
মুমিনের জীবনের লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি। আনুগত্যে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, তাই মুমিনরা ইবাদতে আনন্দ লাভ করেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি খুশি—একটি ইফতারের সময়, অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় (মুসলিম)।’ আল্লাহ তাআলার নির্দেশ, ‘তোমরা সন্ধ্যা (সূর্যাস্ত) পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)।’
ইফতার অর্থ উপবাস ভঞ্জন করা। ভোর থেকে সারা দিন ‘সাওম’ পালন শেষে রোজাদার সূর্যাস্তের পর প্রথম যে পানাহারের মাধ্যমে উপবাস ভঞ্জন করেন, তাকে ‘ইফতার’ বলা হয়। যে খাদ্য বা পানীয় দিয়ে ইফতার করা হয়, তাকে ‘ইফতারি’ বলা হয়। ইফতারের আগেই ইফতারি সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা এবং যথাসময়ে ইফতার করা সুন্নাত। ইফতারি সামনে নিয়ে দোয়া করলে সেই দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রোজাদারের দোয়া আল্লাহর কাছে এতই প্রিয় যে আল্লাহ তাআলা রমজানের সময় ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, ‘রমজানে তোমাদের পূর্বের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তা হলো আমার রোজাদার বান্দারা যখন কোনো দোয়া মোনাজাত করবে, তখন তোমরা আমিন! আমিন!! বলতে থাকবে (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)।’
ইফতারের সময়টি মহান আল্লাহ তাআলার কাছে খুবই পছন্দনীয়। এ সময় যখন কোনো মুমিন ইফতার সামগ্রী নিজের সামনে রেখে নিদিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, তখন আরশের মালিক ওই মুমিনের তাকওয়া (আল্লাহর প্রতি ভয়) ও আনুগত্য দেখে ব্যাপক খুশি হন। যে কারণে ইফতারের সময় আল্লাহর কাছে আমাদের দোয়া সহজেই কবুল হয়।
আবার, ইফতারের মুহূর্তটি রোজাদারের কাছে বিশেষ আনন্দের। কেননা রোজাদার সারাদিন নিজেকে পানাহার ও শরিয়ত নির্ধারিত কাজ থেকে বিরত রাখার পর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও কল্যাণ পেতে ইফতার করে।
ইফতারে কল্যাণ রয়েছে এমনটি বলেছেন স্বয়ং নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় ইফতারের গুরুত্ব ওঠে এসেছে-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় (এ সময় যেকোনো নেক দোয়া কবুল করা হয়)। অন্যটি হলো (কেয়ামতের দিবসে) নিজ প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (তিরমিজি ৭৬৬, বুখারি ৭৪৯২, মুসলিম ১১৫১)
২. অপর এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয় যারা দ্রুত ইফতার করে।’ (তিরমিজি, আলফিয়্যাতুল হাদিস ৫৬০, পৃষ্ঠা ১৩১)
ইফতারের আনন্দের মুহূর্তেই রোজাদারের দোয়া কবুল করা হয়। কারণ ইফতারের সময়টা হলো মহান আল্লাহর জন্য ধৈর্যধারণের মুহূর্ত। হাদিসে পাকে এসেছে-
৩. রোজাদারের দোয়া আল্লাহর কাছে এতই আকর্ষণীয় যে আল্লাহ তাআলা রমজানের সময় ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, ‘রমজানে তোমাদের আগের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তাহলো- আমার রোজাদার বান্দাগণ যখন কোনো দোয়া–মোনাজাত করবে, তখন তোমরা আমিন! আমিন! বলতে থাকবে।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)
৪. অন্য এক হাদিসে এসেছে, রোজা অবস্থায় দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া অগ্রাহ্য করা হয় না (বরং কবুল করা হয়); পিতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া।’ (বায়হাকি ৩/৩৪৫)
৫. হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইফতারের সময় রোজাদারের অবশ্যই একটি দু’আ আছে, যা রদ হয় না (কবুল হয়)। ইবনু আবু মুলাইকা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইফতারের সময় বলতে শুনেছি-
اللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ أَنْ تَغْفِرَ لِي
‘হে আল্লাহ্! আমি আপনার দয়া ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি যা সব কিছুর উপর পরিব্যপ্ত, যেন আপনি আমাকে ক্ষমা করেন।’ (ইবনে মাজাহ ১৭৫৩)
৬. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তাআলা ফেরত দেন না। এক. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। দুই. রোজা আদায়কারীর দোয়া, যতক্ষণ না সে ইফতার করে। তিন. মজলুম ব্যক্তির দোয়া।’ (মুসনাদে আহমাদ ৯৭০৪)
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]