ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন উপলক্ষ্যে গুলশান এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্হা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রত্যেকটি চেকপোস্ট ও প্রবেশপথে তল্লাশি ছাড়া ও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। বিশেষ করে বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে ও মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধে চেকপোস্টগুলোতে কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ।
সরেজমিনে গুলশান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এ এলাকার বিভিন্ন প্রবেশ পথে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
গুলশান-১ ও গুলশান দুই এলাকায় প্রবেশপথে কাকলি, বনানী, গুলশান-১ গুলশান ২, বাড্ডা লিং রোড, নতুন বাজার ও কালাচাঁদপুর এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি পরিচালনা করছে শৃঙ্খলা বাহিনী।
এসব এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশ ও নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল বন্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে ট্রাফিক পুলিশ। তবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা সত্বেও অনেক যানবাহন ও বহিরাগতদের গুলশানে প্রবেশের চেষ্টা করতে দেখা যায়। তবে প্রত্যেকটি চেকপোষ্টে তাদেরকে আটকে দিচ্ছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে গুলশান ট্রাফিক বিভাগের গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার(এডিসি) এ এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা ঢাকা ১৭ আসনে উপনির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা মেনে কাজ করছি। প্রত্যেকটি চেকপোস্টে ক্রাইম ডিভিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে তল্লাশি পরিচালনা করছে ট্রাফিক সদস্য। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোন বহিরাগত বা যানবাহনকে গুলশানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
তবে গুলশান-২ ঢোকার মুখে চেকপোস্টে যানবাহনের চালকরা অনুরোধ করে ট্রাফিক সদস্যদেরকে জানান, চাকরির কারণে তারা এলাকায় এসেছে।
তবে পুলিশের বাধায় বাধ্য হয়ে তারা ফিরে যাচ্ছেন। এ সময় অনেক যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিতে দেখা যায ট্রাফিক পুলিশকে।
সেখানে কর্তব্যরত গুলশান ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ১৬ জুলাই মধ্যরাত ১২টা থেকে ১৭ জুলাই মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ট্রাক, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার ও ইজিবাইক। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে কোনো কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারবে জানিয়ে তিনি বলেন, অনুমতি ছাড়া কোন মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না।
নির্বাচন কমিশনের এসব নির্দেশনা সত্ত্বেও যারা আজকে গুলশান এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করতেছেন তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ও মামলা দেওয়া হচ্ছে।
কাউকে কাউকে বুঝিয়ে ফেরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাত বারোটা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রাফিক বিভাগের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা-১৭ উপনির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে এ সংসদীয় আসনে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৫, ১৮, ১৯ ও ২০ ওয়ার্ড এবং ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ৭২ ঘণ্টার জন্য মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কমিশন।
এসব এলাকায় গত শনিবার (১৫ জুলাই) মধ্যরাত ১২টা থেকে আগামী মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এর বাইরেও ১৬ জুলাই মধ্যরাত ১২টা থেকে ১৭ জুলাই মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ট্রাক, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার ও ইজিবাইক। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে কোনো কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারবে।
ইসির তথ্যানুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড নং ১৫, ১৮, ১৯, ২০ এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে ঢাকা-১৭ আসন গঠিত। এ উপনির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র পাহারায় ২১ জনের পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে ফোর্স নিয়োজিত রয়েছে। তারা দায়িত্ব পালন করবে ভোটের পরের দিন পর্যন্ত। তবে অঙ্গীভূত আনসার পাঁচদিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ান আনসারের ১৫টি, র্যাবের ৬টি টিম ও ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে ২৫ জন নির্বাহী ও ৫ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৬২৫ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮০ জন। ১২৪টি কেন্দ্রের ৬০৫টি কক্ষে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে। এই উপনির্বাচন সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে সরাসরি মনিটরিং করবে ইসি।
রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য হবে। তাছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি/বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং জরুরি কাজ যেমন- এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য উল্লিখিত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে উক্ত নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। জাতীয় মহাসড়ক বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এরূপ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
সাবিক বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সতর্ক রয়েছি আমরা।
বিবার্তা/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]