শালিখায় হদিস নেই ভর্তুকির ৪ কৃষিযন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টারের
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৪, ১৩:০২
শালিখায় হদিস নেই ভর্তুকির ৪ কৃষিযন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টারের
শালিখা (মাগুরা) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মাগুরার শালিখায় বোরো ধান কাটার ভরা মৌসুমে যখন কৃষি শ্রমিকের অভাব ও আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় কম্বাইন হারভেস্টার এর অভাবে ধান কাটা ব্যাহত হচ্ছে ঠিক সে সময়ে শালিখা উপজেলার কৃষকদের জন্য সরকারের ভর্তুকি দেওয়া ধান কাটার ৪টি কৃষি যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার কোথায় গেলো তার কোন হদিস মিলছে না। প্রাপ্যক’রা বলছেন যেদিন মেশিন পেয়েছি ওই দিনই আমরা কোম্পানির গাড়িতেই ভাড়ায় খাটানোর জন্য দিনাজপুর পাঠিয়েছি।


অন্যদিকে উপজেলা কৃষি অফিস বলছে মেশিন গুলো কোথায় তা আমাদের জানা নেই।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারের কাছ থেকে ৫০% ভর্তুকিতে কেনা উপজেলার কৃষি অফিস থেকে ৪টি কম্বাইন হারভেস্টার অন্য জেলায় গোপনে বিক্রি হয়ে গেছে। এসব ধান কাটার কৃষিযন্ত্র নিজ নিজ এলাকার কোথাও নেই। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এসব কম্বাইন হারভেস্টার এ উপজেলায় কার্যরত রয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে।


কৃষকদের অভিযোগ কম্বাইন হারভেস্টার বেচাকেনায় কৃষি অফিস জড়িত। তাদের যোগসাজশেই তালিকায় এখনো এসব কৃষি যন্ত্রের উপস্থিতি দেখানো হচ্ছে। তবে মাঠ পর্যায়ে সেগুলোর কোন হদিস নেই।


শালিখা উপজেলার শতখালী ইউনিয়নের হরিশপুর গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর ও তার ভাইয়ের নামে একটি কম্বাইন হারভেস্টার বরাদ্দ হয়। ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর তার কম্বাইন হারভেস্টার দিনাজপুর জেলায় ভাড়ায় চলছে বলে জানান, তবে এখনো শালিখায় কম্বাইন হারভেস্টারের তালিকায় তার নাম (তালিকা ক্রমিক নং- ৩ ) রয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে মেম্বার নিজেই।


তিনি জানান, কৃষি অফিস থেকে আমি একটি কম্বাইন হারভেস্টার সরকারের দেয়া ১৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ভর্তুকিতে মোট ৩১ লক্ষ টাকায় কিনেছি।


অন্যদিকে, উপজেলার ভাটোয়াইল গ্রামের আকবর হোসেন নামের এক ব্যক্তির নাম এ তালিকায় এক নাম্বারে থাকলেও এ মেশিন টি তার জামাই একই উপজেলার সর্বসাংদা গ্রামের জমজম বিশ্বাস কৃষি অফিস থেকে গ্রহণ করেছেন। যার রেজিস্টার বহিতে জমজম নামের ওই ব্যক্তির প্রাপ্ত মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে জমজম ফোন রিসিভ করে বলেন- এ কম্বাইন্ড মেশিন আমি নিয়েছি। রেজিস্টারে আকবর হোসেনের নাম কেন? জানতে চাইলে জমজম বলেন প্রতিবার তো এক নামে বরাদ্দ দেয় না, তাই আমার শ্বশুরের নাম দিয়েছি। অথচ, মেশিন আমার দিনাজপুরে ভাড়ায় খাটাচ্ছি। আমি এ পর্যন্ত মোট ৩টা মেশিন নিয়েছি।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শুধু জাহাঙ্গীর মেম্বার নয় এ তালিকার অনেকের বাড়িতে কম্বাইন হারভেস্টার নেই। ভর্তুকির এ ধান কাটার যন্ত্র লাখ লাখ টাকার লাভে অন্য জেলায় বিক্রি করা হয়েছে। এমন তুঘলকি কাজের সঙ্গে কৃষি অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।


আড়পাড়া ইউনিয়নের আরপাড়া পূর্ব পাড়ার কৃষক কল্লোল শেখ জানান, আমার মেশিন বগুড়াতে ভাড়া দেয়া আছে।


এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যন্ত্রকরণের প্রকল্পের আওতায় শালিখা উপজেলায় ৫টি কম্বাইন হারভেস্টার বরাদ্দ করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে চারটি কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণ করেছি। আর আমরা এ কম্বাইন হারভেস্টারগুলো এমন সময় বিতরণ করেছি যখন শালিকা উপজেলায় ধান কাটা শেষ হয়েছে। সম্মানিত প্রকল্পের অনুমতি সাপেক্ষে সেগুলো অন্য জেলায় ব্যবহার করার অনুমতি থাকলেও মেশিন ব্যবহারকারীরা আমার কাছ থেকে কোন অনুমতি নেয় নাই।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হরেকৃষ্ণ অধিকারী জানান, এই এলাকার চাষীরা যেন আধুনিক কৃষিতে সম্পৃক্ত হয় সেজন্য কৃষি অধিদপ্তরের প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটা কম্বাইন হারভেস্টার ৫০ভাগ ভর্তুকিতে দেওয়া হয়। যেহেতু এই কম্বাইন হারভেস্টারগুলো আমাদের শালিখাতে দেওয়া হয়েছে সেহতু এটা শালিখাতে ব্যবহার হবে। এর কোন ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা আমার জানা নাই। আর যদি কিছু ঘটে সেটা আমরা খতিয়ে দেখব ও এর যথাযথ ব্যবস্থা নেব। এ কম্বাইন হারভেস্টার সরকারের ভর্তুকিতে দেওয়া তাই এগুলো বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।


বিবার্তা/মনিরুল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com