অটিজম মূলত অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বা এএসডি। এটি এমন এক জটিল অবস্থা যাতে কথা বলতে, যোগাযোগ করতে এবং আচরণের ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। অটিজমে আক্রান্ত রোগীর পক্ষে শব্দ, অঙ্গভঙ্গি, মুখের অভিব্যক্তি এবং স্পর্শের মাধ্যমে নিজের ভাব প্রকাশ করা কঠিন। পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন জিনিস শেখার ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে।
কখনো কখনো আক্রান্তের দক্ষতা অসম ভাবে বিকশিত হয়। যেমন—কথোপকথনে সমস্যা হলেও সংগীত, গণিত, স্মৃতি বা কোনো নির্দিষ্ট শিল্পে রোগী অস্বাভাবিক রকম ভালো হতে পারে।
প্রাথমিক লক্ষণগুলো কী?
চিকিৎসকদের মতে, শিশুদের বৃদ্ধির একাধিক স্তর থাকে। দৈহিক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক বৃদ্ধিও এমনই একটি স্তর। এই সময়ে শিশু মাকে দেখে হাসে, কোনো কিছুর দিকে আকার ইঙ্গিতে নির্দেশ করে কিংবা শিশুর শব্দস্ফুরণ হয়। অর্থাৎ সমাজে চলতে শেখার শুরু হয়। এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন না হওয়াই অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের লক্ষণ।
তাদের মতে, কারও সঙ্গে মেলামেশা না করা, অনেক খেলনার মাঝেও কেবল একটি খেলনা নিয়ে খেলা, নতুন কিছুতে আগ্রহ না দেখানো, নাম ধরে ডাকলে সারা না দেওয়া বা একটানা আপন মনে থাকার মতো লক্ষণ এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলোর মধ্যে অন্যতম।
চিকিৎসকরা বলেন, ‘সদ্যোজাত অবস্থা থেকেই এই সমস্যা শুরু হতে পারে। তবে মূলত স্কুলে যাওয়ার বয়সের আগেই মূল উপসর্গগুলো পরীক্ষা করা দরকার। আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকস ১৬ থেকে ২৪ মাস বয়সী শিশুদের বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছে।’
এই পরীক্ষা প্রাথমিকভাবে বাড়িতে মা-বাবাই করতে পারেন। বয়স অনুযায়ী শিশুর ব্যবহারে কোনো অসামঞ্জস্য দেখলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে বলেও জানান তিনি। তবে অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক শিশুদেরও বৃদ্ধি দেরিতে হতে পারে, তাই অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ, ‘সবচেয়ে সহজ উপায় হলো পোলিও টিকার সঙ্গে যে কার্ড দেওয়া হয় সেটি দেখা। টিকাকরণের কার্ডে একাধিক ভাষায় বয়স অনুসারে শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও প্রবৃত্তির লক্ষণ লেখা থাকে। বাবা-মা এই ধাপগুলো মিলিয়ে দেখতে পারেন। যদি গন্ডগোল চোখে পড়ে, তবে অবিলম্বে যোগাযোগ করতে হবে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে।’
পরিসংখ্যানগতভাবে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে অটিজম চারগুণ বেশি দেখা যায়। তবে যে কোনো জাতিগোষ্ঠী বা সামাজিক পটভূমির মানুষের মধ্যেই এই রোগ দেখা দিতে পারে। জীবনধারার সঙ্গে এর বিশেষ কোনো যোগ নেই। তবে পরিবারে এই রোগের ইতিহাস থাকলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি বেশি বয়সে সন্তানধারণ করলে, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অ্যালকোহল বা অ্যান্টি-সিজার জাতীয় ওষুধ খেলে অটিস্টিক শিশু জন্মানোর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কিছু গবেষণায় ডায়াবিটিস, স্থূলতা, ফিনাইলকিটোনুরিয়া এবং রুবেলা এই রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে বলে দাবি করা হলেও এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
চিকিৎসা
এখন পর্যন্ত অটিজমের বিশেষ কোনো প্রতিকার নেই। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে অটিজমে আক্রান্ত শিশুর বিকাশ সহজতর হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসককে বলা দরকার। রোগীভেদে প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়াও আচরণ ও যোগাযোগ ভিত্তিক বিভিন্ন থেরাপি, ইন্টিগ্রেশন থেরাপি, দৃশ্য-শ্রব্য মাধ্যমের ব্যবহার ও সৃজনশীল নানা অভ্যাসের অনুশীলনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]