দোলনচাঁপা
প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩, ১৩:১০
দোলনচাঁপা
আসিকুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

দোলনচাঁপা তোমাকে পূর্বের আকাশের যেসব তারার কথা বলতাম
মনে আছে?
তারাগুলো আমার ভীষণ প্রিয়। মন খারাপ হলেই তাদের সাথে গল্প জুড়তাম।
এখনো যখন মন খারাপ থাকে
তখন তারাগুলোর সাথে মহাকাল জুড়ে গল্প করি।
তোমার মনে আছে?
তোমাকে এই তারাগুলোর কথাই বলতাম।
এই যে ধরো এখন তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু কিভাবে বলি
পৃথিবীতে যে আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে সে কতকাল আগে।


দোলনচাঁপা তোমাকে যে বলতাম
চাঁদের প্রতি আমার মারাত্মক রকমের ভালোবাসা আছে,
তুমি জানো প্রতি রাতে তার মাদকতা আমায় গ্রাস করতো?


জানো পৃথিবীর আকাশে চাঁদ না উঠলে আমি কি করতাম!


ও আচ্ছা তোমাকে তো বলাই হয়নি
আমার জোনাকির বাগান ছিল
সেখানে পৃথিবীর সব সুন্দর জোনাকির বসবাস ছিল।
তাদের আমি তোমার মন খারাপের দিনে
চাঁদ আর জোছনার গান শুনাতাম।


রাতে যখন জোনাকিদের সাথে দেখা করতাম
তখন তারা সমস্ত ঝিঁঝি পোকাদের দাওয়াত করত শুধু আমায় গান শোনানোর জন্য।
ঝিঁঝিদের শব্দের তানে
আমি যেন কেমন বিভোর হয়ে গেছি... তোমাকে কি যেন বলছিলাম
সব ভুলে গেছি।
আমার শুধু এখন তোমাকেই মনে আছে আর... তুমিই।





দোলনচাঁপা তুমি নাকি সবাইকে বলেছো
আমি নাকি কিছুই গোপন রাখতে জানি নাহ।
আমায় দেখো তো
এই ব্রহ্মান্ডের কত কিছুর গোপনীয়তা যে আমি ধরন করে আছি তা ভাবার জন্য তোমার এই ছোট্ট মস্তিষ্ক যথেষ্ট নাহ।


নাহ নাহ তোমায় অবজ্ঞা করছি নাহ
এই কি তুমি রাগ করেছো?





তুমি রাগলে আমার মনে হয়
এই লাল টমেটো বুঝি আমায় খেয়ে ফেলে। যখন দেখি আমায় ভয় পেতে দেখে তুমি হাসছো!


এই ভেবে হাফ ছাড়ি যে যাক অন্তত শেষ রক্ষাটা হলো।।


দোলনচাঁপা তোমার মনে আছে একবার
আমি তোমায় মিথ্যে বলে কাঁদিয়ে ছিলাম।


তুমি কাঁদছিলে আর আমি আড় চোখে তাকিয়ে ছিলাম আর ভাবছিলাম এমন মায়াবির মায়াবি কান্না দেখি নাহ কত দিন।


তারপর আমি যখন দেখলাম তুমি চুলে বেণি করনি, চোখদুটোর গভীরে রক্ত জবা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।


আমি আমার আত্মার রোষানলে পুড়ে বাষ্পে বাষ্পে পুঞ্জিভূত মেঘকনিকা হয়ে তোমায় ছায়া দিচ্ছিলাম।


কাঁদতে কাঁদতে তুমি যখন শিউলি গাছের তলায় বসলে, তোমার উপর বর্ষা হয়ে নেমে আসলাম সেদিকে তোমার ভ্রুক্ষেপ ছিলা না
যখন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম ভালোবাসি
তুমি তখন খুশিতে আটখানা হয়ে
আমায় শ্বাসরোধ করে মারলে।


তারপর আবার ভালোবাসলে।


দোলনচাঁপা তোমার মনে আছে?





দোলনচাঁপা
তুমি কাঁদলে তোমাকে কতটা সুন্দর দেখায় জানো !
তোমার চোখ দেখলে শত আলোক বর্ষ দূরের ওই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি তোমার চোখের ওই ব্ল্যাকহোলে পতিত হতে চাইবে।


এই ভাবে যে কাঁদছো তার জন্য আমায় কতটা খেসারত দিতে হবে ভেবে দেখেছো?
জানো তোমার এই কান্নার জন্য গ্রহাণুপুন্জ আমায় নির্বাসন দিবে দূরের ওই গ্যালাক্সিতে।
তখন বহু আলোক বর্ষ
তারাদের সাথে আমার আর গল্প করা হবে নাহ।
জোনাকি আর ঝিঁঝি পোকাগুলো আমায় ভুলে যাবে,
আর তাদের সুরের আসরে আমি থাকবো নাহ।


তোমার দোহাই তুমি কেঁদো নাহ।


তোমার কান্না উপভোগ করা শুধু আমাকেই শোভা পায়
তুমি আর কাদবে নাহ।





জানো আমি আজো ভূতে ভয় পাই।


তুমি ভাবছিলে আমি তাই বলব?
নাহ আমি আর ভূতে ভয় পাই নাহ।
সত্যি বলছি বিশ্বাস করো।।


দোলনচাঁপা তুমি জানো,
আমি যখন আমাদের এই গ্যালাস্কির পথ দিয়ে হাটছিলাম নাম না জানা কত কিছুই আমায় ভয় দেখিয়েছে,
সামনে পথ চলতে বাধা হয়েছে?
কিন্তু পৃথিবীর প্রেত পিশাচের তুলানায় তা নিত্যন্তই সামান্য।


পৃথিবীতে যে আমাকে প্রেত আর পিশাচের গল্প শুনাতে,
ভয় দেখাতে,
তোমায় হাসানোর জন্য আমি যে ইচ্ছে করে ভয় পাওয়ার ভান করতাম,তা কি তুমি জানতে?


আমি আসলে পুরো দস্তুর অভিনেতা ছিলাম।
তুমি কি জানো পৃথিবীতে আমি শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের জন্য অস্কার জিতেছিলাম।।
ওহহ তোমাকে তা বলা হয়নি।।





তুমি জানো,
পৃথিবীতে আমার তোমার সাথে বৃষ্টি বিলাসের কত ইচ্ছে ছিল?
আমি ভাবতাম ঝুম বৃষ্টিতে
আমরা নগ্ন পায়ে নদীর তীরে বসে থাকবো।
বসে বসে পানকৌড়ির আর মাছরাঙার চিংড়ি ধরার উৎসব দেখবো।


আহ কত স্বপ্ন ছিল।


কিন্তু তার আগেই আমার নির্বাসন শুরু হয়ে গেল।
সেদিন আর আর এলো নাহ।
আচ্ছা আমি কি কোনো সাজা প্রাপ্ত আসামি
নাহয় তোমার ওই পৃথিবী আমার সাথে এমন করলো কেন?


তুমি বলো?


আমি এখন এক পাশলা বৃষ্টির জন্য কতো হাহাকার করি ,তাও এই মহাশূন্যে বৃষ্টি পাবো কোথায়।





দোলনচাঁপা,
তোমার পৃথিবীতে আমি কখনো চাঁদ হতে চাইনি,
হতে চেয়েছিলাম উওরের ওই ধ্রুব তারা।


দোলনচাপাঁ তোমার মনে আছে ,
একদিন চাপা কান্নার স্বরে তুমি আমায় প্রশ্ন করেছিলে কেন আমি এই অসীম মহাকাশের পথে পাড়ি জমালাম?


তুমি বলেছিলে, তোমার মনে আছে?


সেদিন তুমি
আমার ভালোবাসার চাতক হয়ে
পিউ পি পি পিউ কণ্ঠে সুর তুলে আমায় ভালোবাসার কথা বলেছিলে।
জানো, কোন সেদিন তোমায় ভালোবাসার কথা প্রকাশ করিনি, ভালোবাসিনি?
সত্যি কথা কি জানো তুমি আমার এই ভালোবাসার মূল্য বুঝতে নাহ, বুঝবেও নাহ
তাই তোমায় আর ভালোবাসিনি ।


তোমার আকাশে চাঁদই মানানসই,
ধ্রুব তারা সেখানে বেমানান।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com