
‘আলফা-কেরাটিন’ নামক একটি প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয় চুল, একই উপাদান দিয়ে তৈরি হয় নখও। এই উপাদানের প্রধান কাজ হল এর নিচে থাকা ত্বককে সুরক্ষা দেওয়া।
কারও কারও নখের মধ্যে হঠাৎ সাদা দাগ গজিয়ে উঠতে দেখা যায়। এ নিয়ে প্রচলিত নানা কথা ছড়িয়ে রয়েছে চারদিকে। কেউ বলেন, ক্যালশিয়ামের ঘাটতি থাকলে না কি নখে এমন দাগ হয়। আবার কেউ বলে থাকেন, নখে এমন দাগ থাকলে নাকি বাড়িতে অতিথি আসেন। শরীরে নানা রকম যৌগের অভাব থাকলে বাইরে তার কোনও না কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায়। এটিও তেমন একটি। পুষ্টিবিদরা বলেন, নখের এই দাগ আসলে জ়িঙ্কের অভাবে হয়ে থাকে।
আয়রনের পরে শরীরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ যৌগ হল জ়িঙ্ক। হার্ট, ফুসফুস এবং হাড়ের স্বাস্থ্য মজবুত রাখতে জ়িঙ্কের ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়াও শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে এই যৌগটি বিশেষ ভূমিকা আছে। নখে ফুটে ওঠা সাদা দাগ ছাড়াও রক্ত পরীক্ষা না করে বাইরে থেকে শরীরে এমন কিছু লক্ষণ ফুটে ওঠে, যা দেখলে বোঝা যায় শরীরে এই যৌগটির ঘাটতি রয়েছে।
নখে দেখা দেওয়া এমনই একটি লক্ষণ হল সাদা গুটি। নখের ফুল হিসেবে এগুলো অনেকের কাছে পরিচিত। আবার, অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার, ‘ম্যানিকিউর’ বা শরীরের কোনো পুষ্টি উপাদানের অভাবের দিকে ইঙ্গিত দেয় এই সাদা গুটি।
নিউ ইয়র্কের চর্মরোগ-বিশেষজ্ঞ এবং ‘দ্য প্রো-এইজিং প্লেবুক’য়ের রচয়িতা পল জ্যারব ফ্র্যাঙ্ক বলেন, “নখে ‘কেরাটিন’ জমে এই সাদা গুটি সৃষ্টি হয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে একে বলা হয় ‘পাঙ্কটেইট ল্যুকোনিকিয়া’। নখে আড়াআড়িভাবে হলে ‘ট্রান্সভার্স’ বা ‘স্ট্রেইট ল্যুকোনিকিয়া’ বলা হয়। নখের ওপর থেকে নিচে হলে তাকে বলা হয় ‘লংগাচিউডিনাল ল্যুকোনিকিয়া’।
জিঙ্কের অভাবে নখে সাদা দাগ হলে আপনার কাছে আছে সমাধান।
কী দেখে বুঝবেন শরীরে জ়িঙ্কের ঘাটতি রয়েছে?
১) অনিদ্রাজনিত সমস্যা
২) অনুন্নত প্রতিরোধ ক্ষমতা
৩) ওজন বেড়ে যাওয়া
৪) মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
৫) মুখের চামড়া কুঁচকে যাওয়া
পুষ্টিবিদদের মতে, ওষুধ বা বাইরে থেকে সাপ্লিমেন্ট না খেয়েও জ়িঙ্কের ঘাটতি পূরণে পুষ্টিকর কিছু খাবার প্রতিদিন খেতেই হবে।
কোন কোন খাবার খেলে জ়িঙ্কের ঘাটতি মেটে?
১) সামুদ্রিক খাবার
২) ডিম, মাংস
৩) ব্রকোলি, মাশরুম, পালং শাক, রসুন
৪) কিনুয়া, ওটসের মতো দানাশস্য
৫) ডার্ক চকোলেট
জিঙ্কের ঘাটতি ছাড়া অন্য কোনো কারণে নখে সাদা দাগ হলে অন্যরকম ভাবে ভাবতে হবে।
অন্য কারণে নখে সাদা দাগ হলে প্রতিরোধের উপায়
ডা. ফ্যাঙ্ক পরামর্শ দেন, “নখ আর্দ্র রাখতে হবে। ‘কিউটিকল অয়েল’ এক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী। নখ কামড়ানো বা তাতে কোনো আঘাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। নখ কাটার সরঞ্জাম জীবণুমুক্ত করে তারপর ব্যবহার করুন। অ্যালার্জি মনে হলে নেইল পলিশ, আঠা ইত্যাদি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। জেল কিংবা অ্যাক্রিলিক ম্যানিকিউর কিছুদিন বন্ধ রাখুন।”
সারানোর উপায়
সাধারণত নখ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বড় হওয়ার মাধ্যমে এটি সেরে যায়। নখে দাগ দেখা দেওয়ার পাশাপাশি যদি নখ মোটা হতে শুরু করে তবে বুঝতে হবে ছত্রাক সংক্রমণ হয়েছে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ভিটামিন, খনিজ, ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যেমন- খেতে হবে মাছ, ডিম, চর্বিহীন মাংস ও সবুজ শাকসবজি।
দীর্ঘদিন নখে এরকম দাগ থাকলে আর কোনো কারণ খুঁজে বের করতে না পারলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]