টাঙ্গাইলে বখাটেদের চাঁদা না দেয়ায় প্রবাসীকে হেনস্তা
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৫৩
টাঙ্গাইলে বখাটেদের চাঁদা না দেয়ায় প্রবাসীকে হেনস্তা
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

টাঙ্গাইলের দেওপাড়া ইউনিয়নের চাম্বলতলা এলাকায় স্থানীয় বখাটেদের টাকা না দেয়ায় এক প্রবাসীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর ও স্থানীয় এক নাবালিকার সঙ্গে বিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এ নিয়ে টাঙ্গাইলের আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।


মামলা সূত্রে জানা যায়, ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের রহমতখার বাইদ গ্রামের মো. দুলাল মন্ডলের ছেলে মো. নাজমুল হাসান মন্ডল দীর্ঘ ৭ বছর মরিসাসে প্রবাস জীবন শেষে পাঁচ মাস আগে দেশে ফিরেন। দেশে ফেরার কিছুদিন পর স্থানীয় বখাটে পাশের চৌরাসা গ্রামের মিন্টু মিয়ার ছেলে মো. জাহিদুল হাসান জাহিদ (৩২), নুর মোহাম্মদের ছেলে বাবুল হোসেন (৪০), মৃত আ. কদ্দুছের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪৮), তুলা মিয়ার ছেলে মো. জুয়েল (২৪), আ. সালামের ছেলে মো. রিজান (২৩), লেবু মিয়ার ছেলে মো. সুজন (২৫), মো. শাহীনের ছেলে রায়হান (২২), একই ইউনিয়নের চাম্বলতলা গ্রামের মো. বিপ্লব তালুকদারের ছেলে মো. সৌরভ তালুকদার (২৬) এবং ধোপাকালিয়ান গ্রামের মৃত জুব্বার সিকদারের ছেলে হুমায়ুন সিকদার রানা (৫৫) সহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি মো. নাজমুল হাসান মন্ডলের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় নাজমুল হাসানকে তারা দেখে নেয়ার হুমকি দেয়।


গত ২১ মার্চ চাম্বলতলা গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে নাজমুল হাসানকে (২৬) উল্লেখিত ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজসে সৌরভ তালুকদারের মাধ্যমে কৌশলে পাশের একটি গজারি বাগানে ডেকে নিয়ে যায়। গজারি বাগানে যাওয়া মাত্রই তারা সকলে লুকানো অবস্থা থেকে বেড়িয়ে এসে নাজমুলকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। এসময় তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ার কারণ জানতে চায় এবং গজারি গাছের ডাল দিয়ে পেটাতে থাকে। তাদের দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা না দিলে স্থানীয় ১৩ বছরের এক কিশোরীর সঙ্গে তার বিয়ে পড়িয়ে দিবে বলেও হুমকি দেয়।


পরে নাজমুলকে দিয়ে কয়েকটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নাম-স্বাক্ষর রেখে দ্রুত চাঁদার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে ছেড়ে দেয়। তারপরও ধার্যকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় ওই বখাটেরা নাজমুলকে চাম্বলতলা গ্রামের নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে নিয়ে তার নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে স্থানীয় কাজী দিয়ে ধর্মীয়ভাবে বিয়ে পড়িয়ে দেয়। বিয়ে পড়িয়ে দেয়ার পর নাজমুল হাসান ও নাবালিকা কনে দুজনকে তাদের পাহারায় রহমতখার বাইদ গ্রামে নাজমুলদের বাড়িতে জোর করে রেখে আসে।


এ বিষয়ে প্রবাস ফেরত নাজমুল হাসান ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে ঘাটাইল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। পুলিশ অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ না করায় ৫ এপ্রিল টাঙ্গাইলের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঘাটাইল থানা আমলী আদালতে একটি মামলা (সিআর মো. নং-২৮২/২৪) দায়ের করেন। ওই মামলাটি ঘাটাইল
থানা পুলিশ তদন্ত করতে গেলে অভিযুক্ত বখাটেরা ভড়কে যায়। পরে বখাটেরা পরস্পর যোগসাজসে ওই নাবালিকাকে তাদের কথামতো অভিযোগ দায়ের করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে ওই নাবালিকার মা বখাটেদের প্রভাবে গত ২১ এপ্রিল টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নাজমুল হাসানসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা (পি. মো. নং-১১৩/২৪) দায়ের করেন।


দেওপাড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, উল্লেখিত বখাটেরা এলাকায় নানা রকম অপকর্ম করে থাকে। নাজমুল হাসানকেও তারা কৌশলে নারী দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদার টাকা আদায় করতে চাচ্ছে। ইতোপূর্বেও তারা ওই নাবালিকাকে ব্যবহার করে কালিহাতী উপজেলার আমজানী গ্রামের এক ছেলের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছে।


নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত মামলার বাদি ওই নাবালিকার মা রাশিদা বেগম (৩৬) জানান, তার মেয়ের সঙ্গে নাজমুলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনি নাজমুলসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।


মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘাটাইল থানার এসআই শহিদুজ্জামান জানান, চাম্বলতলা-চৌরাসা এলাকার কিছু বখাটে ছেলে নাজমুলকে ব্ল্যাক মেইল করছে। স্থানীয়দের বক্তব্যে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বখাটেরা একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে কৌশলে ডেকে নিয়ে জোর করে এক নাবালিকার সঙ্গে বিয়ে দেয়। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।


বিবার্তা/বাবু/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com