বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলার পথিকৃৎ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। তার ১০৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জয়নুল উৎসব-২০২৩।
মেলায় প্রতিবারের মতো এবারো অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হস্তশিল্পীরা। শোলা ও বেতের শিল্পকর্ম, শীতল পাটি, মাটির টেপা পুতুল, আঁকা ছবি, বায়োস্কোপের বাক্সসহ অনেক কিছুর সমারোহে প্রথম দিনেই বর্ণিল হয়ে উঠেছে মেলা।
২৯ ডিসেম্বর, শুক্রবার সকালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই উৎসব। এরপর চারুকলার বকুলতলায় উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী হাশেম খান ও ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী রফিকুন নবী, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ছেলে প্রকৌশলী মইনুল আবেদিন, বিকাশের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) মীর নওবত আলী। সভাপতিত্ব করেন চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চারুকলার মৃৎশিল্প বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রবিউল ইসলাম। উৎসবে জয়নুল মেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সম্মাননা প্রদান, শিল্পীদের পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক উৎসব। এ বছর জয়নুল সম্মাননা পেয়েছেন শিল্পী কাজী গিয়াস উদ্দীন ও শিল্পী আবদুস সাত্তার। স্বর্ণপদক পেয়েছেন চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুপ্রিয় কুমার ঘোষ। ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী হাশেম খান ও ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী রফিকুন নবী তাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, মানুষের জীবন একটা শিল্প। আর চারুকলায় এলে বাংলার সংস্কৃতি খুঁজে পাওয়া যায়। এখানে এলে প্রাণের সন্ধান পাই। আবহমান বাংলার স্পর্শ দিতে পারে চারুকলা।
অধ্যাপক রফিকুন নবী বলেন, সম্মাননা পাওয়া ও স্বর্ণপদক পাওয়া শিল্পীরা আমার ছাত্র। কাজী গিয়াস ছাত্র থাকার সময় খুব যন্ত্রণা করত। মাঝরাতে বাসায় গিয়ে উপস্থিত হতো জলরং করবে বলে। তখন থেকেই তার নিষ্ঠা, যে কোনো কিছু গ্রহণের ক্ষমতা- সব নিয়ে নিজেকে তৈরি করেছে সে। শিল্পী আবদুস সাত্তার যখন ছাত্র ছিলেন, তখন যেখানেই ছবি পাঠাতেন, সেখান থেকেই পুরস্কার পেতেন। শিল্পীর জন্য এটা অনেক বড় ব্যাপার।
শিল্পী নিসার হোসেন বলেন, নির্বাচন সামনে, বর্তমানে দেশে কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এর ফলে জয়নুল উৎসবটি যতটা বিস্তৃতভাবে করার ইচ্ছা ছিল, তা থেকে দু-একটা বিষয়ে সরে আসতে হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে এ আয়োজন যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে করা হয়েছে। বাবা জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে ঢাকা থেকে
তিনটি ফেরি অতিক্রম করে ময়মনসিংহে যাত্রার স্মৃতিচারণ করে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ছেলে প্রকৌশলী মইনুল আবেদিন বলেন, চারুকলা হচ্ছে নিঃশ্বাস নেয়ার জায়গা। বাবা আমাকে এখানে নিয়ে আসতেন। চারুকলার একটা স্কুলও ছিল তখন। এখনো মন খারাপ হলে এখানে এসে আশ্রয় নিই।
মীর নওবত আলী বললেন, জীবদ্দশায় জয়নুল আবেদিন এমন একটি প্রতিষ্ঠান রেখে গেছেন বলেই এই প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি হয়েছেন অনেক গুণী মানুষ।
আগামী মাস থেকে নারায়ণগঞ্জে মাসব্যাপী কারুশিল্প মেলা শুরু হওয়ার তথ্য জানালেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী নূরুল ইসলাম।
বিকাশের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) মীর নওবত আলী বললেন, জীবদ্দশায় জয়নুল আবেদিন এমন একটি প্রতিষ্ঠান রেখে গেছেন বলেই এই প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি হয়েছেন অনেক গুণী মানুষ। জয়নুল উৎসবের এই পর্বের সঞ্চালনা করেন চারুকলার মৃৎশিল্প বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রবিউল ইসলাম।
এরপর অতিথিরা মেলা ঘুরে দেখেন। এবারের মেলায় প্রতিবারের মতো অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হস্তশিল্পীরা। মেলায় রয়েছে শোলা ও বেতের শিল্পকর্ম, শীতল পাটি, মাটির টেপা পুতুল, আঁকা ছবি, বায়োস্কোপের বাক্সসহ অনেক কিছু।
মেলা চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবারের জয়নুল মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]