আপনার শিশু মোবাইল দেখে খায়? হচ্ছে স্মৃতিশক্তির হ্রাস!
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৮
আপনার শিশু মোবাইল দেখে খায়? হচ্ছে স্মৃতিশক্তির হ্রাস!
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রারম্ভিক শৈশব হচ্ছে সেই সময়টা যখন শিশুর যত্ন ও বেড়ে ওঠার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি খেয়াল করা প্রয়োজন। শিশুর জন্মের পর প্রথম আট বছর তার বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। এটি সময়টি পরিবর্তনের এবং সে পরিবর্তন শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের।


ইউনিসেফ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, শিশুর প্রথম তিন বছর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে শিশুর মস্তিস্ক নমনীয় থাকে এবং দ্রুত বিকশিত হয়। শিশুর ভালো ও খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো মস্তিস্কের বৃদ্ধির ওপর কড়া প্রভাব ফেলে । এই সময়ে অবহেলা বা নির্যাতন শিশুর বুদ্ধিবৃত্তি, আচরণ ও আবেগের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে।


শিশুর বয়স ছ’ মাস হতে না হতেই ইদানীং মা-বাবারা তাদের মন ভোলানোর জন্য মোবাইল কিংবা টিভিতে নানা ধরনের কার্টুন চালিয়ে দিচ্ছেন। হাঁ করে খুদে তাকিয়ে থাকছে স্ক্রিনের দিকে। সময় কেটে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।


আবার, কেউ বাচ্চাকে মোবাইল দেখিয়ে খাওয়ায়। মোবাইল দেখে দেখে খাওয়া একটা সমস্যা। এতে শিশু মোবাইলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। আবার খাওয়ার সময় সে কী খাচ্ছে তার সঙ্গেও তার যোগাযোগ থাকে না। মোবাইল দেখে খাওয়ার সময় শিশুর মনোযোগ দুই দিকে ভাগ হয়ে যায়। কম্পানিগুলো তাদের ব্যাবসায়িক সুবিধার জন্য নিত্যনতুন ফিচার যোগ করে মোবাইলে। এতে এর ভোক্তা দিন দিন বাড়ে। এ জন্য সে শিশু হোক কিংবা বড়—বেশি ব্যবহার করলে আসক্তি তৈরি হবেই।


 সাম্প্রতিক গবেষণার মতে, ১ বছর বয়স হওয়ার আগে যত বেশি ক্ষণ শিশুরা মোবাইল, টিভি কিংবা ট্যাবের দিকে তাকিয়ে থাকবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্মৃতিশক্তি ততই হ্রাস পাবে।


জামা পেডিয়াট্রিক গবেষণাপত্র অনুযায়ী, ১ বছরের কমবয়সি শিশুরা, যাঁরা ২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে টিভি, ফোন দেখে, ৯ বছর বয়সে গিয়ে তাদের স্মৃতিশক্তি অন্যদের তুলনায় অনেকটাই কম হয়। পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে, পড়া বুঝতে, কাউকে মনে রাখার ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়। এই সব খুদেদের মানিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই অভ্যাসের কারণে। গবেষণা অনুযায়ী, স্ক্রিন টাইমের সঙ্গে স্মৃতিশক্তি লোপের সরাসরি সম্পর্ক না হলেও পরোক্ষ ভাবে এর প্রভাব পড়ে শিশুমনের উপর। 


গবেষকদের মতে ২ বছরের নীচে শিশুদের টিভি, মোবাইল ফোন দেখানো উচিতই না। ২ থেকে ৫ বছরের শিশুদের দিনে ১ ঘণ্টার বেশি ফোন দেখানো তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।


শিশুদের টিভি, ফোন দেখার অভ্যাসে বাবা-মায়েরা রাশ না টানলেই মুশকিল। ৫ বছরের উপরের শিশুদেরও বাঁধাধরা সময়ে টিভি, ফোন দেখার অনুমতি দিতে হবে। ইদানীং অনলাইনে পড়াশোনার চল বেড়েছে। তাই কতটা সময় শিশুরা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখছে, তার উপর নজর রাখুন।


শিশু জন্ম হওয়ার পর থেকেই নানাভাবে তার মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। চারপাশের নানা কিছু পর্যবেক্ষণ ও দেখার মধ্য দিয়ে শিশুর মানসিক উন্নতি সাধন হয়। কিন্তু শিশু যখন মোবাইল দেখে খাচ্ছে, তখন সে বাইরের জগত্ থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। টানা এ রকম চলতে থাকলে একসময় তার মধ্যে মোবাইল আসক্তি তৈরি হবে। মোবাইলের প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরি হবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর মধ্যে আরো নিত্যনতুন কৌতূহল তৈরি হবে মোবাইল নিয়ে। এই সময় অন্যদের সঙ্গে কথা বলা, গল্প করা, খেলাধুলা, সামাজিক মেলামেশার মতো বিষয়গুলো তার মধ্যে তৈরি না-ও হতে পারে। একসময় দেখা যায়, শিশুরা মোবাইল ছাড়া একমুহূর্ত থাকতে পারে না। পড়াশোনা থেকে শুরু করে নানা বিষয় নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়। কারণ শিশুরা খেলতে খেলতে অনেক কিছু শেখে। যেটা তাদের মধ্যে ভবিষ্যত্ জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহায্য করে। মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকায় সেই দক্ষতাটুকু আর তাদের মধ্যে তৈরি হয় না।


খাবারের পুষ্টিগত প্রভাবের সঙ্গে আমাদের মনের সম্পর্ক রয়েছে। আমরা কী খাচ্ছি, তা যদি জেনে-বুঝে না খাই তাহলে সেই পুষ্টিগত প্রভাব থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা থেকে যায়। এ জন্য মোবাইল দিয়ে শিশুকে এখন থেকেই খাবার খাওয়ানোর চর্চা বাদ দিন।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com