পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থী
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:২৯
পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থী
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দুই হাত না থাকলেও বন্ধ হয়নি লেখাপড়া। অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে প্রতিবন্ধকতা। বলছি জামালপুরের সরিষাবাড়ীর শারীরিক প্রতিবন্ধী মেধাবী শিক্ষার্থী সিয়ামের কথা৷ অভাব, দারিদ্র ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মেধাবী এই শিক্ষার্থী সিয়াম। দুইটি হাত না থাকলেও অন্যের সাহায্য ছাড়াই পা দিয়ে লিখে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি। মনে বিন্দুমাত্র নেই কোনো হতাশা। লেখাপড়া করে বড় হয়ে হতে চায় সরকারি চাকরিজীবী। অভাব মেটাতে চায় সংসারের। হাসি ফোটাতে চায় বাবা-মায়ের মুখে। করতে চায় দেশের সেবা।


পরিবার, এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া গ্রামের দিনমজুর দম্পতি জিন্নাহ মিয়ার ছেলে সিয়াম। বাবা দিনমজুরের কাজ করেন আর মা গৃহিণী। জিন্নাহ-জোসনা দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে সিয়াম সবার ছোট। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত না থাকলেও হার মানেনি প্রতিবন্ধকতার কাছে। প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি তার লেখাপড়া ও খেলাধুলা। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। ছোট থেকেই ভাই বোন ও প্রতিবেশী শিশুদের সাথে গিয়ে বসে থাকতেন তাদের স্কুলে।


তার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখে স্কুলে ভর্তি করে নেন শিক্ষিকা। বিভিন্ন অক্ষরের ওপর পা দিয়ে চক পেন্সিলে ঘষামাজা করে লেখা শেখান মানবিক শিক্ষিকা জাকিয়া সুলতানা। সেখান থেকেই লেখার অভ্যাস শুরু হয় সিয়ামের। পরবর্তীতে অভ্যাসের সাথে নিজের বাম পা দিয়ে লেখার ধারাবাহিকতায় শুরু করে পড়াশোনা। ২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া ব্র্যাক শিশু নিকেতন স্কুল থেকে অংশগ্রহণ করে ভালো রেজাল্ট নিয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে সিয়াম। এর পর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র স্কুল এন্ড কলেজে। সেখান থেকেই জেএসসি পরীক্ষাতেও ভালো ফলাফল করে বর্তমানে দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগ থেকে এস এস সি পরীক্ষা দিচ্ছে হরখালী মুজিবুর রহমান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে।


তার দুই হাত না থাকলেও থেমে থাকেনি তার কোনো কাজ। দুই হাত না থাকলেও খেলতে পারেন ক্রিকেট খেলা, পারেন পুকুরে সাঁতার কাটতে, নিজেই পা দিয়ে টিউবওয়েল চেপে পানি তুলে গোসল করে, পা দিয়ে চামচ ধরে ভাত মাখিয়ে খায় সিয়াম। বই খোলা ও পাতা উল্টানো, মোবাইল চালানো সহ সকল কাজ পা দিয়েই করে অদম্য এই মেধাবী শিক্ষার্থী সিয়াম।


সিয়ামের বাবা জিন্নাহ মিয়া ও মা জোসনা বেগম বলেন, সিয়ামের ছোট থেকেই স্কুলে যাওয়া, পড়ালেখা করার ইচ্ছে ছিল। ছোট বেলায় ওর বয়সীরা স্কুলে গেলে ওদের সাথে আমাদের না বলে চলে যেত।


তারপর ওর স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ দেখে আমরা ব্যাক স্কুলে নিয়ে গিয়ে বসে থাকতাম। ওর জীবনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করা। ওহ সেটা করছে। তবে আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে আমরা ওকে লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব জিনিস এনে দিতে পারি না। অনেক সময় বন্ধুদের বই, গাইড এনে পড়ে। ওর শেষ ইচ্ছে লেখাপড়া শেষ করে একটা সরকারি চাকরি করবে।


সিয়াম বলেন, আমার আজকে এই পর্যন্ত আসার পেছনে সব থেকে বড় অবদান জাকিয়া সুলতানা ম্যাডামের। যিনি প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে পা দিয়ে আমাকে লেখা শিখিয়েছেন। পড়ালেখা করার সাহস জুগিয়েছেন। তারপর আমার বাবা মা, আমার স্কুলের বন্ধুরা যারা সব সময় আমাকে সার্পোট করেছে। কখনো বুঝতে দেয়নি যে আমি প্রতিবন্ধী৷ তাদের জন্যই আমি আজকে সফল। আমার ইচ্ছে আমি বাংলাদেশে পড়ালেখা শেষ করে একটা সরকারি চাকরি করবো। মা বাবার মুখে হাসি ফোটাবো, দেশের মানুষের সেবা করবো।


সিয়ামের শিক্ষক ও চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, সিয়াম আমাদের এখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। ভর্তির পর তার লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে বিনা বেতনে তাকে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়েছি৷ তার স্কুল ড্রেস বিদ্যালয় থেকে উপহার দেয়া হয়েছে। সিয়ামের লেখাপড়ার জন্য ও সিয়ামের পরিবারকে বিভিন্ন সময় স্কুলের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। সে যদি আমাদের এখানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় তাহলে তাকে বিনা বেতনে পড়ানো হবে। তার জন্য সরকার ও বিত্তশালীদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।


বিবার্তা/মোস্তাক/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com