
বাইরে প্রচণ্ড গরম। সঙ্গে বাড়ছে হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোকের ঝুঁকি। হিট স্ট্রোকের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো জানা থাকলে নিজে যেমন সচেতন থাকা যায়, অন্যদেরও দিকেও খেয়াল রাখা যায়।
হিট স্ট্রোক এক ধরনের হাইপারথার্মিয়া। হাইপার হচ্ছে অধিক মাত্রা, আর থার্মিয়া মানে তাপ। শরীরে অধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকেই বলা হয় হিট স্ট্রোক।
আমাদের শরীরের ভেতরে নানা রাসায়নিক ক্রিয়ার কারণে সব সময় তাপ সৃষ্টি হতে থাকে। ঘামের সাহায্যে সেই তাপ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু একটানা রোদে থাকলে গরমে ঘামের সঙ্গে শরীরের অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যায়।
শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যাওয়ায় ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি হয়। ঘামের সঙ্গে লবণ বেরিয়ে যাওয়াতে লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে শরীরকে করে তোলে অবসন্ন ও পরিশ্রান্ত।
এতে মাথাঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন অনেকেই। তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে মৃত্যুও হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বাচ্চা, বয়স্ক ও যারা ওবেসিটিতে ভুগছে তারা হিট স্ট্রোকে সহজেই আক্রান্ত হয়।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ
তীব্র মাথাব্যথা : প্রচণ্ড গরমে মাথাব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া গরমে মানুষের মাইগ্রেন বাড়র পারে। এটি হিট স্ট্রোকের একটি লক্ষণ হতে পারে।
প্রচণ্ড তৃষ্ণা, পানিশূন্যতা, ঘাম : হিট স্ট্রোকের আগে ওই ব্যক্তি চরম তৃষ্ণা অনুভব করতে পারে, সেই সঙ্গে ডিহাইড্রেটেড এবং আড়ষ্টতা অনুভব করতে পারে। শরীর নিজেকে ঠাণ্ডা করার জন্য অতিরিক্ত ঘাম তৈরি করতে পারে।
দ্রুত হৃদস্পন্দন : হিট স্ট্রোকের আগে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত হতে পারে।
হাইপারভেন্টিলেশন : শ্বাসকষ্ট এবং দ্রুত ও ভারী শ্বাস-প্রশ্বাসও হিটস্ট্রোকের লক্ষণ।
বমি বমি ভাব : মাথাব্যথা, দ্রুত হৃদস্পন্দন ও হাইপারভেন্টিলেশন থেকে অক্সিজেনের অভাব ইত্যাদির কারণে হিট স্ট্রোকের আগে বমি বমি ভাব হতে পারে।
বিরক্তি, বিভ্রান্তি বা প্রলাপ বকা : অতিরিক্ত তাপের কারণে হিটস্ট্রোকের আগে মানুষ বিরক্ত বোধ করতে পারে, রাগান্বিত হতে পারে, অযৌক্তিক কথা বলতে পারে এবং এমনকি প্রলাপ পর্যন্ত বকতে পারে।
কথা জড়িয়ে যাওয়া : হিট স্ট্রোকের অন্যতম লক্ষণ কথা জড়িয়ে যাওয়া। কোনো ব্যক্তি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগে অসংলগ্ন কথা বলা শুরু করতে পারে।
পেশীতে ব্যথা : হিট স্ট্রোকের আগে যেসব লক্ষণ দেখা যায়, তারমধ্যে একটি হলো পেশী ব্যথা। যদিও সাধারণ ব্যথা ভেবে মানুষ এটা গুরুত্ব দেয় না।
দুর্বলতা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া : অতিরিক্ত উত্তাপে শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কাজ করে। শরীরে আরও ক্লান্তি ও দুর্বলতা তৈরি হয়। ব্যক্তি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। এগুলো হিট স্ট্রোকের লক্ষণ।
ঘাম না হওয়া : হিট স্ট্রোকের একটি লক্ষণ হলো প্রচণ্ড গরমেও ঘাম না হওয়া। সাধারণত এর মানে হচ্ছে, শরীরে ঘাম হওয়ার মতো পানি আর নেই বা শরীরের প্রাকৃতিক শীতল প্রক্রিয়াটি কাজ করছে না।
গরমে বাড়ি থেকে কম-বেশি সবাইকেই বের হতে হয়। তবে হিট স্ট্রোক এড়াতে যতটা সম্ভব ছায়ার মধ্যে থাকার চেষ্টা করুন। পানি ও পানি জাতীয় খাবারের মাধ্যমে হাইড্রেটেড থাকুন। তবে কৃত্রিম চিনিযুক্ত পানীয় থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
প্রতিকারে কী করবেন
যতটুকু সম্ভব এই গরমে রোদে কম বের হতে হবে। একান্তই বের হতে হলে সঙ্গে পানির বোতল রাখা দরকার ও মাঝে মাঝে পানি পান করা উচিত। তা না হলে শরীর অবসন্ন মনে হওয়া মাত্রই ছায়াযুক্ত বা শীতল কোনো স্থানে বিশ্রাম করতে হবে।
যদি অবস্থা খারাপ মনে হয় তাহলে ঠান্ডা পানিতে ভেজানো কাপড় শরীর মুছে দিতে হবে। খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে, যাতে শরীরের লবণ ও জলের শূন্যতা দূর করতে পারে। অজ্ঞান হয়ে গেলে বা মাথা ঘোরালে মাথায় পানি ঢালতে হবে। তাতেও যদি অবস্থার উন্নতি না হয়, তাহলে হিট স্ট্রোকে আক্রান্তকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]