
প্রথমবারের মতো উত্তর গাজায় খাদ্য সরবরাহের জন্য একটি নতুন স্থলপথ ব্যবহার করা হয়েছে। জাতিসংঘের ত্রাণবাহী একটি দল গাজার উত্তরে পৌঁছানোর জন্য এখন গাজা সীমান্ত বরাবর একটি ইসরায়েলি সামরিক রাস্তা ব্যবহার করে এগুচ্ছে। ৩ সপ্তাহের মধ্যে এটিই গাজায় রওয়ানা হওয়া প্রথম কোন ত্রাণ বহর, যা ইসরায়েলের নতুন কোন স্থল পথ ব্যবহার করে এগুচ্ছে।
১৩ মার্চ, বুধবার এ কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ৬টি লরি গাজা সীমান্তের বেড়ার একটি গেট অতিক্রম করেছে। একই সঙ্গে একটি দাতব্য সংস্থার দেয়া ২০০ টন খাদ্য সহায়তা বহনকারী একটি নৌকাও মঙ্গলবার সাইপ্রাস থেকে যাত্রা শুরু করেছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে একটি নতুন সামুদ্রিক করিডোর উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এটি গাজার কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধের পাশাপাশি দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে থাকা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আরও ত্রাণ সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরায়েলের ওপর বৈশ্বিক চাপ বাড়ছে। এর মধ্যেই নতুন পথে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ করলো।
জাতিসংঘ বলেছে, ডব্লিউএফপি কনভয় গাজার উত্তরে পৌঁছাতে এবং গাজা সিটিতে অবস্থানকারী প্রায় ২৫ হাজার মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করতে গাজা সীমান্ত বেড়া অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে ইসরায়েলী কর্মকর্তারা দক্ষিণ গাজার সাতে কেরাম শালোম ক্রসিংয়ে ত্রাণবাহী লরিগুলোকে পরীক্ষা করেছে।
জাতিসংঘ বলছে, গাজা এই মুহূর্তে অন্তত ৫ লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্যে রয়েছে। ৩ লাখেরও বেশি মানুষ যুদ্ধের কারণে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় অন্তত ২৭ জন অনাহারে মৃত্যুবরণ করেছে, যাদের অধিকাংশই শিশু। সেখানকার হাসপাতালগুলোতে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে অনেকেই ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে।
গাজার মানবিক সংকট গভীর হওয়ার সাথে সাথে কাতার এবং মিশরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে।
জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু সংস্থাটি বলেছে, যে মাত্রায় ত্রাণ গাজাবাসীদের দরকার তা পৌঁছানোর জন্য ইসরায়েল থেকে গাজায় অনেক স্থলপথ ও প্রবেশের পয়েন্টগুলোর বিকল্প নেই।
তবে গাজায় ত্রাণ বিতরণে ব্যর্থতার জন্য জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে দোষারোপ করেছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘ বলছে গাজার অন্তত ৫ লাখ ৭৬ হাজার ফিলিস্তিনি অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ দুর্ভিক্ষ থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে রয়েছে। ভূখণ্ডের উত্তরে অল্প খাদ্য বা বিশুদ্ধ পানিসহ আনুমানিক ৩ লাখ লোকের খাবার ফুরিয়ে আসছে। তাদের কাছে সহায়তা পাঠানোর জন্য কয়েক মাস ধরে সংগ্রাম করছে সংস্থাটি।
গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সেখানকার হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে ২৩ শিশুসহ ২৭ জন মারা গেছে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) বহর উত্তরে পৌঁছাতে ইসরায়েলি সামরিক রাস্তা ব্যবহার করতে পেরেছে। এর মধ্যে ২৫ হাজার মানুষের জন্য প্রায় ৮৮ টন খাবার ছিল।
ডব্লিউএফপির মুখপাত্র শাজা মোঘরাবি বলেন, সরবরাহ পাঠানোর পর এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে ‘সড়কথে খাবার নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, আমরা সরবরাহ বাড়ানোর আশা করছি। বিশেষ করে উত্তর গাজার দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে থাকা মানুষের সঙ্গে নিয়মিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকার জন্য আমাদের আরও প্রবেশাধিকার দরকার। আমাদের সরাসরি উত্তরে প্রবেশের পয়েন্ট দরকার।
উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে গাজার হামলার পর সেখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫৩ জনকে জিম্মি করে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গাজায় প্রতিশোধ নিতে হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলায় অন্তত ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]