শিরোনাম
সাক্ষাতকার
আন্দোলনে আমরা ব্যর্থ নই: সুলতান সালাউদ্দিন টুকু
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৪৬
আন্দোলনে আমরা ব্যর্থ নই: সুলতান সালাউদ্দিন টুকু
জাহিদ বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেছেন, আন্দোলনে আমরা ব্যর্থ নই। আমাদের প্রতিটি প্রতিবাদ সমাবেশের দিকে লক্ষ্য করুন। আগে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কেমন ছিলো, আর এখনকার উপস্থিতি কেমন। আমরা নেতাকর্মী এবং জনগণকে রাজপথমুখী করতে পেরেছি, এটা আমাদের প্রাপ্তি।


শনিবার (৮ জানুয়ারি) গুলশানের একটি অফিসে বিবার্তার সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেন বিবার্তার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহিদ বিপ্লব। পাঠকদেকদের কাছে নিম্নে সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো।


বিবার্তা: দেশের বর্তমান বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কেমন?


সুলতান সালাউদ্দিন টুকু: বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সবাই কমবেশি অবহিত। দেশের রাজনীতি আজ হ-য-ব-র-ল অবস্থায় আছে। নেই গণতান্ত্রিক শাসন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করলাম ঠিকই, স্বাধীনতার মূল যে আকাঙ্ক্ষা গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, ভোটের অধিকার, বাক-স্বাধীনতার অধিকার থেকে আজ আমরা বঞ্চিত। রাষ্ট্রের সকল কাঠামো আজ ধ্বংসের মুখে। আইনের শাসন নেই, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হুমকির মুখে। মানুষের নিরাপত্তা নেই। সত্য বলার অধিকার নেই। এভাবেই চলছে দেশ। জনগণ মনে করে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। গুম-খুন-হত্যা নির্যাতন, গায়েবি মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদদের দমন করার রাজনীতি বর্তমানে অব্যাহত আছে।



বিবার্তা: সম্প্রতি কয়েকজন আইন-শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তাসহ কিছু বিষয়ে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা দেশের রাজনীতিতে কি কোনো প্রভাব ফেলবে বলে আপনি মনে করেন?


সুলতান সালাউদ্দিন টুকু: আমেরিকার এই নিষেধাজ্ঞা রাষ্ট্রের কতিপয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, আমি মনে করি এটি দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা। যা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। ইতিপূর্বে কোন রাষ্ট্র বাংলাদেশের কোন সরকারি কর্মকর্তা বা রাজনীতিবিদদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা বা ভিসা বাতিল করে নাই। বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডই এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। দেশে যদি আজ গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত থাকতো তাহলে হয়ত এই ধরণের নিষেধাজ্ঞা নাও আসতে পারতো। আর অবশ্যই এর প্রভাব রাজনীতিতে পড়েছে। একটি দুর্নীতিবাজ এবং অবৈধ সরকার ক্ষমতা আকঁড়ে ধরে আছে, এই নিষেধাজ্ঞা তাই প্রতিফলন।


বিবার্তা: সম্প্রতি বিএনপির সমাবেশগুলোতে ব্যাপক নেতাকর্মীর উপস্থিতি লক্ষণীয়, বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?


সুলতান সালাউদ্দিন টুকু: আমি অবশ্যই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার কারণেই আজকে তার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে মানুষ উপস্থিত হয়ে প্রমাণ করছে তাদের সমর্থন দেশনেত্রী ও বিএনপির প্রতি। দেশবাসী চায় বেগম জিয়া মুক্তি পাক। জনগণের ম্যান্ডেটই বিএনপির আস্থা। জনবিস্ফোরণ শুরু হয়ে গেছে। তারুণ্যের অহংকার দেশ নায়কতারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে জনতা, জনসভার উপস্থিতি তারই প্রমাণ।



বিবার্তা: মেয়াদহীন অবস্থায় চলছে বর্তমান যুবদলের কমিটি, অথচ এখনো কমিটিই পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। কয়েক দফা জমা দেয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেনো অনুমোদিত হয়নি? সংগঠনের কেউ কেউ বলছেন-আপনার আর সভাপতির দূরত্বেও কারণেই তা সম্ভব হচ্ছে না?


সুলতান সালাউদ্দিন টুকু: দূরত্ব থাকার প্রশ্নই আসে না। নিরব (সভাপতি) ভাই আর আমি সমন্বয় করেই সংগঠন পরিচালনা করছি। ঘোষিত কমিটির ১১৪ সদস্যের (আংশিক) মধ্যে ১১টি টিম গঠন করা হয়েছে। এই সাংগঠনিক টিম সারাদেশে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এই সাংগঠনিক টিমের সমন্বয়ে দেশের ৮২টি সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশই কমিটি সম্পন্ন হয়েছে। নব্বই শতাংশ ইউনিট, বিশেষ করে উপজেলা ও পৌর কমিটিও সম্পন্ন হয়েছে। কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটির বাকি অংশের নাম আমরা কিছু দিনের মধ্যেই প্রকাশ করবো।


বিবার্তা: অভিযোগ রয়েছে বিএনপির কয়েকজন স্থায়ী কমিটির সদস্যের বলয় থেকে বের হতে পারছে না যুবদল?


সুলতান সালাউদ্দিন টুকু: প্রশ্নই আসে না। যুবদল কোন বলয়ের অধীনে নয়। যুবদল দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং আমাদের অভিভাবক তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।



বিবার্তা: অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন জেলা বা ইউনিট কমিটি গঠনে কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির নেতারা প্রভাব বিস্তার করেন, যার কারণে অনেক ত্যাগী এবং যোগ্য নেতারা মূল নেতৃত্বে আসতে পারছেন না?


লতান সালাউদ্দিন টুকু: এই অভিযোগ সত্য নয়। আমরা কর্মযোগ্যতা ও ত্যাগ বিবেচনা করি নেতৃত্ব নির্ধারণ করি। এগারটি টিমই করা হয়েছে যাতে প্রভাব ও বলয়মুক্ত হয়ে যোগ্যদের যথাস্থানে মূল্যায়ন করার জন্য। তারপরও যদি কোথাও কোন অভিযোগ আসে তা কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবে, আমরা সাবেক ছাত্রদল নেতাদের সবসময়ই প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কারণ, এই ছাত্রনেতারা যৌবনের শুরু থেকেই এই দলটি করে থাকে। তারা পরিক্ষিত।


বিবার্তা: বেগম জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে যুবদলসহ বিএনপিকে কোন কঠোর কর্মসূচি নিতে দেখা যায়নি। এটি কী আপনাদের ব্যর্থতা নয়?


সুলতান সালাউদ্দিন টুকু: প্রথম কথা হচ্ছে, এই ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ নই। আমাদের প্রতিটি প্রতিবাদ সমাবেশের দিকে লক্ষ্য করুন। আগে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কেমন ছিলো, আর এখনতার উপস্থিতি কেমন। আমরা নেতাকর্মী এবং জনগণকে রাজপথমুখী করতে পেরেছি। আন্দোলনের গতি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্দোলন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সভা-সমাবেশের মাধ্যমে মানুষকে উজ্জীবিত করতে হয়, যাতে তারা চূড়ান্ত আন্দোলনে ভূমিকা রাখে। চূড়ান্ত আন্দোলনকে সামনে রেখে আমরা তৃণমূল পর্যায়ে সমাবেশ করছি। আমি মনে করি, আন্দোলন ধীরে ধীরে সফলতার দিকেই ধাবিত হচ্ছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনই সরকার পতন আন্দোলনে পরিণত হবে।


বিবার্তা: বিবার্তাকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ


সুলতান সালাউদ্দিন টুকু: বিবার্তা পরিবারকেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।



বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। ২০০৭ সালে ক্ষমতার হারানোর পর থেকে ১/১১ এবং বর্তমান সরকারের শাসনামলে আন্দোলন করতে গিয়ে তিন শতাধিক মামলার আসামি হন তিনি। ১/১১ সরকারের সময় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দায়িত্ব পালনের সময়ই গ্রেফতার হন টুকু। এরআগে ঢাবির মহসিন হল ছাত্রদল থেকে ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হোন তিনি। দায়িত্ব পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের। বিএনপি সরকারের বিদায়ের ১৪ বছরের মধ্যে সাড়ে তিন বছরই কারাঅন্তরীণ ছিলেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। ২০১৮ সালে জেল থেকে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।


বিবার্তা/বিপ্লব/গমেজ/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com