শিরোনাম
‘আমার ছেলে ওসামা লাজুক ও ভালো ছিলো’
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০১৮, ১০:৪৬
‘আমার ছেলে ওসামা লাজুক ও ভালো ছিলো’
ওসামা বিন লাদেনের মা আলিয়া ঘানেম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার প্রয়াত নেতা ওসামা বিন লাদেনের মা আলিয়া ঘানেম বলেছেন, ওসামা লাজুক ও ভালো ছেলে ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময়ে ওসামা মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়ে উগ্রপন্থায় দীক্ষিত হয়েছিলেন।


ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাতকার আলিয়া এ কথা বলেন। কোনো সংবাদপত্রকে দেয়া এটাই তার প্রথম সাক্ষাতকার। সৌদি আরবের জেদ্দায় নিজ বাড়িতে সাক্ষাতকার দেয়ার সময় আলিয়ার সঙ্গে ছিলেন দ্বিতীয় স্বামী মোহাম্মদ আল-আতাস, ওসামার দুই ভাই আহমেদ এবং হাসান। গার্ডিয়ানের সাংবাদিক মার্টিন চুলোভ এই সাক্ষাতকার নেন।


আলিয়া বলেন, সৌদি আরবের কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতিতে পড়ার সময় কয়েকজন ওসামার মগজ ধোলাই করেন। একে ‘কাল্ট’ বলতে পারেন। এই কাল্ট বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর পাল্লায় পড়ে পুরোপুরি বদলে যা ওসামা। তখন তার বয়স ছিল ২০’এর কোটায়।


তিনি আরো বলেন, তিনি তার ছেলেকে বার বার সাবধান করেছিলেন ওই গ্রুপটি থেকে দূরে থাকার জন্য। কিন্তু সে কখনো স্বীকার করেনি সে কি করছে, কারণ আমাকে সে খুবই ভালোবাসতো।


ওসামা বিন লাদেন


মনে করা হয়, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে চারটি ছিনতাই করা বিমান দিয়ে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়, তার আদেশ ওসামা বিন লাদেনই দিয়েছিলেন। ওই হামরায় নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার এবং ওয়াশিংটনে পেন্টাগন ভবন আক্রান্ত হয় এবং দুই হাজারের বেশি লোক নিহত হয়। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর এক অভিযানে ২০১২ সালে ওসামা নিহত হয়।


১৯৮০’র দশকে ওসামা আফগানিস্তানে চলে যান রাশিয়ার দখলদারির বিরুদ্ধে লড়াই করতে।


ওসামার ভাই হাসান বলেন, প্রথম দিকে যারই তার সঙ্গে দেখা হয়েছে সে-ই তাকে সম্মান করেছে। শুরুর দিকে আমরাও তাকে নিয়ে গর্বিত ছিলাম। এমনকি সৌদি সরকারও তাকে সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখতো। তার পরই সে হয়ে উঠলো মুজাহিদ ওসামা।


তার মা আলিয়া বলেন, ওসামা স্কুলে ভালো ছাত্র ছিল, পড়াশোনা ভালোবাসতো। সে তার সব অর্থ আফগানিস্তানের পেছনে খরচ করেছে। পারিবারিক ব্যবসার ছুতো করে সে সন্তর্পণে কোথায় কোথায় চলে যেতো।


১৯৭১ সালে সুইডেনে ওসামা বিন লাদেন (ডান থেকে দ্বিতীয়)


তিনি কি কখনো সন্দেহ করেছিলেন যে তার ছেলে জিহাদি হয়ে উঠতে পারে? ‘আমার মনে কখনো এমন ভাবনা আসেনি।’ যখন জানতে পারলেন তখন কেমন লেগেছিল। ‘আমরা খুব ভেঙে পড়েছিলাম, এমনটা হোক আমি চাইনি। কেন সে এভাবে সবকিছু ত্যাগ করতে যাবে?’


ওসামার পরিবার বলছে, তারা ওসামাকে সর্বশেষ দেখেছেন ১৯৯৯ সালে, আফগানিস্তানে। কান্দাহার শহরের বাইরে তাদের ঘাঁটিতে দুইবার তারা দেখা করতে গিয়েছিলেন।


আলিয়া বলেন, জায়গাটা ছিল বিমানবন্দরের কাছে, যা তারা রুশদের হাত থেকে দখল করেছিল। আমাদের পেয়ে সে খুব খুশি হয়েছিল, আমাদের প্রতিদিন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখাতো। একটা পশু জবাই করে একটা ভোজ দেয়া হলো। তাতে সবাইকে দাওয়াত দেয়া হয়।


ওসামার বাবা ইয়েমেনি হলেও তার মা আলিয়া ঘানেমের জন্ম এক সিরীয় আলাবী শিয়া পরিবারে সিরিয়ার লাতাকিয়া শহরে। তিনি সৌদি আরবে আসেন ১৯৫০’এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে। আর ওসামার জন্ম ১৯৫৭ সালে। এর তিন বছর পর ওসামার বাবাকে তালাক দেন তিনি এবং বিয়ে করেন আল-আতাসকে, যিনি বিন-লাদেনদের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যেরই একজন প্রশাসক ছিলেন।


ওসামার আরেক ভাই আহমদ গার্ডিয়ানকে বলেন, ৯/১১’এর ১৭ বছর পরও তাদের মা ওই ঘটনার জন্য ওসামাকে দোষ দিতে চান না। তিনি দোষ দেন তার চারপাশের লোকদেরকে। তাদের মা শুধু ওসামাকে ‘ভালো ছেলে’ হিসেবেই জানেন, জিহাদি ওসামাকে তার কখনো জানা হয়নি।


আরেক ছেলে আহমদের সঙ্গে আলিয়া


ওসামার স্ত্রী-সন্তানরা এখন জেদ্দায় থাকেন। তাদের শহরের মধ্যে চলাফেরার অধিকার আছে, তবে দেশের বাইরে যাবার অনুমতি নেই।


আলিয়া বলেন, আমি ওসামার স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় সপ্তাহেই কথা বলি। তারা কাছেই থাকে।


ওসামার সর্বকনিষ্ঠ ছেলে ২৯ বছর বয়সী হামজা এখন আফগানিস্তানে আছে বলে ধারণা করা হয়। গত বছর তাকে একজন বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাকে আল কায়েদার বর্তমান নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির ছত্রছায়ায় তার পিতার ‘উত্তরসূরী’ বলে মনে করা হয়।


হামজার বিষয়ে হাসান বলেন, হামজা বলেছিল, সে তার পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেবে। আমি তার কথা আর শুনতে চাই না। তার সঙ্গে দেখা হলে আমি বলতাম, আল্লাহ যেন তোমাকে পথ দেখান। তুমি যা করছো তা নিয়ে দু’বার ভাবো, তুমি তোমার আত্মার এক ভয়ংকর অংশে পা ফেলছো, তোমার পিতার পথ নিও না। সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com