সংস্কারাধীন শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুতে লাইটারেজ জাহাজের ধাক্কা
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০:১৬
সংস্কারাধীন শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুতে লাইটারেজ জাহাজের ধাক্কা
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে সংস্কারাধীন বহুল আলোচিত শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুতে পণ্যবাহী একটি জাহাজ ধাক্কা দিয়ে আটকে গেছে। এমভি সমুদা-১ নামের ওই জাহাজটি দুপুরে জোয়ার ও বাতাসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর ৯ নম্বর স্প্যানে আঘাত করে। এতে সেতুর স্প্যান সহ নিম্নাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নৌ-পুলিশের সহায়তায় সেতুর সঙ্গে আটকে থাকা জাহাজটি টাগবোটের মাধ্যমে উদ্ধারে চেষ্টা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।


৩০ এপ্রিল, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে কালুরঘাট সেতুর মাঝখানে ধাক্কা দেয় জাহাজটি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের দিকে মেসার্স রোকোনুর মেরিটাইম লিমিটেডের একটি পণ্য পরিবাহী নৌযান সেতুতে ধাক্কা দেয়।


রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দুপুর দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে লাইটারেজ জাহাজটি কালুরঘাট সেতুর উজান অংশের ৯ নম্বর স্প্যানে আঘাত করে। খবর পেয়ে রেলের প্রকৌশল ও সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা বলেন, কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ চলছে। উপরের ট্র্যাক নির্মাণ শেষে সড়কপথ তৈরির কাজ চললেও নিচের বেশ কিছু কাজ চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় সেতুতে জাহাজের ধাক্কায় কতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটি তদন্ত ছাড়া বলা মুশকিল। তবে ট্র্যাকের ক্ষতি না হওয়ায় আপাতত ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।


সেতু সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানি লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মেহেদি হাসান জানিয়েছেন, দুপুরের দিকে পশ্চিম পাশে নদীর ফেরী চলাচলের অংশে একটি লাইটারেজ জাহাজ ভেসে এসে সেতুতে আঘাত করেছে। রেলওয়ে ও নৌ পুলিশের একটি টিম এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে। জাহাজ কর্তৃপক্ষের কাউকে না পাওয়ায় নৌ-পুলিশের মাধ্যমে জাহাজটি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেতুর নিচের অংশে কোন ক্ষয়ক্ষতি হলেও সেটি তদন্ত ছাড়া নির্ধারণ করা যাবে না। তবে উপরের অংশে তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় ট্রেন চলাচলে সমস্যা হবে না বলেই জানিয়েছেন তিনি।


নৌ-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হামিদচর এলাকার এমভি সমুদা-১ এর মালিকপক্ষের একটি ডকইয়ার্ডে লাইটারেজ জাহাজটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লাইটারেজের মূল চালক না থাকায় সেকেন্ড অফিসার দিয়ে ডকইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলেও প্রবল বাতাস ও জোয়ারের তোড়ে জাহাজটি সেতুতে আঘাত করে। খবর পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌ পুলিশের একটি টাগবোট পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। জাহাজটি উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদরঘাট নৌ থানা কর্তৃপক্ষ।


সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একরাম উল্লাহ বলেন, এমভি সমুদা-১ এর মূল মাস্টার কয়েকদিন আগে মারা গেছেন। যার কারণে ডকইয়ার্ডে নিয়ে যেতে লাইটারেজ জাহাজটি চালাচ্ছিলেন সেকেন্ড মাস্টার। তীব্র বাতাস জোয়ারের কারণে তিনি ডকইয়ার্ডে নিয়ে যেতে না পেরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এতে সেতুতে আঘাত করে লাইটারেজ জাহাজটি। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে সেতু কেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেটি দেখতে রেলওয়ের কর্মর্কতারা পরিদর্শন করেছেন, তারা বলতে পারবেন। জাহাজটি সরিয়ে নিতে উদ্ধারকারী জাহাজ আনা হচ্ছে। তারা ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করে মামলা করতে চাইলে আমরা সেটি নেয়া হবে।


তবে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিশান দত্ত জানিয়েছেন, জাহাজের ধাক্কায় সেতুর বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জাহাজটি সরানোর পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা জানা যাবে।


রেলওয়ে সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণের পর বোঝা যাবে ক্ষতি কতটা।


প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট সেতু অংশে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক বাল্কহেড ও ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন বালি উত্তোলন করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। নদীর পূর্ব অংশ থেকে অনুমোদনহীন ভাবে তোলা এসব বালি প্রতিদিনই ঝুঁকিপূর্ণ পন্থা ও দ্রুতগতিতে কালুরঘাট সেতুর বিভিন্ন স্প্যানের নিচ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উত্তোলনকারীরা। বালি উত্তোলনের কারণে প্রায় শতবর্ষী সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি দ্রুতগতির এসব বাল্কহেড ও ড্রেজারে সেতুটি দুর্ঘটনার মুখে পতিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।


১৯৩১ সালে কালুরঘাট রেলসেতুটি নির্মিত হয়। এরপর ১৯৬২ সালে সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম এই সেতুটি। সেতুটির মেয়াদ অনেক আগে ফুরিয়ে গেলেও সংস্কার করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১ আগস্ট সেতুটির বড় ধরনের সংস্কারকাজ শুরু হয়। বর্তমানে কালুরঘাট সেতু দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে তিন জোড়া ট্রেন চলাচল করছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com