‘ডিম থেরাপি’ কেন দেয়া হয়, কতটা কার্যকর?
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:৩৩
‘ডিম থেরাপি’ কেন দেয়া হয়, কতটা কার্যকর?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মানুষের রোগ-ব্যাধি ও দুর্ভাগ্যের সঙ্গে লড়াইয়ের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে ওঠার আগে মানুষ ভরসা রাখত প্রকৃতির উপাদান, আচার-অনুষ্ঠান কিংবা বিশ্বাসের ওপর। সেই বিশ্বাসে বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছিল ডিম। অনেক দেশে এখনো প্রচলিত আছে এক ধরনের লোকাচার—যা ‘ডিম থেরাপি’ নামে পরিচিত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আসলেই কি ডিম দিয়ে রোগ সারানো সম্ভব, নাকি এটি শুধু কুসংস্কার?


লোকবিশ্বাসে ডিম থেরাপি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক গ্রামে দেখা যায়, কোনো শিশু অসুস্থ হলে বা কারও দৃষ্টিদোষ হয়েছে মনে হলে মাথার চারপাশে কাঁচা ডিম ঘোরানো হয়। পরে সেটি ভেঙে দেখা হয়—ধারণা করা হয়, খারাপ শক্তি বা ‘নজর’ ডিমের ভেতরে চলে গেছে।


এমন প্রথা শুধু আমাদের অঞ্চলে নয়; মেক্সিকো, পেরু, কিউবা, ফিলিপাইনসহ লাতিন আমেরিকার দেশে লিম্পিয়া নামে একটি আচার প্রচলিত। সেখানে ডিম দিয়ে শরীর মুছে সেটি পানিতে ভাঙা হয় এবং ডিমের ভেতরের আকৃতি দেখে অসুখ বা দুর্ভাগ্যের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। অনেক সংস্কৃতিতে ডিমকে জীবনের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, তাই ডিম ব্যবহার করে শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে নেগেটিভ এনার্জি দূর হওয়ার বিশ্বাসও বিদ্যমান।


ডিমকে ঘিরে বিশ্বাস বহু পুরোনো। প্রাচীন মিশর ও গ্রিসে এটি ছিল উর্বরতা ও নতুন জীবনের প্রতীক। আবার মধ্যযুগীয় ইউরোপে কিছু সম্প্রদায় রোগ ও অশুভ আত্মা তাড়াতে ডিম ব্যবহার করত। ভারতীয় উপমহাদেশেও লোকজ চিকিৎসায় ডিমের ব্যবহার ছিল ব্যাপক।


ডিম প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ায় ডায়েটে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনেক সময় ডায়েট প্ল্যানকে মজা করে ‘ডিম থেরাপি’ বলা হয়।


সৌন্দর্যচর্চায়—চুল ও ত্বকের যত্নে—ডিমের ব্যবহার প্রচলিত, যা অনেকে ‘থেরাপি’ বলে থাকেন।


আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, ডিম থেরাপি কোনো বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নয়। ডিম ঘুরিয়ে অসুখ সেরে যায়—এমন কোনো প্রমাণ নেই। ডিম ভেঙে রোগ নির্ণয়ের প্রচলন কেবল কুসংস্কার।
কাঁচা ডিম ব্যবহারে স্যালমোনেলা সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে, যা বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য বিপজ্জনক।
তবে ডিমের পুষ্টিগুণ বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত, নিয়মিত খেলে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সৌন্দর্যচর্চায় এর ব্যবহার ক্ষতিকর নয়, যদিও একে ‘থেরাপি’ বলা সঠিক নয়।


সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ডিম থেরাপির মতো প্রথা মানুষকে মানসিক স্বস্তি দেয়। অসুস্থ অবস্থায় এটি চিকিৎসার বিকল্প না হলেও রোগীর মনে ভরসা তৈরি করে, যা মনোবল বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।


অতএব, ডিম থেরাপি বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নয়—এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে এটি মানুষের বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের অংশ হয়ে আজও টিকে আছে। চিকিৎসার বিকল্প না হলেও লোকাচারের প্রতীক হিসেবে এর অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না।


বিবার্তা/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com