সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে ইসলামের ৫ নির্দেশনা
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৩
সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে ইসলামের ৫ নির্দেশনা
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে বাস-ট্রাক, মাইক্রোবাস-সিএনজি, মোটরসাইকেল, ইত্যাদি। ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে সড়ক দুর্ঘটনা। হতাহত হচ্ছে বহু মানুষ। তাই জীবন বাঁচাতে সবসময় সতর্কতা কাম্য। ইসলামের পাঁচটি নির্দেশনা মেনে চললে সুরক্ষিত হবে সড়কপথ। মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। আমাদের জীবনযাত্রা সহজ হয়ে আসবে।


যানবাহনের দোয়া পাঠ


দোয়াও একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। দোয়া ইবাদতের মূল। দোয়া ছাড়া ইবাদত অপূর্ণ থাকে। যে কোনো সময় যে কোনো দোয়া পড়া যায়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রসুল (সা.) আমাদের দোয়া শিখিয়েছেন। এমনকি ছোট থেকে ছোট বিষয়েরও দোয়া শিখিয়েছেন।


হযরত জুবায়ের ইবনে মুতঈম (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলিলেন, হে জুবায়ের ! তুমি কি উহা পছন্দ কর যে, যখন তুমি সফরে যাও তখন তোমার অবস্থা তোমার সব সঙ্গীর অপেক্ষা উত্তম ও তোমার পাথেয় সর্বাপেক্ষা বেশি হয়?


আমি বলিলাম, জি হ্যাঁ। আমার পিতামাতা আপনার ওপর কোরবান হোক ! রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এই পাঁচটি সুরা পাঠ করবে-- قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ - إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ - قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ - قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ - قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ । সুরাগুলো হলো ১. সুরা কাফিরুন ২. সুরা নাসর ৩. ইখলাস ৪. সুরা ফালাক ৫. সুরা নাস।


প্রত্যেক সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম পড়বে। সবশেষে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়বে । এইভাবে পাঁচ সুরায় ও ছয়বার বিসমিল্লাহ হবে।


হযরত জুবায়ের (রা.) বলেন, আমি ধনী হওয়া সত্ত্বেও আগে যখন সফরে যেতাম তখন আমার অবস্থা সর্বাপেক্ষা ভগ্নাবস্থা ও আমার পাথেয় সর্বাপেক্ষা কম হতো।


কিন্তু রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাকে এই সুরাগুলো শিক্ষা দিলেন তখন থেকে আমি এ সুরাগুলো পাঠ করতে আরম্ভ করলাম, আর তখন থেকে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত সম্পূর্ণ সফরে আমার অবস্থা সর্বাপেক্ষা উত্তম হতে লাগল। আমার পাথেয় সর্বাপেক্ষা বেশি হতে লাগল।


بسم الله الرحمن الرحيم سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, সুবহানাল্লাজি সাখখারা লানা হাজা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনিন ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনকলিবুন।


অর্থ: মহান আল্লাহর পবিত্রতা যিনি একে (বাহন) আমাদের অধীন করে দিয়েছেন, অথচ আমরা একে অধীন করতে সক্ষম ছিলাম না। আমরা আমাদের প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তনকারী।


সচেতনতা বৃদ্ধি


সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে সচেতন হতে হবে। চালক, যাত্রী, পথচারী ও সড়ক নিরাপত্তার দায়িত্বশীল সবাই নিজেদের দায়িত্বে সজাগ ও সচেতন হলেই দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। চালকদের উদাসীনতা, ট্রাফিক আইন না মানা, দ্রুতগতিতে যানবাহন চালানো, ওভারটেক করা; অন্যদিকে পথচারীর মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়া, যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ইত্যাদি কারণে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।


ইসলাম সবসময়ই দায়িত্ব সচেতন হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। হাদিসে এসেছে, রসুল সা. বলেন, ‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি : ২৫৫৮)। অন্য হাদিসে আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত- নবীজি সা. বলেছেন, খবরদার! তোমরা রাস্তায় বসে থেকে রাস্তা দখল করবে না। একান্ত যদি বসতেই হয়, তা হলে রাস্তার হক আদায় করবে। (বুখারি : ২২৯৭)


নিয়ন্ত্রিত গতি


দ্রুতগতিতে যানবাহন চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। চলাফেরার ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। এ সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সা) বলেন, ধীরস্থিরতা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়ো শয়তানের পক্ষ থেকে। (বায়হাকি : ২০৭৬৭)। আল্লাহ তাআলা বলেন, রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে অত্যন্ত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে। (সুরা ফুরকান : ৬৩)


দায়িত্ববোধসম্পন্ন চালক নিয়োগ



দায়িত্ববোধসম্পন্ন চালক নিয়োগ করা গাড়ি মালিকের সবচেয়ে বড় কর্তব্য। চালকদের অদক্ষতা, অসচেতনতা ও অসাবধানতার কারণেই বেশিরভাগ সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে। বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো, মাদক গ্রহণ করে গাড়ি চালানো ইত্যাদি কারণে কেড়ে নেয় অসংখ্য মানুষের প্রাণ। সড়ক হয়ে ওঠে অনিরাপদ।
অথচ নবীজি বলেন, প্রকৃত মুসলিম ওই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। (বুখারি ৯)। চালক যদি দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ থাকে, তা হলে আশা করা যায় তার মাধ্যমে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হবে না।


সড়ক পরিচ্ছন্ন রাখা


সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে সড়কে পরে থাকা নানার বস্তু। চলাচলের পথে বিভিন্ন জিনিস ফেলে রাখা, ফেলে দেয়া মানুষ এখন কিছুই মনে করে না। অথচ আমার ফেলে যাওয়া বস্তুটিই অন্য একজন মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে বা কষ্টের কারণ হবে, এটা আমরা ভাবিও না।
এক দিন এক সাহাবি বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যার দ্বারা আমি উপকৃত হতে পারব। তিনি বললেন, মুসলিমদের সড়ক থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূরে সরিয়ে রাখো। (মুসলিম : ৬৮৩৯)
রাস্তাঘাট থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে রাখাকে ঈমানের অঙ্গ বলে হাদিসে ঘোষণা রয়েছে। অন্য একটি হাদিসে এসেছে, রসুল সা. বলেন, তোমরা রাস্তার হক আদায় করো। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, রাস্তার হক কী ইয়া রসুলুল্লাহ? তিনি বললেন, ‘দৃষ্টি অবনত রাখা, কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে রাখা, সালামের উত্তর প্রদান, সৎকর্মে আদেশ ও অসৎকর্মের নিষেধ করা।’ (বুখারি ২৪৬৫)
প্রতিদিনই সড়কে মৃত্যুর কথা ভেসে আসে। আর কত এভাবে অকাতরে মানুষ প্রাণ হারাবে। আসুন! আমরা নিজেরা সচেতন হই, পাশের মানুষকে সচেতন করি। তাহলে হয়ত এভাবে অকাতরে প্রাণ হারানোর মাত্রা কমে আসবে।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com