শিরোনাম
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন'
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩, ১০:০৬
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন'
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

যে সকল কথা ও কাজ মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তা থেকে ফিরে এসে ঐ সকল কথা ও কাজে লেগে যাওয়া, যা দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় ও তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা যায়। এক কথায় তওবা হল পাপ-কর্ম থেকে ফিরে এসে সৎকাজে প্রবৃত্ত হওয়া।


শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ বারবার গুনাহ করে ফেলে, আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়। তবে মানুষ যত গুনাহ-ই করুক না কেন তাকে নিষ্কলুষ ও নিষ্পাপ করতে আল্লাহ তায়ালা সবসময় তওবার দরজা খুলে রেখেছেন। কোরআন ও হাদিসে মুসলিম জাতিকে বারবার তওবা ও ইস্তেগফারের কথা বলা হয়েছে।


পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং তাদেরও ভালোবাসেন যারা পবিত্র থাকে।’ -(সুরা : বাকারা, আয়াত, ২২২)


মানুষ যত গুনাহ করে তা মূলত প্রকার। ১) কবিরা গুনাহ। ২) সগিরা গুনাহ। 


কবিরা গুনাহ : কবিরা গুনাহ বলা হয়, যে গুনাহর জন্য পার্থিব জীবনে হদ বা শাস্তি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যেমন—নিরপরাধ মানুষ হত্যা, ব্যভিচার, চুরি ইত্যাদি। কিংবা যে পাপের জন্য পরকালে জাহান্নাম বা আল্লাহর ক্রোধ কিংবা অভিসম্পাতের কারণ বলে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে, যেমন—সুদ খাওয়া, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া ইত্যাদি। এগুলো কবিরা গুনাহ।


সগিরা গুনাহ : সগিরা গুনাহ বলা হয়,যেসব পাপের ব্যাপারে কোনো শাস্তি, আল্লাহর ক্রোধ বা অভিশাপের কথা বলা হয়নি; বরং শুধুই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেসব হলো সগিরা গুনাহ। তবে সেসব গুনাহও কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত হবে, যার অনিষ্ট ও পরিণতি কোনো কবিরা গুনাহর অনুরূপ কিংবা তার চেয়েও অধিক। আবার যেসব ছোট গুনাহ নির্ভয়ে করা হয় কিংবা নিয়মিতভাবে করা হয়, সেগুলোও কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত হবে।


মানুষের কর্তব্য হল, সে সকল প্রকার পাপ থেকে তাওবা করবে, যা সে করেছে। যদি সে এক ধরনের পাপ থেকে তাওবা করে, অন্য ধরনের পাপ থেকে তাওবা না করে তাহলেও সে পাপটি থেকে তাওবা হয়ে যাবে। তবে অন্যান্য পাপ থেকে তওবা তার দায়িত্বে থেকে যাবে। একটি বা দুটো পাপ থেকে তাওবা করলে সকল পাপ থেকে তাওবা বলে গণ্য হয় না। যেমন এক ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে, ব্যভিচার করে, মদ্যপান করে। সে যদি মিথ্যা কথা ও ব্যভিচার থেকে যথাযথভাবে তওবা করে তাহলে এ দুটো পাপ থেকে তওবা হয়ে যাবে ঠিকই। কিন্তু মদ্যপানের পাপ থেকে তওবা হবে না। এর জন্য আলাদা তওবা করতে হবে। আর যদি তাওবার শর্তাবলী পালন করে সকল পাপ থেকে এক সাথে তাওবা করে তাহলেও তা আদায় হয়ে যাবে।


তওবা করে আবার পাপে লিপ্ত হয়ে পড়লে আবারও তাওবা করতে হবে। তওবা রক্ষা করা যায় না বা বারবার তওবা ভেঙ্গে যায় এ অজুহাতে তওবা না করা শয়তানের একটি ধোকা বৈ নয়। অন্তর দিয়ে তওবা করে তার উপর অটল থাকতে আল্লাহ তাআলার কাছে তাওফীক কামনা করা যেতে পারে। এটা তাওবার উপর অটল থাকতে সহায়তা করে।


কুরআন, হাদীস ও উম্মাতের ঐক্যমতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পাপ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব।


আল্লাহ তাআলা বলেন:


وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (سورة النور 


হে ঈমানদারগন! তোমরা সকলে তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।


(সূরা আন-নূর : ৩১)


তিনি আরো বলেন:


وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْه (سورة هود


আর তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাওবা কর।


(সূরা হুদ : ৩)


তিনি আরো বলেন:


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا. (سورة التحريم


হে ঈমানদারগন! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর, বিশুদ্ধ তাওবা।


(সূরা আত-তাহরীম : ৮)


এ আয়াতসমূহ থেকে আমরা যা শিখতে পারি:


১- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকল ঈমানদারকে তাওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন।


২- তাওবা দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য লাভের মাধ্যম।


৩- তাওবার আগে ইসে-গফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তারপর তাওবা। ভবিষ্যতে এমন পাপ করব না বলে তাওবা করলাম কিন' অতীতে যা করেছি এ সম্পর্কে ক্ষমা প্রার্থনা করলাম না। মনে মনে ভাবলাম যা করেছি তা করার দরকার ছিল, ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন কি? তাহলে তাওবা কবুল হবে না। যেমন দ্বিতীয় আয়াতটিতে আমরা দেখি, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আর তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তারপর তাওবা কর।


৪- তওবা ও ইসে-গফার হল পার্থিব জীবনে সুখ শানি- লাভের একটি মাধ্যম যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :


وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَتَاعًا حَسَنًا إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى


আর তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর তৎপর তাওবা কর, তিনি তোমাদের নির্দিষ্ট কাল পর্যন- সুখ-সম্ভোগ দান করবেন। (সূরা হুদ : ৩)


নূহ আলাইহিস সালাম তার সমপ্রদায়কে  বলেছিলেন :


فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا ﴾ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا ﴾ وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا ﴾ (سورة نوح


আমি বললাম, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের সমৃদ্ধি দান করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতে এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। (সূরা নূহ : ১০-১২)


৫- আল্লাহ তাআলা বিশুদ্ধ তাওবা করতে আদেশ করেছেন। বিশুদ্ধ তাওবা হল যে তাওবা করা হয় সকল শর্তাবলী পালন করে। শর্তসমূহ ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে।


বিবার্তা/এসবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com