
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশের নিচে নেমে এসেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এতে দেখা যায়, জুন মাসে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। যা মূলত উচ্চ সুদের হার ও সরকার পরিবর্তনের পর অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ঋণ বিতরণের তীব্র মন্দাকে তুলে ধরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, জুন মাসে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যায়নি।
চলতি বছর দ্বিতীয়বারের মতো ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ধারাবাহিকভাবে কোনো মাসেই এই সংখ্যা অতিক্রম করেনি, তবে এই সংখ্যার আশেপাশেই থাকত ঋণ প্রবৃদ্ধি।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইএনএম) এর নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফা কে মুজেরি এই পতনের জন্য বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ এবং আইনশৃঙ্খলার ব্যাঘাত উদ্যোক্তাদের নতুন বিনিয়োগ ঝুঁকি নিতে নিরুৎসাহিত করছে। এই মন্দার পেছনে ব্যাংকিং খাতও ভূমিকা পালন করে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের কারণে অনেক ব্যাংক তারল্য ঘাটতিতে পড়েছিল। যার ফলে তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাও কমেছে।
এছাড়াও, ক্রমবর্ধমান অনাদায়ী ঋণের (এনপিএল) কারণে ব্যাংকগুলো এখন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক, বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই প্রধান অর্থনীতিবিদ মুজেরি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক হ্রাস অর্থনীতির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য আসন্ন সংকটের ইঙ্গিত দেয়।
এই ধারাবাহিক পতন ব্যাংকিং খাত ও বৃহত্তর ব্যবসায়িক পরিবেশ উভয় ক্ষেত্রেই ক্রমবর্ধমান সংকটের দিকে ইঙ্গিত করে।
ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার ফলে সরাসরি নতুন শিল্প স্থাপনের সংখ্যা ও ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ কমে গেছে। ফলস্বরূপ কর্মসংস্থানের সুযোগও কমে গেছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতির সম্ভাবনা কম। যদি কোনো কারণে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হয়—তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
বাংলাদেশি পণ্যের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্ক আরোপের বিষয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধানের অভাব অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক তথ্যে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে-
চলতি বছরের মে মাসে ছিল ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ, এপ্রিলে সাড়ে ৭ শতাংশ, মার্চে ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ, জানুয়ারিতে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, আর গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]