
কাশ্মীরে ভোট করানো নিয়ে গভীর সমস্যায় পড়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রার এই প্রভাবের মধ্যে ভোট হলে তৃণমূল স্তরে তার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, এই মুহূর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই বিষয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত খতিয়ে দেখছে।
এখনো আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা না আসলেও সরকার প্রায় ঠিক করে রেখে চলতি বছরের গ্রীষ্মে নতুন কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলে বিধানসভার ভোট করিয়ে ফেলবে। এ জন্য যত প্রস্ততি নেওয়া দরকার, তা ইতিমধ্যে প্রায় শেষ।
বিধানসভা ও লোকসভা কেন্দ্রগুলোর সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করার পর জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার আসনসংখ্যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯০ (পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের ২৪ আসন বাদ দিয়ে)। এর মধ্যে হিন্দুপ্রধান জম্মুর আসন বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৩, কাশ্মীর উপত্যকার ৪৭। সীমান্ত পুনর্নির্ধারণ এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে জম্মুতে হিন্দুপ্রধান এলাকার গুরুত্ব বাড়ে; কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিন্তা বাড়িয়েছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা, যা জম্মু ও কাশ্মীর উভয় এলাকাতেই বিপুল সাড়া ফেলেছে বলে স্থানীয় প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই চায়নি রাহুল গান্ধী অন্যান্য যাত্রীর সঙ্গে হেঁটে জম্মু থেকে শ্রীনগর যান। সে জন্য প্রথমে কোভিডের ভয়, পরে নিরাপত্তার বিষয়টি বড় করে তুলে ধরা হয়। সরকার থেকে এই পরামর্শও দেওয়া হয়, জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে হাঁটার বদলে রাহুলরা যেন বাসে চেপে যান। কিন্তু রাহুল সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন। সরকারের বিভিন্ন মহল সেই যাত্রার যেসব ছবি ও প্রতিবেদন কেন্দ্রকে জমা দিয়েছে। তাতে দেখা গেছে, জম্মুতেও বিভিন্ন এলাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। অনেকে মিছিলে হেঁটেছেন। শুধু তাই নয়, রাহুলের যাত্রাকে সমর্থন জানিয়েছেন উপত্যকা থেকে উৎখাত হয়ে জম্মুতে জড় হওয়া কাশ্মীরি পণ্ডিত (হিন্দু) সমাজও। সেখানে রাহুলের সঙ্গে পণ্ডিতদের এক প্রতিনিধিদলের বৈঠকও হয়েছে।
পুরো জম্মুতে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের আন্দোলন হিন্দুদের ওপর এতটাই প্রভাব ফেলেছে যে বিজেপির আঞ্চলিক নেতৃত্ব পর্যন্ত সরকারকে জোরজবরদস্তি কিছু না করার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং তো সরাসরিই বলেছেন, প্রয়োজনে সরকারি দফতর বন্ধ করে দিতে হবে; কিন্তু একজন পণ্ডিতকেও ইচ্ছার বিরুদ্ধে উপত্যকায় পাঠানো যাবে না। এই অসন্তোষের মধ্যে রাহুল তাঁদের সমর্থনে দাঁড়িয়ে পড়ায় কেন্দ্র সচকিত। কারণ, জম্মুতে কংগ্রেসও যথেষ্ট শক্তিশালী।
জম্মু অঞ্চলে কংগ্রেসকে শক্তিহীন করতে বিজেপি নেতৃত্ব হাতিয়ার করেছিল প্রবীণ কংগ্রেসি গুলাম নবি আজাদকে। আজাদের দলত্যাগ বিজেপিকে উৎসাহিত করেছিল। কিন্তু ভারত জোড়ো যাত্রা আজাদকে বন্ধুহীন করে দিয়েছে। তাঁর সঙ্গে দলত্যাগী অধিকাংশ কংগ্রেস নেতা শুধু ফিরেই আসেননি, আজাদও সম্মানজনকভাবে দলে ফেরার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এই বিষয়ও কেন্দ্রকে চিন্তায় রেখেছে।
বিজেপির চিন্তা, উপত্যকার এই প্রবল সমর্থনের সঙ্গে জম্মুর হিন্দু সমর্থনের একাংশ হাত মেলালে জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপি ও সহযোগীদের সরকার গড়ার সম্ভাবনা ধাক্কা খাবে। অথচ রাজ্য দ্বিখণ্ডিত ও বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাধিকবার বলেছিলেন, জম্মু-কাশ্মীরকে তিনি তিন পরিবারের (আবদুল্লাহ, সঈদ ও গান্ধী) শাসনের হাত থেকে মুক্ত করবেন। এতকিছুর পরেও পাকিস্তান ও চীন–লাগোয়া এই সাবেক রাজ্যের ভার অন্য কোনো দলের হাতে ফের চলে যাক বিজেপি তা চায় না।
জম্মু-কাশ্মীরের ভোট নিয়ে কী করবে সরকার? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুহূর্তের চিন্তা ও দ্বিধা এটাই।
বিবার্তা/এমএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]