।
বিবার্তা/ছাব্বির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]