তিন্দু-রেমাক্রীতে হচ্ছে সড়ক, পাল্টে যাবে থানচির অর্থনীতির চিত্র
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৪৫
তিন্দু-রেমাক্রীতে হচ্ছে সড়ক, পাল্টে যাবে থানচির অর্থনীতির চিত্র
বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

থানচি সদর থেকে তিন্দু, রেমাক্রী ও বড় মদক এ একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ইঞ্জিনচালিত নৌকা। ঘর সমান বড় বড় পাথর, সরু নদীপথ আর তীব্র স্রোত উপেক্ষা করে গন্তব্যে যেতে হয় সেখানকার বাসিন্দাদের। বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছরই তিন্দু রাজা পাথরসহ বেশ কিছু এলাকায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা দুর্ঘটনার শিকার হয়। ফলে ঘটে প্রাণহানির মত ঘটনা।


জানা যায়, থানচি উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম ও পশ্চাৎপদ ইউনিয়ন তিন্দু ও রেমাক্রী। জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোতে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম চললেও দুর্গমতার কারণে মালামাল পরিবহণ করা ছিল সবচেয়ে বড় সমস্যা। ফলে সরকারের সদিচ্ছা থাকার সত্ত্বেও এই দুই ইউনিয়নে ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। এছাড়াও বিদ্যুৎ ও মোবাইলের নেটওয়ার্ক-ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় আধুনিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত এখানকার বাসিন্দারা। ফলে এখনও পিছিয়ে এই দুই ইউনিয়নের মানুষ।


এছাড়াও এখানে রয়েছে নাফাকুম, আমিয়াকুম, লাংলুক ঝর্ণা, রেমাক্রীকুমসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় ওইসব পর্যটন কেন্দ্রে একমাত্র ভরসা করতে হয় ইঞ্জিনচালিত নৌকার উপর। এদিকে নৌপথে রয়েছে নানা প্রতিকূলতা। একদিকে সরু নদীপথ, তীব্র স্রোত অপরদিকে ঘর সমান বড় বড় পাথর রয়েছে এ পথে। পাথর ডিঙ্গিয়ে ও তীব্র স্রোতে নৌকায় করে যাতায়াত করতে গিয়ে ঘটছে প্রাণহানিসহ নানা দুর্ঘটনা। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে আরও ভয়ংকর হয় এ নদী পথের যাত্রা।


এদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় গর্ভবতীসহ রোগীদের নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ফলে প্রতিবছর বিনা চিকিৎসায় মারা যায় অনেক মানুষ। এছাড়াও কৃষকরা বিভিন্ন ফলদ ও ফলজ বাগান করলেও তা বাজারজাত করতে না পারায় অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে ছিল সেখানকার বাসিন্দারা।


অবশেষে শত সমস্যা কাটিয়ে সাঙ্গু নদীর কোলঘেঁষে তিন্দু হয়ে রেমাক্রী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। সম্প্রতি এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পুরো এলাকা ঘুরে দেখেছেন এবং শীঘ্রই ওই এলাকায় ব্রিজ কালভার্টসহ পাকা সড়ক নির্মাণ পাকা সড়ক নির্মাণ হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এর ফলে তিন্দু ও রেমাক্রী ইউনিয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন, পাল্টে যাবে অর্থনীতির চিত্র। পর্যটন খাতেও খুলবে নতুন দুয়ার।


তিন্দু ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কটেজ ব্যবসায়ী মংপ্রু অং মারমা জানান, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক পর্যটক এখানে আসতে চায়না। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন হলে যে পরিমাণ পর্যটক এখানে আসে, এর কয়েকগুণ বাড়বে। এতে এখানকার ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে।


এছাড়া কৃষকরাও তাদের জুমে উৎপাদিত ফসল সহজে বাজারজাত করতে পারবে এবং ন্যায্যমূল্য পাবে।
এ দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি এবার পূরণ হতে যাচ্ছে। অবশেষে সকল সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সেই দুর্গম এলাকায় এবার পাকা সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণ হবে এমন খবরে জনপ্রতিনিধিসহ উচ্ছ্বসিত সেখানকার বাসিন্দারা।


রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈ থুই মারমা জানান, রেমাক্রী ইউনিয়নটি অতি দুর্গম হওয়ায় উন্নয়ন কাজ করতে অনেক অসুবিধা হয়। ইট, বালি, রড ও সিমেন্ট পরিবহণ খুব কঠিন। তাই এলাকায় পাকা ব্রিজ, কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে এখনও পিছিয়ে রয়েছি আমরা। এছাড়াও সড়ক না থাকায় নদীপথে চলতে গিয়ে প্রতিবছর নৌকা দুর্ঘটনায় নিরাপত্তাকর্মীসহ অনেক সাধারণ মানুষ মারা যায়।


তিনি আরও জানান, সড়ক না থাকায় মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয় না। বিনা চিকিৎসায় মারা যায় রোগী। এছাড়াও কৃষিপণ্য পরিবহণ করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা।


উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লা মং মারমা জানান, সড়কের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি মহোদয় আশা দিয়েছিলেন। তারই প্রতিশ্রুতিতে খুব শীঘ্রই সাঙ্গু নদীর কোলঘেঁষে তিন্দু হয়ে রেমাক্রী পর্যন্ত পাকা সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। এখানে পাকা সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণ হলে তিন্দু ও রেমাক্রী ইউনিয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে। ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের আর বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে না। বর্ষা মৌসুমে নৌকা দুর্ঘটনা কমে আসবে।


এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)'র বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী ডক্টর মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় এ ইউনিয়নগুলোতে পাকা সড়ক নাই এইটা কল্পনার বাইরে। এলজিইডির পক্ষ থেকে ডিম পাহাড় হয়ে তিন্দু পর্যন্ত সড়কটি পাকা করা হবে। পরবর্তীতে তিন্দু হয়ে রেমাক্রী পর্যন্ত সড়কটি সম্প্রসারণ করা হবে এবং রেমাক্রী বাজার সংলগ্ন আরো একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এতে কৃষিপণ্য সহজে পরিবহণ, রোগীদের স্বাস্থ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করাসহ পর্যটকদের যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য তিন্দু থেকে রেমাক্রী পর্যন্ত পাকা সড়ক নির্মাণ অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। তবে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার কথা খেয়াল রেখে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।


বিবার্তা/হ্লাসিং/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com