বিয়ে রহমত ও বরকতের কারণ?
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২৯
বিয়ে রহমত ও বরকতের কারণ?
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বিয়ে মুসলিম জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা একটি জীবনকে অন্য আরেকটি জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত। সুতরাং এটার গুরুত্ব অনেক অনেক বেশি।


বিয়ের মাধ্যমে মানুষ নবজীবনে প্রবেশ করে। জীবনে প্রভূত কল্যাণসাধন হয়। বিয়ে রহমত ও বরকতের কারণ। পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করেনি, তাদের বিয়ে করিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নুর ৩২)।


নিজের ছেলের অথবা নিজ কন্যার জন্য নির্বাচিত পাত্রের সাময়িক অভাবকে বিয়ে করার প্রতিবন্ধক মনে করা উচিত নয়। যদি তারা উপার্জনক্ষম এবং পরিবার পরিচালনার সামর্থ্য রাখে। (বয়ানুল কুরআন)। রাসুল সা. বলেছেন, ‘বিয়ে আমার সুন্নত। আর যে আমার সুন্নত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।’ (ইবনে মাজা ১৮৪৬)
রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘হে যুবসমাজ, তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে। কারণ তা দৃষ্টিকে অধিক অবনতকারী, প্রবৃত্তিকে অধিক দমনকারী’ (বুখারি ১৯০৫)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন, ‘তোমরা বিয়ের মধ্যে প্রাচুর্য অনুসন্ধান করো। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তারা দরিদ্র হয়, নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে প্রাচুর্য দান করবেন’ (সুরা নুর ৩২, তাফসিরে ইবনে কাসির, তিরমিজি ১০৬১)।


হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সা. বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা মহান আল্লাহর কর্তব্য। প্রথমজন হলেন আল্লাহর পথে জিহাদ পালনকারী। অতঃপর মুক্তিপণ আদায়ে কাজ করা চুক্তিবদ্ধ দাস এবং পবিত্র জীবনের লক্ষ্যে বিবাহকারী।’ (তিরমিজি ১৬৫৫)
প্রেম করে বিয়ে করা কি জায়েজ


বিবাহপূর্ব প্রেম অনেক সময় বান্দাহকে শিরকের নিকটবর্তী করে দেয়। কারণ অনেক সময় তারা একে অপরকে এতটাই ভালোবাসা শুরু করে দেয় যে প্রকার ভালোবাসা পাওয়ার দাবিদার একমাত্র আল্লাহ। (সুরা বাকারা ১৬৫) শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? (সুরা মায়েদাহ ৯০-৯১)



আসলে ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা মানুষকে গুনাহ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন উপায় বলে দেয়।প্রেম করলে শয়তান অবশ্যই জিনা করতে প্রলুব্ধ করবে। ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম করা হারাম।
বেগানা পুরুষের সাথে বেগানা নারীর প্রেম হারাম। ইসলামে প্রেম জায়েজ তবে সেটা আপনার বিবাহিত স্ত্রীর সাথে। কিন্তু সেই প্রেম হতে হবে বাবার প্রতি সন্তানের যে প্রেম থাকে, প্রতিবেশীর প্রতি প্রতিবেশীর যে প্রেম থাকে। যদি আপনার কোন যুবতী মেয়ের প্রতি যৌন উত্তেজিত প্রেম থাকে তাহলে সেই প্রেম একেবারেই জায়েজ নয়।


বিবাহ পূর্ব প্রেম হারাম। স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না (সুরা আল মায়িদা ৫) এরপর সুরা নুরের এর ৩০ নম্বর আয়াতে পুরুষদের চোখ নীচু রাখতে এবং লজ্জা স্থান হিফাজত করতে বলা হয়েছে। ৩১ আয়াতে নারীদেরও একই কথা বলা হয়েছে, পর্দা করার কথা বলা হয়েছে আর নারীরা কাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে তাদের একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে।
বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্ত


ইসলামি শরিয়তে বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যক ও ন্যূনতম শর্ত হলো, বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। সাক্ষী এমন দুইজন পুরুষ (স্বাধীন) সাক্ষী বা একজন পুরুষ (স্বাধীন) ও দুইজন মহিলা সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ-দুররুল মুখতার ৩/৯ ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/২৬৮)


যে বিয়ে করবে না, সে রসুল সা. এর দলভুক্ত নয়


অনেক বড় এক হাদিসে এ বিষয়ে আলোকপাত হয়েছে। হযরত আনাস ইবনু মালিক রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করল। বলল, নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তার আগের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সালাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সব সময় সওম পালন করব, কক্ষনো বাদ দিব না।


অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, তোমরা কি ঐ সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি সওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। (মুসলিম ১৪০১, আহমাদ ১৩৫৩৪)


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com